সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দেশে প্রায় ৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৬০ লাখ টন আমন চাল উৎপাদনের পরে ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে ২ কোটি ৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষে মাঠে ব্যস্ত কৃষকরা। এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার সোয়া ৩ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
গত রবি মৌসুমে দেশে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৪৯ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের মাধ্যেমে প্রায় ২ কোটি ৩ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়। উৎপাদন লক্ষ্য ছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টনের মত। যদিও গতবছর একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নয়তো উৎপাদন আরো অন্তত ১ লাখ টন বৃদ্ধি পেতে পারতো।
চলতি বছর দেশের কয়েকটি জেলায় লাগাতর শৈত্য প্রবাহে বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরির কবলে পড়েছে। এরপরেও কৃষকরা দ্রæত বীজতলা তৈরি বা অন্য এলাকা থেকে ভাল বীজ সংগ্রহ করে রোপন শেষ করছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭০ ভাগ জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে ধানের দর নিয়ে কৃষকদের হতাশাও চরমে। বোরো ধান ইতোমধ্যে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের স্থান দখল করেছে। কিন্তু গত বছরও ধানের দর পতনে কৃষকের মুখে হাসি ফোটেনি। যদিও সরকার নানা শর্তে এবার ধান কিনবে। কিন্তু তাতে কৃষক কতটুকু লাভবান হবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আমাদের দেশেই সেচ ব্যয় বিশ্বে সর্বাধিক। উৎপাদন ব্যয় মণ প্রতি ৬শ’ টাকার কাছে। কিন্তু ধানের দরে কৃষক উৎপাদন ব্যয়ও তুলতে পারছে না।
সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি সব ধরনের সার বিপণনের বিষয়টিও নিবিড় পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। বোরোর জমিতে সেচ নির্বিঘ্ন রাখতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ইতোপূর্বেই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকেও বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
আমাদের দেশে ধানের গড় ফলন ৪.০১ টন। যা চীন, জাপান ও কোরিয়াতে ৫-৬ টনের মত। তবে গত কয়েক দশকে দেশে ধানের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি’র মতে, দেশে ১৯৭০-৭১ সালে ধানের উৎপাদন ছিল ১ কোটি টন। যা ২০০৮-০৯ সালে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টনে উন্নীত হয়। সরকারি মতে বর্তমানে তা ৪ কোটি টনেরও বেশি। ইতোমধ্যে ব্রি ৯২টি উন্নতজাত ও উচ্চ ফলনশীল ধানবীজ উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ৬টি হাইব্রিড ও অন্যগুলো ইনব্রিড। এমনকি ব্রি লবন ও বন্যা সহনীয় জাতের ধানও উদ্ভাবন করেছে। দেশের ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতের ধান আবাদ হচ্ছে। ফলে গত ৪ দশকে দেশে ধান উৎপাদনে নিরব বিপ্লব ঘটেছে। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে এখন ব্রি উদ্ভাবিত ধানের আবাদ হচ্ছে।
কিন্তু একদিকে ধানের দাম কম, অপরদিকে সেচ ব্যয় বেশি হওয়ায় কৃষকদের জীবনমানের কোন উন্নতি হচ্ছে না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে সেচ ব্যয় এখনো ধান উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ২৮-৩০%। অথচ ভারতের মরুময় এলাকা পাঞ্জাবে সেচ ব্যয় মোট উৎপাদন ব্যয়ের মাত্র ১৩%। যা থাইল্যান্ডে ৮% ও ভিয়েতনামে মাত্র ৬%। আমাদের দেশে যে সিংহভাগ এলাকায় ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার হয়, সেখানে কোন ভতর্‚কি নেই। অথচ সেচে বিদ্যুৎ বিলের ওপর ২৫% ভতর্‚কি দেয়া হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন