সুফিয়ায়ে কেরামের প্রাথমিক যুগে বিখ্যাত সাধক সুলতানুল আরেফীন হজরত বাইজিদ বোস্তামি (রহ.)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি মারেফাত ও জিকিরকে অবিচ্ছেদ্য, একে অপরের জন্য অপরিহার্য ও পরিপূরক মনে করেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি খোদাকে জানে-চেনে, সে খোদার জিকির ব্যতীত কখনো তার জবান খোলে না।’ (তাজকেরাতুল আওলিয়া)
তিনি বলতেন, ‘ইলম বা জ্ঞানের মধ্যে জীবন, মারেফাতের মধ্যে শান্তি এবং জিকিরের মধ্যে জীবিকা নিহিত রয়েছে।’ হজরত বাইজিদ বোস্তামি (রহ.) আত্মশুদ্ধি লাভের জন্য জিকিরের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, একবার আমি আল্লাহ তাআলার দরবারে মোনাজাত করার সময় আরজ করি, ‘আপনার পর্যন্ত আমি কিভাবে পৌঁছাব?’ গায়বী আওয়াজ আসে, ‘হে বাইজিদ! প্রথমে নিজের নফসকে তিন তালাক দাও এবং ফের আমার জিকির করো।’ (তবকাতে কোবরা)
‘তাজকিয়ায়ে নফস’ অর্থাৎ আত্মশুদ্ধি লাভ করার জন্য হজরত বাইজিদ বোস্তামি (রহ.) জিকিরকে অতি উচ্চ মর্যাদায় স্থান দিয়েছেন। তিনি অভ‚ক্ত থেকে আল্লাহর জিকিরে আত্মনিয়োগ করার নীতি অবলম্বন করেছিলেন এবং অন্যদেরকেও তা অবলম্বন করার জন্য উপদেশ দিতেন। তাঁর মতে, অভুক্ত-অনাহারব্রত পালন করলে এবং আল্লাহর জিকিরে নিমগ্ন থাকলে নফসের শক্তি হ্রাস পায় এবং অন্তর পাক-পবিত্র হয়ে যায় এবং মানুষের মধ্যে উজ্জ্বলতা ও ফেরেশতার গুণাবলী প্রকাশ পায়। কেননা ফেরেশতাগণ অনাহারে থেকেই জিকির করতে থাকেন।
অভুক্ত বা উপবাস যাপনের একটি নিয়মিত ও প্রথাগত নিয়ম ইসলামে রোজা রাখার বিধান, যা দুনিয়ার সকল ‘এলহামী’ ধর্মেও সর্বদা বিভিন্ন আঙ্গিকে চালু ছিল এবং রয়েছে। জিকরুল্লাহ (আল্লাহর স্মরণ) এবং পবিত্রতা অন্তরের সম্পর্ক সুদৃঢ় করার জন্য রসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদিস রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক বস্তুকে ছাফ ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কোনো না কোনো জিনিসের প্রয়োজন হয়, অন্তরকে কালিমামুক্ত ও পাক-ছাফ করার জন্যও একটি জিনিসের প্রয়োজন, আর তা হচ্ছে জিকরে এলাহী অর্থাৎ আল্লাহর স্মরণ।
হজরত বাইজিদ বোস্তামি (রহ.) ‘আরেফ’-এর গুণাবলী প্রসঙ্গে বলেন, আরেফ বলা হয় সে ব্যক্তিকে যে আল্লাহর জিকিরে কোনো বিরতি দেয় না, তাঁর হক আদায়ে বিরক্তি বোধ করে না এবং আল্লাহ ব্যতীত কারো প্রতি ঝুঁকে পড়ে না। (তবকাতে সুফিয়া)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন