সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সুলতানুল হিন্দ হজরত খাজা আজমিরী রহ.

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ১৭ মার্চ, ২০২০

হিজরি ৫৩৭ সালে ইস্ফাহানে (সিজিস্তানে) জন্ম। পিতা-মাতা উভয় দিক হাসানি ও হোসাইনি, ৬৩৩ হিজরি সালের ৬ রজব আজমিরে ইন্তেকাল করেন। ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারে তাঁর অবদান ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। লাখ লাখ মানুষ তাঁরই বদওলতে সঠিক পথের সন্ধান পায়।

হজরত খাজা আজমিরী (রহ.)-এর বারো বছর বয়সে পিতা ইন্তেকাল করেন। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি একটি বাগান পেয়েছিলেন, তার দেখভাল করতে থাকেন। একদিন ইবরাহীম কলন্দর নামক এক ‘মাজযুব’ বাগানে আসেন। খাজা সাহেব তাঁকে কিছু আঙ্গুর পেশ করেন, কিন্তু তিনি আঙ্গুর মুখে নিলেন না এবং নিজের বগল হতে একটি ‘খৈল’-এর টুকরা বের করে মুখে নিলেন এবং চাবানোর পর তা মুখ থেকে বের করে খাজা সাহেবের মুখে দিলেন। ‘খৈল’ খাওয়া মাত্র হজরত খাজা আজমিরী (রহ.)-এর অন্তর নূরে এলাহীতে পূর্ণ হয়ে যায়। তাঁর মধ্যে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, দুনিয়া ও দুনিয়াদারদের প্রতি তার অন্তরে ঘৃণা জন্মে এবং দুনিয়া ত্যাগ করে খোদার তালাশে বের হয়ে সমরখন্দে পৌঁছেন। সেখানে তিনি কোরআন শরীফ মুখস্থ করে হাফেজ হন এবং এরপর প্রচলিত ‘জাহেরী ইলম’ হাসিল করেন।

সমরখন্দ হতে বের হয়ে তিনি ইরাকে গমন করেন এবং ‘হারুন’ নামক কসবায় হজরত শেখ উসমান হারুণী (রহ.) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর মুরিদ হয়ে তাঁর খেদমতে আড়াই বছর অতিবাহিত করেন। বর্ণিত আছে যে, বায়াত করার সময় মুর্শিদ তাঁর মুরিদকে ওজু করান এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ান। অতঃপর সূরা বাকারা পড়তে বলেন এবং একুশ বার দুরূদ শরীফ পড়ান এবং এরপর তিনি আকাশ পানে তাকিয়ে মুরিদের হাত ধরে বিনয়ের সাথে বলেন: ‘আমি তোমাকে মহান আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি এবং তাঁর দরবারে মকবুল বান্দা বানিয়ে দিয়েছি।’ অতঃপর তাকে খেলাফত দান করেন।

হজরত খাজা আজমিরী (রহ.) হজরত শেখ নাজমুদ্দীন কোবরা (রহ.)-এর খেদমতে আড়াই বছর অবস্থান করেন। তিনি হজরত শেখ মুহিউদ্দীন আবদুল কাদের জীলানী (রহ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং তাঁর সঙ্গে বাগদাদে আগমন করেন। সেখানে হজরত শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (রহ.) এবং তাঁর পীর শেখ জিয়াউদ্দীন (রহ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

এখানেই তিনি হজরত খাজা আওহাদুদ্দীন কেরমানী (রহ.)-এর সংস্রবে আসেন এবং তার কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন। হজরত উসমান হারুনী (রহ.)-এর খেদমতে অবস্থানকালে খাজা আজমিরী (রহ.) মুর্শিদের সাথে পবিত্র মক্কা ও মদীনা জিয়ারতে গমন করেন। শেখ উসমানী (রহ.) তার জন্য দোয়া করেন। গায়েব হতে আওয়াজ আসে: ‘মুঈনুদ্দীন দোস্তে মা আস্ত, উরা কবুল কারদাম ও বরগুজিদাম।’ অর্থাৎ মুঈনুদ্দীন আমার বন্ধু, তাকে কুবল করেছি।

হজরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি আজমিরী (রহ.)-এর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করতে গেলে বিশাল পরিসর আবশ্যক। হিন্দুস্থান যখন শিরক, কোফর ও মূর্তিপূজার কবলে পতিত ছিল, তখন মূর্তিপূজার জয় জয়াকারে হক ও সত্য লুপ্ত ছিল। সে কঠিন সময় ও বৈরী পরিবেশে হজরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি আজমিরী (রহ.) ইসলামের প্রচার প্রসারে লিপ্ত হয়ে যে মহান আদর্শ রেখে গেছেন তা তাঁর এক অসাধারণ, বিস্ময়কর ও উজ্জ্বল কীর্তি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
সাইফ ১৭ মার্চ, ২০২০, ১০:২৪ এএম says : 0
আল্লাহ্‌ পাক লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। আর আমাদেরকে খাজায়ে খাজেগান হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রাঃ) এর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁর প্রদশীত পথে চলে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর সন্তুষ্টি অর্জনের পথকে শুগম ও সহজ করুণ।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৭ মার্চ, ২০২০, ১১:২৪ এএম says : 0
খোদা বলিবেন না। আল্লাহ তা'আলা বলিবেন। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Monjur Rashed ১৭ মার্চ, ২০২০, ৯:৫১ পিএম says : 0
Ya Khawja Garibe Newaz, your contributions will remain written with golden words in the Muslim History of subcontinent. It is said that around 93 lac people were converted to Islam through the efforts of " Sultan Ul Hind". In fact, Islam was truly propagated in this subcontinent with the help of Sufism.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন