বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কবর আযাব হতে মুক্তির উপায়

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

কোরআন ও সুন্নাহর শাশ্বত বিধান ও নীতির আলোকে একথা স্পষ্টতই বলা যায় যে, কবর আযাব সত্য। অপরাধীদের কবর আযাব ভোগ করতেই হবে। এর কোনো অন্যথা হবার নয়। তবে, কবর আযাব হতে মুক্তি লাভের উপায় আছে, সুযোগ রয়েছে। মুমিন-মুসলমান বান্দাহগণ যদি এ সকল উপায় অবলম্বন করেন, তাহলে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কবর আযাব মাফ করে দেবেন এমন আশ্বাস কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়। আসুন এবার এদিকে তাকানো যাক।

কবর আযাব বিষয়টিকে দু’টি পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা যায়। যথা: ক. স্থায়ী কবর আযাব এবং খ. অস্থায়ী বা সাময়িক কবর আযাব। এই দু’টি দিককে এভাবেও বলা যায় যে, কবরের আযাব কারো জন্য স্থায়ী এবং কারো জন্য অস্থায়ী বা সাময়িক হতে পারে। স্থায়ী হওয়ার অর্থ হলো মৃত্যুর পর হতে কিয়ামত পর্যন্ত কবর আযাব হতেই থাকবে। এ ধরনের শাস্তি কাফির, মুশরিক ও বিশেষ অপরাধীদের জন্য নির্ধারিত। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ক. আল্লাহ শিরেকী গোনাহ ক্ষমা করবেন না, এছাড়া অন্য গোনাহ তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করবেন, আর যে আল্লাহর শরীক স্থাপন করল সে মহাপাপে লিপ্ত হলো। (সূরা নিসা : ৪৮)।

খ. ফলে, আল্লাহপাক মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীগণকে এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীগণকে শাস্তি প্রদান করবেন এবং তিনি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, অবশ্যই আল্লাহপাক ক্ষমাকারী ও দয়াময়। (সূরা আহযাব : ৭৩)। গ. আল্লাহপাক বলবেন: আগুনই তোমাদের বাসস্থান সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে, কিন্তু যদি আল্লাহপাক অন্য কিছু ইচ্ছা করেন, নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক ন্যায় বিচারক এবং সর্বজ্ঞানী। (সূরা আনয়াম : ১২৮)।

বস্তুত কবরে প্রত্যেক ব্যক্তিকে ফিরিশতাগণ প্রশ্ন করবে। মুমিন বান্দাহগণ প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান করবে। ফলে তারা সুখের ও আনন্দের জীবন লাভ করবে। কাফির, মুনাফিক, মুশরিক ও বিশেষ শ্রেণীর গোনাহগারগণ সঠিক উত্তর দিতে পারবে না। পরিণামে তারা কঠিন শাস্তিতে নিপতিত হবে।

হযরত আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন বান্দাহকে মৃত্যুর পর কবরে শায়িত করা হয়, তখন দু’জন ফিরিশতা তার নিকট এসে প্রশ্ন করে, ‘এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা কি ছিল? নেক বান্দাহ বলবে, আমি সাক্ষ্য দেই যে, তিনি আল্লাহপাকের বান্দাহ ও তার রাসূল। তাকে বলা হবে তোমার সঠিক উত্তরের জন্য আল্লাহপাক জান্নাতে তোমার আসন উন্নতর করে দিয়েছেন।

আর কাফির, মুনাফিককে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি দুনিয়াতে এ ব্যক্তি (হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা সা.) সম্পর্কে কী বলতে? সে উত্তর দিবে, অন্য লোকেরা (ইহুদি, খ্রিস্টান, মূর্তিপূজারী, অবিশ্বাসী) যা বলত, আমি তা-ই বলতাম। তখন ফিরিশতাগণ তার দুই কানের মাঝখানে লোহার হাতুড়ী দ্বারা আঘাত করবে, ফলে সে এমন বিকটভাবে চিৎকার করবে যে, মানুষ-জ্বিন ছাড়া সকল সৃষ্টি তা শ্রবণ করবে। (মুসনাদ আহমাদ : খন্ড ৩, পৃ. ১৫৫)।

আর কবরে সাময়িক শাস্তির অর্থ হলো, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শাস্তিদানের পর তা মওকুফ করা হবে। শাস্তি মওকুফ করার কারণ এও হতে পারে যে, তার গোনাহ ছিল স্বাভাবিক ও সাধারণ পর্যায়ের। কাজেই কিছু শাস্তির পর তা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। অথবা মৃত ব্যক্তির জীবিত আত্মীয়-স্বজনদের দোয়া, দান-সদকাহ, ইস্তিগফার ও ইসালে সওয়াবের বদেওলতে কবরবাসীর আযাব মওকুফ বা ক্ষমা করে দেয়া হবে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত সায়াদ বিন উবাদাহ রা.-এর মাতার ইন্তেকালের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। দীনের খেদমতের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা. এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা. আমার আম্মাজান ইন্তেকাল করেছেন। আমি ওই সময় উপস্থিত ছিলাম না। যদি আমি তার পক্ষ হতে সদকাহ করি তবে কি তার কোনো উপকার হবে? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, হ্যাঁ। তখন হযরত সায়াদ রা. বললেন, আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি আমার মেখরাফ নামের খেজুর বাগানটি আমার আম্মাকে সওয়াব রেসানীর জন্য সদকাহ করলাম। (সহীহ বুখারী : খন্ড ১, পৃ. ২৮৬)।

এই নিরিখে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, অস্থায়ী কবর আযাব যা হবে ওই সকল গোনাহগার মুমিনদের জন্য যাদের অপরাধ লঘু ও মার্জনাযোগ্য। এ জাতীয় লোকদের তাদের গোনাহের অনুপাতে শাস্তি দেয়া হবে। তারপর একটা নির্দিষ্ট সময় পর তা তুলে নেয়া হবে। আল্লাহপাক সকল জীবিত মুমিন মুসলমানদের মৃত ব্যক্তিদের প্রতি অধিক হারে সওয়াব রেসানী করার তাওফিক এনায়েত করুন, এটাই আজকের একান্ত প্রার্থনা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
জন্মভুমি ছাতক ১৬ মার্চ, ২০২০, ৩:৫৩ এএম says : 0
কবর হচ্ছে আখিরাতের প্রথম মঞ্জিল। যারা সহজে এ মঞ্জিল থেকে মুক্তি লাভ করবেন তাদের জন্য সবকিছু সহজ হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ১৬ মার্চ, ২০২০, ৩:৫৩ এএম says : 0
এ জন্য আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কেরাম, আওলিয়ায়ে কেরামগণ সব সময় কবর থেকে মুক্তি লাভের জন্য ক্রন্দন করতেন।
Total Reply(0)
ব্যাচেলর ছারপোকা ১৬ মার্চ, ২০২০, ৩:৫৪ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও কবরের আজাব হতে আশ্রয় লাভের জন্য উম্মতকে তাগিদ দিয়েছেন।
Total Reply(0)
জাবের পিনটু ১৬ মার্চ, ২০২০, ৩:৫৪ এএম says : 0
আল্লা-হুম্মা ইন্নি আউ-জুবিকা মিন আ’জা-বিল ক্ববরি। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৬ মার্চ, ২০২০, ৩:৫৫ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সব সময় উঠায় বসায়, নামাজ-ইবাদাত-বন্দেগিতে উক্ত দোয়া পাঠের মাধ্যমে মৃত্যুর স্মরণ এবং কবরের আজ থেকে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
ansarul islam ১৬ মার্চ, ২০২০, ৬:৪৯ এএম says : 0
Allah Safe our from Grave fanishment
Total Reply(0)
Monzoor ১৬ মার্চ, ২০২০, ৮:২২ এএম says : 2
"ইসালে সওয়াবের বদেওলতে কবরবাসীর আযাব মওকুফ বা ক্ষমা করে দেয়া হবে" may Allah save us all from this kind of people who really think above
Total Reply(1)
Abu ১৭ মার্চ, ২০২০, ৪:২৫ এএম says : 0
@Monjur,I'm sure you're a non beliver or hidhu. that's why you're making fethna!
সাইফ ১৬ মার্চ, ২০২০, ৯:৫৪ এএম says : 0
আল্লাহ্‌ পাক জনাব লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। এমন সুন্দর ও মুল্যবান বিষয় নিয়ে লেখার জন্যে।
Total Reply(0)
Zahir Rahan ১৬ মার্চ, ২০২০, ১০:২৮ এএম says : 0
আল্লা-হুম্মা ইন্নি আউ-জুবিকা মিন আ’জা-বিল ক্ববরি। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই।
Total Reply(0)
MD.NAYEEM HUSSEN ১৬ মার্চ, ২০২০, ৯:১৩ পিএম says : 0
Allah chara kew nai. Manush sudu sudu tar rob k bule jai
Total Reply(0)
XT PLANTER ১৬ মার্চ, ২০২০, ৯:৫৪ পিএম says : 0
why say things which Allah has not said? Imran 3:78
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন