কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন অন্ধ এবং অন্ধের কাছে রাত-দিন সবই সমান। এখানে কে ধনী, কে গরিব, আইন তা দেখে না। যারা আইন প্রণেতা এবং যাদের উপর আইন প্রয়োগের দায়িত্ব অর্পিত, তারাও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যে-ই অপরাধ করুক না কেন আইনের আওতায় তাকে আসতে হবে। তা নাহলে, মানুষের পক্ষে সভ্য ও সুশৃঙ্খল হয়ে থাকা সম্ভব নয়। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রও টিকে থাকতে পারে না। তবে যাদের ওপর আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করার দায়িত্ব অর্পিত হয়, তাদেরকে সবচেয়ে বেশি সচেতন, সতর্ক, সৎ এবং মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হতে হয়। এর ব্যতিক্রম হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে আইনের শাসনের ঘাটতির বিষয়টি বহু বছর ধরেই আলোচিত হয়ে আসছে। একজন সাধারণ মানুষও এই ঘাটতির বিষয়টি টের পায়। এটা তারা বুঝতে পারে যখন আইনের লোকজন দ্বারা তারা হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হয়। অভিযোগ রয়েছে এবং তা বাস্তবেও দেখা যায় যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কেউ নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে ভাবে। এ বাহিনীর কতিপয় সদস্যর এ ধরনের প্রবণতা নতুন কিছু নয়। তবে এ প্রবণতা যদি, এমন হয়, আমিই রাজা এবং আমি যা খুশি তা করতে পারি, তখন দেশে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু থাকে না। সম্প্রতি এমন কিছু নজির সৃষ্টি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সদস্য। গত সপ্তাহে রমনা জোনের ডিসির বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ী পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন এবং মুক্তিপণ হিসেবে সোয়া কোটি টাকার চেক স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এ কাজ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে বায়েজিদ বোস্তামি থানার বর্তমান ও সাবেক দুই ওসি এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য এক ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে দুই দফায় ২৩ লাখ টাকা আদায় করে নিয়েছে। সম্প্রতি এমন আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তবে আইনের রক্ষক পুলিশের কিছু সদস্যর এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর অসংখ্য নজির অতীতে রয়েছে। এসব ঘটনার দুয়েকটি প্রকাশ হলেই কেবল দেশের মানুষ জানতে পারে। জানা ঘটনার বাইরেও যে আরও অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে তা ভুক্তভোগীমাত্রই জানে। পুলিশের ভয়ে তারা এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আনে না। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি কথা সবসময়ই বলা হয়, একশ্রেণীর সদস্যের দোষের কারণে পুরো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দোয় দেয়া উচিত নয়। তাদের এ যুক্তি তখনই মানা যেত, যদি তা সহনীয় মাত্রায় থাকত এবং কালেভদ্রে এমন ঘটনা ঘটত। তখন একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে মানা যেত। সাধারণ মানুষ তো দেখছে, পুলিশের এই শ্রেণীটি কর্তৃক তাদের প্রতিনিয়ত আতঙ্ক ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। তাদের এমন বেপরোয়া আচরণের কারণ কি? বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের এই শ্রেণীটির মনে এ ধারণা বদ্ধমূল যে, তারা সরকার টিকিয়ে রাখছে এবং এর বিনিময়ে তারা যা খুশি তা করতে পারে। অন্যদিকে সরকারও পুলিশ যা চেয়েছে, তাই দিয়েছে এবং দিচ্ছে। সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে কোনো অংশে কমতি রাখছে না। এটা কাউকে কাউকে প্রচন্ড ‘লোভী’ করে তুলেছে। তাদের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে এবং পুলিশের মধ্যে যাতে অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি না পায়, এ লক্ষ্যেই সরকার তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। সরকারের এই সদিচ্ছাকে কোনো কোনো পুলিশ সদস্য আমলেই নিচ্ছে না। তারা নানাভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি, নির্যাতন, ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর জনসাধারণের আস্থা রাখার বিষয়টি এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। বিশেষ করে যখন দেখা যায়, আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কিছু সদস্য সাধারণ মানুষকে হয়রানি, বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করছে, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করছে, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করছে, নির্দোষ ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে, তখন তাদের প্রতি মানুষের আস্থা রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
দুই.
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্য কর্তৃক বা তাদের হেফাজতে বিচারহীন অবস্থায় মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নতুন কিছু নয়। অতীতেও ঘটেছে, বর্তমানেও ঘটছে। এসব ঘটনায় জনসাধারণের মাঝে যখন তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ক্লোজ বা অন্যত্র বদলি করা হয়। এভাবে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের দূরে সরিয়ে রাখা বা আইনের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার তারা যে শাস্তি পাচ্ছে না, তাও নয়। বছরে প্রায় কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হচ্ছে! তার অর্থ হচ্ছে, যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত, তাদেরই অনেক সদস্য মানুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এখন এমন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে ফিরতে পারবে কিনা, এ সংশয় তাদের মধ্যে কাজ করছে। সাধারণ থেকে অসাধারণ কোন মানুষই নিরাপদ নয়। প্রতিদিন অফিসমুখী হওয়ার সময় হয়তো অনেক মা-ই বলেন, সাবধানে থাকিস বাবা! কখন যে কি হয়! মায়ের এমন অশঙ্কায় সন্তান ভীত ও সন্ত্রস্ত হলেও বলতে হয়, মা, আমি অতি সাধারণ একজন। কিছু হবে না। জবাবে মা বলেন, সাধারণ মানুষেরই তো বিপদ বেশি। তাদের কিছু হলে তা মামুলি ঘটনা। পুলিশও খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না। দেখিস না, বড় বড় রাজনৈতিক নেতারাই বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাদের মা, স্ত্রী-সন্তানদের কী দুঃসহ সময় পার করতে হচ্ছে। এই দৃশ্য তো সহ্য হয় না। মায়ের কথা ভাবতে গিয়ে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, আসলে তো তাই। প্রতিদিনই খবরের কাগজে দেশের কোন না কোন এলাকা থেকে মানুষ গুম, অপহরণ, নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। অপহরণকারী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো সদস্য তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করছে। কেউ দিয়ে মুক্তি পাচ্ছে, কেউ দিতে না পেরে খুন বা হয়রানির শিকার হচ্ছে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, চেনা-জানার প্রয়োজন নেই, কার অর্থ-বিত্ত আছে তাও জানার প্রয়োজন নেই, যে কাউকে রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করলেই হলো। যেখানে বিরোধী দলের বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে তুচ্ছ ঘটনায় একের পর এক মামলা, চার্জ গঠন এবং গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়, সেখানে সাধারণ মানুষ তো তুচ্ছ। সমস্যা হচ্ছে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বারবারই বলছেন, পুলিশকে জনবান্ধব হতে হবে। সামনে মুজিববর্ষ, এ বর্ষ হবে পুলিশের জনবান্ধব হওয়ার বর্ষ। তারপরও একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যর মধ্যে এ নিয়ে কোনো সচেতনতা আছে বলে মনে হয় না। তারা তাদের অপকর্ম চালিয়েই যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আহবান এবং মুজিববর্ষের চেতনাকে উপেক্ষা করেই তাদের অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমর্যাদা এখন কোন স্তরে, তা সাধারণ মানুষের চেয়ে ভাল আর কেউ জানে না। পুলিশ ও র্যাবের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগের অন্ত নেই। নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের সাথে র্যাবের তিন কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগে রাজনৈতিক দল, সচেতন নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল থেকে তখন র্যাব নিষিদ্ধের দাবি পর্যন্ত করা হয়েছিল। অর্থাৎ যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ফোর্স মানুষের কল্যাণে গঠিত হয়েছিল, তাই মানুষের কাছে চরম ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে সময় বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেছিলেন, র্যাবের যে পোশাক এবং গেটআপ, তা সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ ধরনের গেটআপ থাকবে কেন, যা মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে? তারা পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, র্যাবের দায়িত্ব সীমিত ও সুনির্দিষ্ট করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দৈনন্দিন কাজে অর্ন্তভূক্ত না করা উচিত। বিশেষ বাহিনীকে বিশেষ কাজে ব্যবহার করার মধ্যেই সীমিত রাখা উচিৎ।
তিন.
নিরঙ্কুশ ক্ষমতা মানুষকে কখনো কখনো হিপনোটাইজড করে ফেলে। সে চিন্তাও করতে পারে না, কেউ তার ক্ষতি বা কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারে। তবে অন্য কেউ ক্ষতি করতে না পারলেও নিজের স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ড যে এক সময় কাল হয়ে দাঁড়ায়, তার নজির ইতিহাসে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যর ক্ষমতার অপব্যবহার, আইনের ঊর্ধ্বে ভাবার প্রবণতা, এখতিয়ার বর্হিভূত কর্মকান্ড বা বিতর্কিত ক্রসফায়ারে মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা তাদের ভাবমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করছে। নিবন্ধের শুরুতেই বলা হয়েছে, যারা আইন প্রণয়ন করে এবং যাদের দ্বারা আইন প্রয়োগ করা হয়, তারা যদি নিজেদের সর্বেসর্বা মনে করে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে, তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বিষয়টি এরকম, ক্ষমতাবান ব্যক্তি যদি তার বাড়ির কাজের লোককে নির্ধারিত কাজের পরিবর্তে অন্যদের দাবড়ানোর নির্দেশ দেয়, তবে সেই কাজের লোক তার মালিকের জোরে কঞ্চি থেকে বাঁশে পরিণত হয়ে উঠতে বাধ্য। তখন কাউকে ডেকে আনতে বললে সে বেঁধে নিয়ে আসবে। আইনশঙ্খলা বাহিনীর অবস্থাও অনেকটা তাই হয়েছে। এজন্য তারা যতটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী পালাক্রমে যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসেছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্ধারিত কাজ করতে না দিয়ে তারা প্রতিপক্ষকে দমনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। এ ধারা এখন সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এমনভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে যে, তাদের কর্মকান্ড আইনের পরিবর্তে দলের প্রতি বেশি আনুগত্য প্রকাশিত হচ্ছে। তারা যেন দলের ঊর্ধ্বে উঠতে পারছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশ, র্যাব ও ডিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা নাগরিকের মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে পেশাদারিত্বের অবনতি হয়েছে। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ ও পোস্টিংপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। তারা ক্যাডারের মতো আচরণ করছে। পুলিশে যোগদান করে পুলিশি দায়িত্বের চেয়ে দলীয় পরিচয়কে তারা বড় বলে মনে করছে। পেশাদারিত্ব বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। নানা অজুহাতে নিরীহ, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের আটকে অত্যাচার চালিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বহুভাবে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা পেশাদার এবং জনসেবার মানসিকতা ধারণ করে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা দরকার। অনেকে বলছেন, যারা অপকর্ম করে তারা জবাবদিহিতার বিষয়টি আমলে নেয় না বলেই যা খুশি তা করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘নিকৃষ্ট লোক যখন সব জায়গায় বসে যায়, তখন অরাজকতা দেখা দেয়। সেটা হোক রাজনীতি কিংবা সরকারি কর্মক্ষেত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও এ ধরনের কিছু লোক ঢুকে পড়েছে। এটা হয়েছে অপশাসনের কারণে। এজন্য রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন দায়ী। রাজনীতিতে অনেক অন্যায়, দুর্নীতি হয়। এই অন্যায় কাজ করে টিকে থাকার জন্য বিশেষ পেটোয়া বাহিনীর দরকার হয়। দীর্ঘদিন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও রাজনৈতিক কারণে ব্যবহৃত হয়েছে, এখনও হচ্ছে। ফলে এ বাহিনীর যে দায়িত্ব, তা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে পারেছে না। তাদের অন্যায় কাজে ব্যবহার করা হয়। কেউ কেউ চাচা-মামার জোরে চেইন অব কমান্ড মানছে না।
চার.
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তা বিধান এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। তাদের কর্মকান্ডের সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় যখন যারা থাকেন, এ বাহিনীকে তারা দলীয় ক্যাডার বাহিনীর মতো ব্যবহার করেন। তাদের দিয়ে যখন অপকর্ম করানো হয়, তখন তাদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের সুযোগ নেয়। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে তার স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করতে না দিলে এ ধরনের অপর্কম বন্ধ করা সম্ভব নয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সবার আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন-এ ধারায় চলতে দিতে হবে। এর বাইরে যেসব সদস্য অপকর্ম জড়াবে তাদের কোনোভাবেই রেহাই দেয়া যাবে না। আইনের লোক হয়ে অপরাধ করলে তাকে রেহাই দেয়া বা তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে এর বিকল্প নেই। অপরাধী সে যেই হোক, তাকে অপরাধী হিসেবেই দেখতে হবে। যারাই গুম-খুন, অপহরণের শিকার হয়, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের দিকে না তাকিয়ে মানবিক দৃষ্টিকোণ ও দেশের নাগরিক হিসেবে দেখতে হবে। কারণ দলমত নির্বিশেষে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের বিধি-বিধানের মধ্যে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে। রাজনীতিকরণের বাইরে রেখে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। গুম-খুন, অপহরণ ও সামাজিক অন্যায় প্রতিরোধে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব রয়েছে। তারা যেহেতু দাবি করেন, তাদের রাজনীতি জনকল্যাণমুখী, তাই জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের পাশে নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়াতে হবে। বলাবাহুল্য, রাজনীতির বাইরে কিছু নেই। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। দেশের ভাল হলেও রাজনীতির জন্য হয়, মন্দ হলেও রাজনীতির জন্যই হয়। এর ফলাফল রাজনীতিকসহ সকলেই ভোগ করেন। কাজেই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনীতিকদের মাইন্ডসেটের পরিবর্তন জরুরী।
darpan.journalist@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন