সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

যিকরে এলাহীতে সর্বদা জবানকে তরতাজা রাখা

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

সমাজে কিছু লোক আছে যাদের বলতে শোনা যায়, দোয়া-যিকির কেবল সান্ত¦নাদায়ক বস্তু, সময়ের অপচয়মাত্র। এর দ্বারা তকদীর বা অদৃশ্য কি বদলে যায়? এরূপ চিন্তাধারা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কে আসতে পারে না, মূলত এটি নাস্তিক্যবাদিতারই অংশ। এর জবাবে সংক্ষেপে এতটুকু বলে দেয়াই যথেষ্ট হবে যে, ‘তকদীর’ স্রষ্টারই নির্দেশ, যা আমাদের ওপর তিনি দোয়া আরোপ করেছেন। কোরআনে আল্লাহ নির্দেশ করেছেন: ‘ওদউনি, আস্তাজিব লাকুম।’ অর্থাৎ ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।’ এটি একটি খোদায়ী নির্দেশ। এ নির্দেশ পালন করা মানুষেরই কর্তব্য। দোয়া একটি মাধ্যম, যা কল্যাণ লাভ ও অকল্যাণ দূর করার জন্য অবলম্বনের নির্দেশ দান করা হয়েছে। তকদীরের বাস্তবায়ন এবং দোয়া কবুল হওয়া উভয়ই খোদায়ী হেকমত বা রহস্যের দু’টি রূপ।

এতে পরস্পর বিরোধ সৃষ্টি করা অনুচিত। হুজুর (সা.)-এর একটি ফরমান এ বিষয়ের উত্তম রূপে সমাধান করে দেয়। তিনি বলেন: ‘আল্লাহুম্মা লা নাসআলুকা কাযাআ ওয়া লা কিন্না নাসআলুকাল লুতফা ফিহি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট ফয়সালা রদ করার প্রশ্ন করি না, বরং ফয়সালায় শিথিল করার আবেদন জানাই।’
মুসলমানের জীবনপদ্ধতি অন্য জাতিগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রম। দুনিয়ায় তাদের বৈষয়িক জীবনে খোদাকে তারা ভুলে থাকে এবং জাহেরি জীবনে তারা সর্ব প্রকারের আরাম আয়েশ ভোগ করতে পারে, ভোগ বিলাসের চরম সীমায় উপনীত হতে পারে এবং বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বস্তির পরিবেশে বসবাস করতে পারে। এতে মুসলমানের ঈর্ষান্বিত হওয়ার কিছু নেই। মুসলমান আল্লাহ প্রদত্ত এমন এক অপূর্ব সম্পদে ধন্য, যা অন্য কারো ভাগ্যে জুটেনি। তা হলো, আল্লাহর যিকির বা স্মরণ। খোদ আল্লাহ ঘোষণা করেন: ‘আলা বি যিকরিল্লাহি তাতমায়িন্নুল কুলুব।’ অর্থাৎ ‘শুনে রেখো যে, আল্লাহর স্মরণ তোমাদেরকে মনের সান্তনা প্রদান কারক।’

যিকরুল্লাহ, আল্লাহর স্মরণ, আল্লাহকে স্মরণ করা। মানুষের অন্তর ও জবান-মুখ দ্বারা স্মরণ করাই হচ্ছে আসল। এ দুটি কাজই উত্তম। এ দুটি কাজের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করার ওপর রাসূলুল্লাহ (সা.) অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং বলেছেন, এ স্মরণে অন্তরের সাথে জবানেরও অংশ থাকবে। অর্থাৎ মনে মনে আল্লাহর স্মরণ করা যথেষ্ট নয়, মুখেও স্মরণ করতে হবে। এ সম্পর্কে হজরত মোআজ ইবনে জাবাল (রা.)-এর বর্ণনাটি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট হতে বিদায় নেয়ার কালে তাঁর যে সর্ব শেষ কালামটি আমি শুনেছিলাম তা এই, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহতাআলার নিকট সর্বোত্তম প্রিয় আমল কি? তিনি বললেন: ‘আন তামুতা ওয়া লিসানুকা রাত্বুন মিন জিকরিল্লাহ।’ অর্থাৎ তুমি এই ভাবে মৃত্যুবরণ করো যে তোমার জবান যিকরে এলাহী দ্বারা তরতাজা হবে।’ (হিছনে হাছীন)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে এক ব্যক্তি উপস্থিত হয় এবং আবেদন করে, দ্বীনের (নফল) কাজ তো অনেক, সবই করাটা কঠিন। আপনি আমাকে এমন একটি জিনিস বলে দিন যা আমি নিয়মিত অবলম্বন করব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: ‘তুমি এই কাজটি করো যে, তোমার জবান সর্বদা এবং সব সময় আল্লাহর জিকিরে তরতাজা থাকবে।’ (মেশকাত, তিরমিজি)। এ দুটি বর্ণনায় অন্তরের সাথে জবানের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অসংখ্য হাদিস রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী সাহেব আপনার মহামুল‍্যবান পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মহান আল্লাহ্ বাণী। প্রীয় নবী(সাঃ) অনুসৃত সুন্নত হাদীস শরিফ পড়ে আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আপনাকে সালাম দোয়া জানাচ্ছি। ইসলামের আলোকিত ইনকিলাব সমাজে রাষ্ট্রে নৈতিকতার আলো বিকশীত করে সুন্দর সমাজ প্রতিষ্টীত হউক। আমিন।
Total Reply(0)
Monjur Rashed ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
Very relevant & much anticipated publication. Please keep on continuing
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
জনাব লেখক সাহেবকে এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ্‌ নিশ্চই আপনাদেরকে এর উত্তম প্রতিদান দেবেন। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে এর থেকে উপকৃত হওয়ার তৌফিক দান করুণ এবং আমাদেরকে আর রহমত দিয়ে পূর্ন করুণ। আমাদের দেশকে রক্ষা করুণ সকল প্রকার শত্রু থেকে।
Total Reply(0)
জাবের পিনটু ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
Thanks for special publication
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা: বর্ণিত হাদিসে রাসূলে পাক সা: ইরশাদ করেনÑ ‘প্রত্যেক জিনিসের একটি মাজন রয়েছে, আর অন্তরের মাজন হলো আল্লাহর জিকির’ (বায়হাকি, দাওয়াতুল কবির)।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
সদাসর্বদা আল্লাহর জিকির করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনÑ ‘তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না’ (সূরা আরাফ : ২০৫)।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে আল্লাহর জিকির। বেশি বেশি করে মহান আল্লাহর জিকির করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনÑ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে’ (সূরা আহজাব : ৪১-৪২)।
Total Reply(0)
সাইফ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৫৭ এএম says : 0
জনাব লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ্‌ এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুণ এবং আমাদেরকে এর থেকে উপকৃত হওয়ার তৌফিক প্রধান করুণ।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৯ পিএম says : 0
স্রস্টা না বলে আল্লাহ তা'আলা বলিবেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন