কুড়িগ্রামে সাবেক ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় একই ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় দেখা দিয়েছে দ্বদ্ব সরকার নতুন করে সদ্য জাতীয়করণ ঘোষণা করায় দ্বদ্ব চরম আকার ধারণ করায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দেবার নাম করে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে ২০১৫সালের ৩১জুলাই মধ্যরাতে। ছিটমহল বিনিময়ের পর কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলা সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় গড়ে ওঠে বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ২০১৬সালে শেখ ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদ্রাসা গড়ে তোলেন ছিটবাসীরা। দাশিয়ারছড়ার কালিরহাট এলাকায় স্থাপিত শেখ ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদ্রাসায় সুপার হিসেবে যোগদান করেন আমিনুল ইসলাম। অথচ সে ২০০০ সালে একই উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের মধ্যকাশিপুর দ্বি-মুখি দাখিল মাদ্রাসায় সহকারি মৌলভী হিসেবে যোগদান করেছেন। তার ২০০৪ সালে এমপিও ভুক্তি হবার পর মধ্যকাশিপুর দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা নামে বিল-ভাতাসহ সুযোগ সুবিধা পেয়ে অদ্যবধি পেয়ে আসছেন। চাকুরি থেকে অব্যাহতি না দিয়ে একই ব্যক্তি দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করার বিষয়ে ২০১৮সালে প্রশাসনের নিকট স্থানীয়দের একটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সেই তদন্ত কমিটির কাছে আমিনুল ইসলামের দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, আমিনুল ইসলাম দুটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন,চাকুরি দেবার নামে অর্থ আতœসাৎ,বিদ্যালয়ের জমি নিজনামে দলিল করাসহ নিজের পিতাকে বিদ্যালয়ের সভাপতি বানিয়ে মাদ্রাসা বোর্ড হতে গোপনে পাস করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৮সালের ৩০জুন আমিনুল ইসলাম তার স্বাক্ষরিত বিদ্যালয়ের প্যাডে লিখিতভাবে ইস্তফা দেন। এছাড়াও আমিনুল ইসলাম একটি ১৫০টাকা ষ্ট্যাম্পে লিখিতভাবে ১২জন শিক্ষকের নিকট চাকুরি দেয়া এবং প্রতিষ্ঠান করার লক্ষ্যে ১২জনের নিকট হতে ৩২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বুঝে নেয়ার লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়।
সারাদেশ চলতি বছরের ১৪জানুয়ারী সরকার ৩টি মাদ্রাসাকে জাতীয়করণের নতুন ঘোষণা দেয়। এরমধ্যে কুড়িগ্রামে সাবেক ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার শেখ ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদ্রাসাটি অন্তর্ভূক্ত হয়। জাতীয়করণের ঘোষণার পরপরই আমিনুল ইসলাম তার পূর্বে কর্মরত মাদ্রাসা হতে অব্যাহতি না দিয়েই কিছু প্রভাবশালী আর শিক্ষা বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ১৭ জানুয়ারীতে পুনরায় সুপারের দায়িত্বে যোগ দেন। এতে করে একই ব্যক্তি দুটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পাওয়ায় অন্যান্য শিক্ষকসহ ছিটবাসীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এই বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক আমজাদ হোসেন, এরশাদুল হক,আবু বকর সিদ্দিক, আঞ্জুয়ারা বেগমসহ অনেকেই জানান,আমিনুল ইসলামকে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর চাকুরির জন্য বিভিন্ন অংকের টাকা দেয়া হয়েছে। এরপর তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠলে সে মাদ্রাসা হতে অব্যাহতি দিয়ে পূর্বের মাদ্রাসায় চলে যান। এখন পর্যন্ত সে টাকা ফেরত দেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক শিক্ষক বলেন,আমিনুল ইসলামকে পুনরায় সুপারের পদে বসানোর পিছনে স্থানীয় রাজনৈতিক একটি দলের মদদ এবং শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন। এই বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিতে গেলে শিক্ষা অফিসার অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানান।
শেখ ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো: শাহনুর আলম বলেন,আমিনুল ইসলামের অব্যাহতির পর আমাকে সুপারের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু মাদ্রাসাটি জাতীয়করণ ঘোষণার পর জানুয়ারী মাসে জোরপূর্বক সে সুপারের চেয়ারে বসে এবং মাদ্রাসা কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছেন।
এই বিষয়ে মধ্যকাশিপুর দ্বি-মুখি দাখিল মাদ্রাসায় তথ্য সংগ্রহের সময় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও আমিনুল ইসলামের আত্নীয় কাশিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান
মানিকসহ কয়েকজন শিক্ষক সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হন। এসময় তারা আমিনুল ইসলাম সম্পর্কে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে জানাযায়, আমিনুল ইসলাম এখনো অত্র মাদ্রাসা হতে অব্যাহতি দেননি। তিনি নিয়মতিভাবেই তার নামে বিল উত্তোলন করে আসছেন।
চাকুরিরত অবস্থায় আরেকটি মাদ্রাসার সুপারের দায়িত্ব কিভাবে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত একটি নিষেজ্ঞা চিঠি পেয়েছি। তাই এই বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারবো না।
এই বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম জানান, আমার কাছে লিখিত কোন অভিযোগ আসেনি। আসলে বিধি মোতবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, এমন একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক এবং ন্যায় বিষয়টি তুলে ধরতে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন