সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে ঘোষিত ছুটিতে শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে ও বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাঁচতে হলে সবাইকে বাসায় থাকতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা ছুটি ভোগ করতে বলেছি করোনা প্রতিরোধ করার জন্য। আমরা এই ছুটি উৎসব করার জন্য দিইনি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের মূলমন্ত্র যার যার ঘরে থাকুন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করুন। তার জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে এই ছুটির মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারি সবাই বাসায় থাকবেন। মুখ্যসচিব বলেন, সব কর্মকর্তা-কর্মচারি ছুটিকালীন সময়ে বাসায় থাকবেন। একই ভাবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিও একই আহ্বান জানাচ্ছি। খুব প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই ঘরের বাইরে যাবেন না। খুব জরুরি প্রয়োজনে যদি যেতে হয় তাহলে স্যানিটাইজেশন ও সকল প্রকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেই যাবেন। অনুগ্রহপূর্বক এই নির্দেশনা মানার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। যার যার ঘরে থাকুন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা বিশ্বের মতো সরকার এই নীতি অনুসরণ করছে বলে জানান তিনি। সরকারের তরফ থেকে ট্রেন, বাস, লঞ্চ বন্ধ করা হয়েছে।
কায়কাউস বলেন, যে জায়গায় আছেন, আপনারা স্থান ত্যাগ করবেন না। যারা ইতোমধ্যে গেছেন, তাদের অনুরোধ করব ঘরের বাইরে যাবেন না। বিশ্বব্যাপী মূলমন্ত্র- ঘরে থাকুন, ঘরে থাকার ব্যত্যয় ঘটলে আপনি নিজেকে যেভাবে শঙ্কাযুক্ত করছেন, লাখ লাখ মানুষকে শঙ্কায় ফেলার আশঙ্কা সৃষ্টি করছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বলেন, এটি এখন আমাদের জাতীয়ভাবে সকলে একসঙ্গে মোকাবিলার সময় এসেছে। আমরা সবাই একযোগে এটি মোকাবিলা করব। আপনারা দয়া করে এর ব্যত্যয় ঘটাবেন না। এসময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
আহমদ কায়কাউস বলেন, জনজীবন যাতে ব্যহত না হয় তার জন্য সরকার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাদের জন্য ওএমএস চালু আছে। সরকারের তরফ থেকে জেলা প্রশাসকদের কাছে নগদ টাকা এবং খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যখনই প্রয়োজন হয়, আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সহায়তা দেওয়া হবে। এমনকি যখনই কোনো প্রয়োজন হবে সরকারের লোকজন বাড়ি বাড়ি যাবে।
ঘরে থাকতেই ছুটি : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ ছুটিসহ ১০টি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে নিজ নিজ ঘরে আইসোলেশনের জন্য যে ছুটির ব্যবস্থা সরকার করেছে তার লক্ষ্য ও উদ্যেশ্যের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অনেকেই ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছেন বা বিভিন্ন উৎসবে যোগ দিচ্ছেন যা মোটেও কাম্য নয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলেছে, সাধারণ ছুটি ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছে। যা উৎসবের জন্য দেয়া হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান এক বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানান। গণমাধ্যমে পাঠনো বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ছুটিকালিন সময়ে গ্রামের বাড়িতে বা অন্য কোনো উৎসবে না গিয়ে বা বাড়ির বাইরে না গিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে আইসোলেশনে থাকতে হবে। ঘোষণাটি গুরুত্বের সাথে গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন