সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

খতমে নবুওয়াত অস্বীকারকারী কাফির

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম। এই ধর্মীয় জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণতা প্রদান করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত। সৃষ্টজগতের সকল অঙ্গনে শান্তি ও স্বস্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের কাজ। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, সংঘাত, বিশৃঙ্খলা ইসলাম পছন্দ করে না। এই নীতি ও আদর্শই প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.। তার পরে কোনো ব্যক্তি নবুওয়াতের সম্মানিত পদ মর্যাদায় ভূষিত হতে পারবে না। তার পর যে ব্যক্তি, দল-সম্প্রদায় নবী হওয়ার দাবি উত্থাপন করবে বা মেনে চলবে, সে সরাসরি কাফির ও জিন্দিক বলে পরিগণিত হবে।
মহান রাব্বুল আলামীন আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী; আল্লাহপাক সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৪০)। এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, রিসালাত ও নবুওতের সিলসিলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে পরিসমাপ্ত হয়েছে। তার পরে সৃষ্টজগতের আর কোনো নবী ও রাসূলের আগমন ঘটবে না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর : খন্ড ৩, পৃ. ৩৯৪)।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী উনবিংশ শতকের শেষ দশকে অর্থাৎ ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দে দাবি করে যে, সে প্রতিশ্রুত মাসীহ (ঈসা আ.)। এর আট বছর পর ১৮৯৯ খ্রীষ্টাব্দে সে দাবি করে যে, সে জিল্লী নবী, বরুজী নবী। এর এক বছর ১৯০১ খ্রীষ্টাব্দে স্বয়ং সম্পূর্ণ শরীয়াতী নবী হওয়ার দাবি উত্থাপন করে। (আয়নায়ে কায়িনাত : পৃ. ২১২)।

উল্লিখিত মিথ্যা, ভিত্তিহীন দাবির প্রেক্ষিতে মির্জা গোলাম আহমদ একজন কাফির, মুরতাদ ও জিন্দিক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাকে নবী বলে স্বীকারকারী এবং তার অনুসারীগণও কাফির, মুরতাদ ও জিন্দিক হিসেবে পরিচিত ও চিহ্নিত হয়েছে। (আল শিফা লিল কাজী আয়াজ : খন্ড ২, পৃ. ২৪৬-২৪৭; আল মাজমু শারহুল মুহাযযাব : খন্ড ১৯, পৃ. ২৩৩)।

লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, মির্জার অনুসারীগণ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যথা: ক. কাদিয়ানী গ্রুপ। খ. লাহোরী গ্রুপ।
কাদিয়ানী গ্রুপ মির্জাকে তার সকল দাবিতে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করে। তবে লাহোরী গ্রুপের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। মোট কথা, যে সকল লোক ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে কাদিয়ানী হয়েছে, তাদেরকে মুরতাদ, ধর্মচ্যুত, ধর্মত্যাগী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। আর যারা জন্মগত ভাবেই কাদিয়ানী তাদেরকে জিন্দিক বলে আখ্যায়িত করতে হবে। (মিনহাজুস সুন্নাহ : খন্ড ২, পৃ. ২৩০)।

কাদিয়ানী ও লাহোরী গ্রুপের মধ্যে তাদের মূল দ্ব›দ্ব কাদিয়ানী নেতা হাকীম নূরুদ্দীনের মৃত্যুর পর নেতৃত্ব বা খেলাফতের মসনদ নিয়ে সৃষ্টি হয়। কাদিয়ানী গ্রুপ ও খান্দানের লোকেরা মির্জা মাহমুদকে খেলাফতের আসনে সমাসীন করে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে লাহোরী গ্রুপ মুহাম্মদ আলী লাহোরীকে তাদের খলীফা নির্বাচনের পক্ষাপাতি ছিল। এই মতবিরোধ ছাড়া উভয় গ্রুপের লোকেরা মির্জা কাদিয়ানীকে তার দাবিতে সত্যবাদী বলে জানত। অর্থাৎ তাকে নবী মানার ব্যাপারে সবাই একমত ছিল। যদিও লাহোরী গ্রুপের কোনো কোনো সদস্য মুখে বলে যে, আমরা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী বলে মানি না। (যেমন তারা মাঝে মধ্যে এরূপ উক্তি করে থাকে)।

তবে, তার উত্তরে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে: ক. তাদের উক্তি বাস্তবতার পরিপন্থি, ভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ। খ. তাদের ওই কথা সাময়িকভাবে স্বীকার করে নিলেও বলা যায় যে, তারা তো কাদিয়ানীকে মুজাদ্দিদ, মাহদী ও আল্লাহর নির্দেশপ্রাপ্ত ধন্য ব্যক্তি বলে অবশ্যই স্বীকার করে ও মান্য করে। আল কোরআনের বিধান মোতাবেক কোনো মিথ্যা, ভন্ড নবীর দাবীদারকে শুধু মুসলমান বলে কেউ বিশ্বাস করলে সে কাফির হয়ে যায়। সুতরাং কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের দুই গ্রুপের সকলেই যে কাফির ও মুরতাদ, ইসলাম থেকে বিচ্যুত, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। (ইকফারুল মুলহিদীন : পৃ. ১৪)।

স্মরণ রাখা দরকার যে, ঈমান ও ইসলামের বিপরীত হলো ‘কুফর’। কুফরের অভিধানগত অর্থ ঢেকে রাখা, আচ্ছাদিত করা, গোপন করা, অকৃতজ্ঞতা জানানো ও অস্বীকার করা। ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় কুফর হলো জরুরিয়াতে দীন তথা দীনের অত্যাবশ্যকীয়, সুস্পষ্ট, সর্বজন বিদিত বিষয়াবলি অথবা তন্মধ্য হতে কোনো একটি বিষয় অস্বীকার করা। কাদিয়ানীরা জরুরিয়াতে দীেেনর অনেক বিষয়ের ওপর এমন সব ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে যা বিশুদ্ধ ও অকাট্য প্রমাণীত বিষয়ের বিপরীত হয়। এ কারণে তাদের সকলেই জিন্দিক ও কাফির শ্রেণীভূক্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Zahid Islam ৮ মার্চ, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
বর্তমান যুগে কাদিয়ানীরা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর পরে ভিন্ন এক নবীর অস্তিত্ব স্বীকার করে। সুতরাং তাদেরকে মুসলমান বলার অর্থ হবে এটা মেনে নেওয়া যে, ইসলামে নতুন নবী আসার এবং তার উপরও ঈমান আনার সুযোগ রয়েছে। কোনো মুমিনের পক্ষে এমন বিভ্রান্তিকর কুফরী আকীদা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কেননা, খতমে নবুওতের বিষয়টি যুগপরস্পরায় প্রতিষ্ঠিত ও সর্বজনস্বীকৃত আকীদা এবং ইসলামের মৌলিক বিষয় ।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ৮ মার্চ, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির প্রয়োজনানুপাতে কালক্রমে তাদের বিভিন্ন শরীয়ত দিয়েছেন। আর এর পূর্ণতা ও শুভ পরিসমাপ্তি বিধান করেছেন মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ৮ মার্চ, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা লাভের পর যেহেতু এতে কোনোরূপ সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন নেই তাই মানবজাতির জন্য নতুন শরীয়তেরও প্রয়োজন নেই। তাই আল্লাহ তায়ালা নবী-রসুল প্রেরণের ধারা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ৮ মার্চ, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছি, আর আমি তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছি।’ (সূরা মায়েদা : ৩)
Total Reply(0)
সাইফ ৮ মার্চ, ২০২০, ১০:০৭ এএম says : 0
জনাব লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ্‌ এর উত্তম প্রতিধান অবশ্যই দেবেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন