শরীয়ত-তরিকতের মাশায়েখ উলামাকে নানা শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। বর্তমান যুগে প্রচলিত আধুনিক ও প্রাচীন পদ্ধতির আরবি মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মধ্যে সকল শ্রেণীর আলেম-ফাজেল অন্তর্ভুক্ত, যাদের মধ্যে রয়েছেন কোরআনের তফসীরবিদ, হাদীস শাস্ত্রবিদ, ফিক্হবিদ এবং তাসাওফ শাস্ত্রবিদ প্রভৃতি। এদের মধ্যে তাসাওফবিদ বা সুফী সাধক, আওলিয়া-মাশায়েখের উচ্চ মর্যাদার বিশেষ পদবীধারীদের প্রসঙ্গ এ আলোচনার বিষয়বস্তু। আওলিয়া-মাশায়েখ ও সুফিয়ায়ে কেরামের পরিভাষায় বিশেষ পদবীধারী আধ্যাত্মিক সাধকদের পরিচয় তাসাওফ শাস্ত্রে প্রচলিত হলেও সচরাচর তাদের দৃশ্য জগতে দেখা যায় না, তবে তাদের কারো কারো আধ্যাত্মিক শক্তি, অলৌকিক ক্ষমতার কথা জানা যায়। যেমন বলা হয়, গাওস কুতুব, আব্দাল প্রভৃতি।
‘তাসাউফ’ বা সুফিশাস্ত্রে অসংখ্য পরিভাষা প্রচলিত। সকলের নিকট তা সহজ বোধগম্য নয়। বিভিন্ন বিষয়েরও নানা শ্রেণী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আওলিয়ায়ে কেরামের শ্রেণী বিভাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে আওলিয়া ভক্ত-অনুসারী যারা, তারা ছাড়াও বিশেষভাবে আলেম সমাজের নিকট আওলিয়ার শ্রেণী বিভাগ অবগত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সুফিয়ায়ে কেরামের পরিভাষায় এরূপ আওলিয়ায়কে বারো শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে, যা এই: ‘আকতাব, গাওস, ইমামাইন, আওতাদ, আবদাল, আখইয়ার, আবরার, নোকাবা, নোজাবা, আমদ, মকতুবান, মোফরাদ।’ এসব মহান ব্যক্তিত্বের পরিচয়: আকতাব: কুতুবের বহুবচন। কুতুবে আলম বা বিশ্ব কুতুব একজন হয়ে থাকেন।
এর আরো কয়েকটি নাম যথা: কুতুবে আকবর, কুতুবুল এরশাদ, কুতুবুল আকতাব ও কুতুবুল মাদার। গায়েবী জগতে তার নাম আবদুল্লাহ। তার দুই জন উজির হয়ে থাকেন, তাদের ডানের উজিরের নাম আবদুল মালেক এবং বামের উজিরের নাম আবদুল রব। এ দুই জন ইমামাইন নামে পরিচিত। বর্ণিত গণ ব্যতীত আরো বারো জন কুতুব হয়ে থাকেন।
তাদের মধ্যে সাতজন দুনিয়ার সাতটি অঞ্চলে বাস করেন এবং তাদেরকে বলা হয় ‘কুতুবে একলেমী’ বা আঞ্চলিক কুতুব। বাকি পাঁচজন অবস্থান করেন ইয়েমেনে। তারা ‘কুতুবে বেলায়েত’ নামে খ্যাত। এটি কুতুবদের সংখ্যা, তবে অনির্দিষ্ট কুতুব একজন করে প্রত্যেক শহরে এবং প্রত্যেক গ্রামে হয়ে থাকেন।
গাওস: একজনই গাওস হয়ে থাকেন। কেউ কেউ কুতুল আকতাবকেই গাওস বলেছেন। কেউ তাকে ভিন্ন বলেছেন এবং তিনি মক্কায় থাকেন। এতে কারো কারো মতভেদ রয়েছে।
আওতাদ : দুনিয়ার চার কোণে অবস্থানকারী চারজনের নাম আওতাদ। এদেরকে বলা হয় ‘রোকন’ বা স্তম্ভ।
আবদাল : এদের সংখ্যা চল্লিশজন। বাইশ অথবা বারোজন সিরিয়ায় অবস্থান করেন এবং আঠারো বা আঠাইশজন ইরাকে থাকেন।
আখইয়ার : এদের সংখ্যা পাঁচশ’ বা সাতশ। তারা এক স্থানে অবস্থান করেন না, নানা স্থানে ঘুরে বেড়ান পর্যটকের ন্যায়। তাদের নাম হয় হোসাঈন।
আবরার : অধিকাংশের মতে আবদালকে আবরার বলা হয়।
নোকাবা : এরা সংখ্যায় তিনশ’ এবং সবাই আরব দেশে থাকেন। এদের সকলের নাম আলী।
নোজাবা : এদের সংখ্যা সত্তরজন এবং সবাই মিসরে থাকেন এবং সকলের নাম হাসান।
আমদ : চারজন আমদ হয়ে থাকেন দুনিয়ার চারদিকে অবস্থান করেন এবং সকলের নাম মোহাম্মদ।
ফর্দ : গাওসের স্তর উন্নীত হয়ে ফর্দে পরিণত হয় এবং আরো উন্নীত হয়ে কুতুবে ওয়াহদাত হয়।
মকতুম: মকতুম একই অবস্থায় সব স্থানেই থাকেন। (হজরত থানভী (রহ:) কৃত তালীমুদ্দীন)
এ রূহানী মণীষীগণ সাধারণ লোকের অগোচরে থাকলেও প্রকৃত সাধকগণ তাদেরকে চেনেন। তাদের অবর্তমানে অন্যরা যথার্থভাবে তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকেন এবং বলা হয়ে থাকে, এ রূহানী সাধকরাই প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ার নেপথ্য চালিকা শক্তি হিসেবে বিরাজ করে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন