শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

করোনায় মৃত ছাড়াল ১৮ হাজার : আক্রান্ত ছাড়াল ৪ লক্ষাধিক

আক্রান্ত : ৪,০৮,৯১৩ মৃত : ১৮,২৬০ সুস্থ : ১,০৭,০৭৩ জন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস তার আঁতুরঘর হিসেবে খ্যাত চীন থেকে তার থাবা গুটিয়ে নিলেও তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অন্য সব অংশে। ফলে চীনের মহাপ্রাচীর গতকাল থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দিলেও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে আক্রান্তের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। আর এর ভয়াবহতা আঁচ করে অনেক দেশ লকডাউন ঘোষণা করছে। সর্বশেষ গতকাল বিশ্বের সর্ববৃহৎ লকডাউন ঘোষণার ফলে ২১ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে ভারতের যোগাযোগ, অফিস-আদালতসহ সকল কর্মকান্ড। এর আগে ব্রিটেনেও লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে গতকাল রাত পর্যন্ত দুনিয়াজুড়ে মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে। জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটার গতকাল রাতে এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৬টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৩ জন। এর মধ্যে ১৮ হাজার ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৭৩ জন।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে একযোগে বিশ্বের সব দেশ এর সংক্রমণ রোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। প্রতিষেধক ও ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে জোরকদমে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ যাবৎ প্রায় ৭০টির মতো ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ম্যালেরিয়া রোগীদের জন্য ব্যবহৃত ক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন একযোগে প্রয়োগের ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হবার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনুমোদন দেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)।
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা চীনে। সেখানে মোট ৮১ হাজার ১৭১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ২৭৭ জনের। তবে মৃতের হিসেবে চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে ইতালি। দুই দিন ক্রমে মৃতের সংখ্যা হ্রাস পাবার পর ফের বেড়েছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরো ৭৪৩ জন মারা গেছে। এর ফলে ইটালিতে মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮২০ জনে। আক্রান্ত কমপক্ষে ৬৯ হাজার ১৭৬ জন।
মৃতের হিসাবে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ হাজার ৬৭৩। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৬৯৬ জনের। রোগীদের দেশটির হাসপাতালের করিডোরের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ অক্সিজেন ট্যাঙ্কের কাছে শুয়ে অপেক্ষা করতে করতে কাশতে থাকেন। একটি ভিডিওতে এসব দৃশ্য দেখা গেছে। ভিডিওটি মাদ্রিদের ইনফান্ত লিওনর হাসপাতালে তোলা হয়েছিল বলে আল মুন্ডো জানিয়েছে।
কর্মকর্তারা সোমবার জানিয়েছেন, দেশের প্রায় ৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯-এ সংক্রমিত হয়েছেন। অন্যান্য অনেক দেশে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মতোই নার্স, চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেছেন যে, তারা পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক কিট পাচ্ছেন না।
স্বাস্থ্য জরুরি বিভাগের প্রধান ফার্নান্দো সাইমন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমাদের কাছে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা আমরা পছন্দ করি না, কারণ আমাদের এটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা উচিত, যেমন ৩,৯৯০ জন স্বাস্থ্যকর্মী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন’।
রোববার দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী কারমেন ক্যালভো শ্বাসকষ্টের সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে সোমবার সরকার জানিয়েছে। অন্য দুজন মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী পেদ্রো সানচেজও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনভাইরাসের পরীক্ষায় পজেটিভ রয়েছেন।
স্পেনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইরানে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৮১১ জন। এর মধ্যে এক হাজার ৯৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৪৬ হাজার ২৭৪ জন। এর মধ্যে ৫৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের ঘরে থাকার আহŸান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের নেতৃত্ব গঠিত হোয়াইট হাউস করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের এক কর্মীও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরপর মাইক পেন্স ও তার পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে পরীক্ষায় তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫১৯ জন। এর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাকিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ৯৫৮ জন। এর মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) প্রধান বলেছেন, দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। সোমবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সংস্থাটির মহাপরিদর্শক তেড্রোস আডানম ঘেব্রেয়াসুস বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ থেকে ১ লাখে পৌঁছাতে ৬৭ দিন সময় লেগেছে। দ্বিতীয় এক লাখ আক্রান্ত হতে সময় লেগেছে ১১ দিন। কিন্তু তৃতীয় এক লাখ আক্রান্ত হতে সময় লেগেছে মাত্র ৪ দিন।
তেড্রোস আডানম ঘেব্রেয়াসুস বলেন, আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের একসঙ্গে প্রতিরোধ সরঞ্জাম উৎপাদনে কাজ করার আহ্বান জানাবেন তিনি। তিনি বলেন, জি-২০ দেশগুলোর ঐক্য আমাদের প্রয়োজন। কারণ, বিশ্বের মোট জিডিপির ৮০ শতাংশ এসব দেশের। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষাকে যদি আমরা অগ্রাধিকার না দেই তাহলে অনেক মানুষের মৃত্যু হবে। কেননা, যারা তাদের সেবা দিয়ে জীবন রক্ষা করতে পারতেন তারাই অসুস্থ থাকবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, ২৬ মিলিয়নের বেশি স্বাস্থকর্মী করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেবেন। এর আগে সংস্থাটির কর্মকর্তারা সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছিলেন, করোনার বিস্তার মাত্র কয়েক সপ্তাহে বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে দিতে পারে। সূত্র : দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট, এএফপি ও বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Md sohel Rana ২৫ মার্চ, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে হেফাজত করুন আমীন। আল্লাহ ছাড়া আর কোন ভরসা স্থল নেই।
Total Reply(0)
Md sohel Rana ২৫ মার্চ, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে হেফাজত করুন আমীন। আল্লাহ ছাড়া আর কোন ভরসা স্থল নেই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন