সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রক্ত অশ্রু ও অগ্নি বিধৌত বোখারার মাদরাসা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

কমিউনিস্ট আমলে মীরে আরব মাদরাসার কুতুবখানার সব কিতাব এখানে জমা করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। সেখানকার এক জিম্মাদার উস্তাদ একটি জায়গার দিকে নির্দেশ করে আমাদেরকে বলেন। তারপর তিনি ছাদের দিকে ইশারা করে বললেন, এই দেখুন গম্বুজের এ জায়গাটিতে যে ফাটল দেখতে পাচ্ছেন, তা জ্বলন্ত কিতাবের আগুনের দহনে সৃষ্টি হয়েছে। এখনও কালচে দাগ লেগে আছে।

সত্যিই আগুন লাগানোর ৭০/৭২ বছর পরও নাস্তিকদের বর্বরতার চিহ্ন মীরে আরব মাদরাসার গেইটের ভেতরে প্রথম গম্বুজের গায়েই দৃশ্যমান রয়েছে। হাজারও ছাত্র শিক্ষক, আলেম-উলামা, ইমাম-খতীব, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হয়েছিল এই মাদরাসা প্রাঙ্গনে।

ডান পাশে একটি অভ্যন্তরীন মসজিদ। মসজিদে দরস চলছিল। উস্তাদ বললেন, প্রায় দুই শত ছাত্র নিয়ে আমরা এখানে নতুন করে দ্বীনি ইলম চর্চা শুরু করেছি। উজবেক সরকারের শিক্ষা কারিকুলাম বজায় রেখে আমরা যতদূর সম্ভব দ্বীনি ইলমের চর্চা করছি। উচ্চ শ্রেণির কিছু ছাত্র যারা আরবি বলতে ও বুঝতে পারে, তারা হাদিসের একটি সবক পড়ার ব্যবস্থা করল।

গেইটের বাম পাশে একটি কক্ষে বেশ কয়েকটি কবর। এর মধ্যে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাকালীন এবং পরে এই ভবন নির্মাণকালীন সময়ে বুখারার কিছু শাসকের কবর অন্তর্ভুক্ত। বাকিরা বড় সেনাপতি, মুফতী, কাজী, দরবেশ ও আলেম। সামান্য কয়েক জন নারী শিশুও এখানে শায়িত আছে। সবার বিস্তারিত পরিচয় আজ আর সংরক্ষিত নেই। দুর্গের মতো স্থাপনার কামরায় যাদের কবর, তারা নিশ্চয়ই বিশিষ্ট জন হবেন। আর দ্বীনি মাদরাসার সাথে তাদের ভক্তি ও হৃদ্যতার কথা তো আর বলতে হয় না।

বিগলিত চিত্তে নিজের সব উস্তাদ, মুরব্বী ও মুহসিনদের জন্য দুআর পাশাপাশি এই মাদরাসার সাথে যুক্ত সব মুর্দেগানের জন্য দু’আ করি। বই কিতাবে অনেক কিছুই পড়া ছিল। সশরীরে উপস্থিত হয়ে নিজের চোখে দেখা আর পড়ার মধ্যে অনেক ফারাক। এক দল ছাত্র ও দুই উস্তাদ মাদরাসার ভেতর অঙ্গনে নিয়ে গেলেন। দেখালেন সেই বিস্ময়কর ভবন। চার পাশ ঘেরা। বাইরে থেকে যাকে মনে হয় দুর্গ। ভেতরে চার তলা ভবন। দেখা যায় দু’তলা। আসলে চার তলা। সে যুগের মাল-মেটারিয়ালে তৈরি। বর্তমানে বিদ্যুতের লাইন দেয়া। সীমিত পানির ব্যবস্থা। ছোট মুখের সব দরজা। সামরিক নিরাপত্তার কথা ভেবে সংকীর্ণ করিডোর ও ঘর-দুয়ার।

এ মাদরাসায় কোরআন শরীফের সূরার সমান সংখ্যক কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের নাম ওই সূরার নামে। একজন উস্তাদ আমার অনেক জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন। আরেকজন ছাত্র তারুণ্যের উচ্ছাসে উস্তাদের সব কথার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছিল। সে বলল, যে কক্ষটির নাম সূরায়ে জিনের নামে সেটি গত পাঁচশ’ বছর ধরেই জিনের দখলে। সে বলল, উস্তাদ আপনি কি সেখানে যাবেন? বললাম, তোমরা কি জিনেদের সাথে যোগাযোগ করতে পারো? বলল, তাদের তো দেখা যায় না।

আমি বললাম, নিশ্চয়ই তারা মসজিদে নামাজের সময় এবং পরে আমরা যখন মাদরাসা পরিদর্শন করছি আমাদের দেখে থাকবে। সবক পড়ানোর সময় হয়তো তাদের কেউ কেউ তোমাদের মতো আমার কাছে হাদিসও শুনেছে। যোগাযোগ তো হয়েই গেল। আলাদা করে তাদের কক্ষে যাওয়ার দরকার নেই। তবে তারা যদি দাওয়াত করে তাহলে যাওয়া যায়। সত্যিই মাদরাসার ভেতরের চত্বরটি অন্য প্রাঙ্গনগুলোর মতো ইট-পাথরে বাধাই করা নয়। চারপাশে ইটের বাধাই হলেও মাঝখানে মাটি, ঘাস ও ফুলের বাগান। বড় বড় দু’য়েকটি গাছও আছে।

একটি গাছের নিচে বসার বেঞ্চিতে কিছুক্ষণ বসলাম। সিরিয়ার প্রখ্যাত নকশবন্দী শায়খ রজব দীব তার লন্ডন, জার্মানী ও ফ্রান্সের কিছু ভক্তসহ আমাদের আলোচনা শুনছিলেন। এক দল ছাত্র এসে কিছু নসীহত শুনতে চাইল। আমি বললাম, শায়খ আপনি তাদের কিছু উপদেশ দিয়ে দিন। এ ছাত্ররা আরবি বুঝত। এরপর আমরা আলাদা হয়ে যাই। গাড়ি হোটেলের পথে রওয়ানা হয়। এশার নামাজ পড়ে আমরা রাতের খানার জন্য আবার আফসানা রেস্তোরায় যাই। সবশেষে সেদিনের মতো আবার থাকার হোটেলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Rakib Hasan ৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
শুকরিয়া আল্লাহ আপনার সফর কবুল করুন। আমরাও যেতে চাই এমন জায়গায়।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 2
সফরটা খুবই উপভোগ্য ছিল যা বোঝা যাচ্ছে।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
আমি নিয়মিত আপনার ভ্রমণ কাহিনি পড়ি। আল্লাহ চাহে তো আমারও এই সুন্দর জায়গাগুলোতে যাওয়ার স্বপ্ন আছে।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
আমি নিয়মিত আপনার ভ্রমণ কাহিনি পড়ি। আল্লাহ চাহে তো আমারও এই সুন্দর জায়গাগুলোতে যাওয়ার স্বপ্ন আছে।
Total Reply(0)
সত্য হক ৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
আপনার কাছে নিয়মিত এই ধরনের ভালো স্টোরি চাই।
Total Reply(0)
ফাহাদ ৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
মহান আল্লাহ যেন জীবনে একবার ওখানে যাওয়ার তৌফিক দান করেন।
Total Reply(0)
আমিনুল ইসলাম ৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
এই লেখাগুলোর জন্যই আমি নিয়মিত দৈনিক ইনকিলাব পড়ি
Total Reply(0)
মোহাম্মদ আসয়াদ। ৯ মার্চ, ২০২০, ১০:০৬ এএম says : 0
মাদ্রাসার কিছু ছবি এবং ভিডিও দিলে আর ভালহত।
Total Reply(0)
Abubakar ৯ মার্চ, ২০২০, ৭:২৩ পিএম says : 0
আল হামদুলিল্লাহ,,, বড়দের ভ্রমণ কাহিনী ছোটদের উত্সাহিত করে !!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন