বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বোখারার কসরে আরেফানে আমি মুসাফির

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

এক সন্ধ্যায় কনকনে শীতের মাঝে গিয়ে পৌঁছলাম বোখারার কসরে আরেফান নামক মহল্লায়। অনেক বড় এলাকা। অনেক বড় দেশ। মানুষ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের চেয়ে ছয় গুণেরও বেশি বড় দেশ। মানুষের সংখ্যা তিন কোটির মতো।

রাতের অন্ধকারে কিছু দর্শনার্থী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে নানা দেশের বেশ কিছু মানুষ তখন সেখানে উপস্থিত। গাড়ি থেকে নেমে ওয়াশ রুমে গেলাম। এমন বিশাল ও সুন্দর ওযুখানা সচরাচর দেখা যায় না। বাংলাদেশের কথা না হয় বাদই দিলাম, দুনিয়ার বড় বড় মুসলিম দেশেও এমন পাওয়া মুশকিল। সারি সারি ইস্তেঞ্জাখানা। অনেক জায়গাজুড়ে ওযুর ব্যবস্থা। কোট, চাদর, জ্যাকেট ইত্যাদি রাখার হুক। অনেকগুলো বেসিন। পর্যাপ্ত টিস্যু পেপার, তোয়ালে। ওযু সেরে দরজা ঠেলে বাইরে বেরুবার সাথে সাথে মনে হলো শৈত্য ঝড়ের ঝাপটা খেলাম। শীতের হিমেল হাওয়া চেহারা, হাত, পা কামড়ে ধরেছে। এত ঠান্ডার মধ্যে নিজেকে সামলে নিতে কিছুটা সময় লাগল। একজন উজবেক গার্ডকে বললাম, কোন দিকে যাব। তিনি বিদেশি কোনো ভাষা বোঝেন না। হাত ইশারায় শুধু রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। আমিও বিসমিল্লাহ বলে চলতে শুরু করলাম। পায়ে চলার সুন্দর পথ, কংক্রিটের ঢালাই, মাঝে সবুজ আইল্যান্ড।

একদিকে যাওয়ার রাস্তা অপরদিকে আসার। গেইট থেকে চলতে শুরু করেছি পথ আর ফুরায় না। রাস্তার সড়ক বাতি কুয়াশায় মলিন আলো ছড়াচ্ছে। কিছু দূরে দূরে রাস্তার পাশে ইস্পাতের স্ট্যান্ডের উপর স্থাপিত গ্রন্থাকারের ফলক লাগানো। যাতে আলাদা লাইট দেয়া। পড়ে দেখলাম, ইমাম মুহাম্মদ বাহাউদ্দীন নকশবন্দের বাণী লেখা। প্রথমেই চোখে পড়ল, তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে আমাদের তরিকা পবিত্র কোরআন ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মোবারক সুন্নত ছাড়া আর কিছুই নয়। আরেকটি ফলকে দেখলাম, একখানা হাদিস শরিফ। যেখানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আমার রবের নিকট আমার মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলাম, আল্লাহ আমাকে অনুমতি দিলেন। অতএব তোমরাও কবর যিয়ারত করো, কেননা, কবর যিয়ারত মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

একটি খোলা কিতাবের মতো সাদা ফলকে কালো হরফে এ সব বাণী লেখা। চার পাশে কিতাবের মতো রেখা ও কারুকার্য। এক দিকে আরবি। অপর দিকে ইংরেজি ও উজবেক তরজমা। আমি চলছি তো চলছিই। ওযুর ঠান্ডা কমে গেলেও বাইরের ঠান্ডায় সারা শরীর কাবু হয়ে যাচ্ছে। কিছু দূর গিয়ে দেখতে পেলাম, হাতের বায়ে একটি বড় গেইট। কুয়াশার জন্য স্পষ্ট দেখি না। রাস্তার পাশে বেঞ্চিতে বসা দু’জন লোক পেলাম।

তারা একটু বিশ্রামের জন্য বসেছেন। জানতে চাইলাম, এই গেইট পার হলে কোথায় যাওয়া যাবে? তারা বললেন, এটিই খাজা বাহাউদ্দীন নকশেবন্দের ঠিকানা। বললেন, সোজা অনেক দূর গেলে হযরতের মায়ের কবর। অনেক মেহমান সেদিকে গেছেন। আমি বললাম, আপনারা কি যাবেন? বললেন, আমরা আগে খাজা সাহেবের জিয়ারত করব। দিনের বেলা ওদিকে যাব। আমার মন চাইল, সোজা এগিয়ে যাই। ইমাম মুহাম্মদ বাহাউদ্দীন নকশবন্দের মা আরিফা বিবি বেগমের কবর আগে যিয়ারত করতে মন টানলো। ঢাকা থেকে রওয়ানা হওয়ার সময় আমার আম্মা বিশেষভাবে এই আরিফা বিবি বেগমের কবর যিয়ারতের কথা আমাকে বলে দিয়েছিলেন। আমি সোজা সেদিকেই চলতে লাগলাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
ইলিয়াস ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০০ এএম says : 0
লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো
Total Reply(0)
টুটুল ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০২ এএম says : 0
আল্লাহ হুজুরকে এরকম আলো ভালো ভালো জায়গায় যাওয়া এবং সেখান থেকে এসে এমন সুন্দরভাবে বর্ণনা দেওয়ার তৌফিক দান করুক
Total Reply(0)
নাদিয়া আক্তার ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
লেখাগুলো বই আকারে পাওয়ার প্রত্যাশায় রইলাম
Total Reply(0)
রফিকুল ইসলাম ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৪ এএম says : 0
উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
খাইরুল ইসলাম ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
এই ভ্রমন কাহিনীটা নিয়মিত চাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন