কুষ্টিয়া শহরের কোলঘেষে বয়ে চলা গড়াই নদী দেখে কান্না পেয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদারের। তিনি অতি সম্প্রতি ২ দিন সরেজমিন গড়াইসহ জেলার ৮টি নদীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। এ সময় নদীর সীমানা দখল করে নির্মানাধীন জেলা পরিষদের সীমানা প্রাচীর ভেঙে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। জেলার সব নদীর পাড় থেকে দ্উত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা দেয়া হয়। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কুষ্টিয়া জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় নদ-নদী নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ২ দিন প্রত্যন্ত অঞ্চল দেখা হয়েছে। কুষ্টিয়ার নদ-নদীর অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সদর উপজেলার হরিপুর এলাকায় দখলে গড়াই লুট হয়ে গেছে। তিনি জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে বলেন, সবার আগে কাজ হবে নদ-নদীর সীমানা নির্ধারণ। তিনি সীমানা নির্ধারণ কিভাবে হবে সেটাও আইনগতভাবে ব্যাখ্যা করে দেন। একই সাথে নদ-নদীর ভেতর যা স্থাপনা পাওয়া যাবে তার সব ভেঙে উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। চেয়ারম্যান নদী রক্ষার আইন তুলে ধরে বলেন, নদীর জমি কাউকে ইজারা দেয়া যাবে না। যদি দেয়া হয়ে থাকে সেটা বেআইনী হয়েছে। অবিলম্বে সেটা বাতিল করে স্থাপনা ভেঙে দিতে হবে। নদীর জমি নিয়ে কোনো লাভজনক (স্থাপনা করে উন্নয়ন) কথা শোনা যাবে না। চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে বলেন, উচ্ছেদে কোনো সমস্যা হলে আমাকে ডাকবেন। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে উচ্ছেদ করবো।
সভায় কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীষুষ কৃষ্ণ কুন্ডু জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জেলার নদ-নদীতে ৩ হাজার ৩০৫টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। দু’দফায় মাত্র ৭৬টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে করা হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কুষ্টিয়ার পদ্মা, গড়াই, কুমার, হিসনা, সাগরখালী, কালিগঙ্গী ও ডাকুয়াসহ ৮টি নদ-নদীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। চেয়ারম্যান বলেন, শহরের গড়াই নদীর ভেতর জেলা পরিষদের বিনোদন পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীর ভেতর দেয়াল দেয়া হয়েছে। কারো দোহায় দিয়ে এগুলো করা যাবে না। কাজ বন্ধ করে জেলা প্রশাসককে এটা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন তিনি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়াতে বিনোদনের কোনো পার্ক নেই। তাই কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের উদ্যোগে একটি পার্ক করার জন্য কুষ্টিয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের মাধ্যমে একটি আবেদন করা হয়। সে সময় তৎকালীন জেলা প্রশাসক জেলা পরিষদের নামে ৩৩ একর জমি বরাদ্দ দেন। সেখানে এ পর্যন্ত ১০ কোটি টাকার অধিক খরচ করা হয়েছে। সীমানা প্রাচীর, বালি-মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এ পার্ক বাস্তবায়ন হলে কর্মব্যস্ত মানুষ বিনোদনের সুযোগ পাবে।
তবে জেলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৯৪ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ শত টাকার দরপত্র আহবান করা হয়। ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর ৯০ লাখ টাকার ও একই তারিখে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার দরপত্র আহবান করা হয়। ওই ৩টি টেন্ডারে ৩ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ শত টাকার সর্বমোট খরচ দেখানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, নদীর জায়গায় কাউকে স্থায়ী স্থাপনা গড়তে দেয়া হবে না। নদীর স্থানে নদী থাকবে, অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করে ভেঙে দেয়া হবে। অপরদিকে, এ পার্কের কারণে উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীরা বল্গাহীনভাবে চলাফেরা করায় চরিত্র নষ্টসহ আইনশৃঙ্খলা অবস্থার অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সভায় কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার, বিভিন্ন উপজেলার ইউএনও, পৌরসভার প্যানেল মেয়র, নদী নিয়ে কাজ করেন ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও সংগঠনের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন