দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন করে আরও ছয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। ফলে দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারজনে। আর আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে। গতকাল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অনলাইন লাইভ ব্রিফিংয়ে রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৭১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যারমধ্যে ৩৯ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ এসেছে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয়জন আক্রান্ত হয়েছেন।
তিনি জানান, এই ছয়জনের মধ্যে ইতিমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বেশকিছুদিন একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা চার। নতুন মৃত ব্যক্তির বয়স ৭০ বছরের বেশি। আক্রান্ত বাকি পাঁচজনের একজন সউদী আরব থেকে ওমরাহ করে ফিরেছেন। বাকি চারজন আগের রোগীদের সংস্পর্শে থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। ডা. ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআর’র হটলাইনে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ১৭ শ’ টি কল এসেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৭১২টি নমুনা পরীক্সা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আইসোলশনে (নিশ্চিত শনাক্ত অথবা সন্দেহভাজন) এমন রোগীর সংখ্যা ৪০ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪৬ জন। ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা বারবার বলছি, এই রোগ প্রতিরোধে যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে তা মেনে চলতে হবে। সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে, এতে সকলের অংশগ্রহণ একান্ত কাম্য। অনেকেই দেখা যাচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দিকে ঝুঁকছেন, তবে সম্ভব হলে বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানাবো, যাত্রী পরিবহনের পরে যেন সিটগুলো পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা হয়, সে বিষয়ে তারা নজর দেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ‘সমন্বিত নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র’ থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ২৯৪টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৬ হাজার ৯৪১ জনকে সেবা প্রদান করা যাবে। সারাদেশে আইসোলেশনের জন্য ৪ হাজার ৫৩৯টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা শহরেই প্রস্তুত ১ হাজার ৫০ শয্যা।
এছাড়া রাজধানীর কুয়ে মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, রিজেন্ট হাসপাতাল-উত্তরা, রিজেণ্ট হাসপাতাল মিরপুর এবং যাত্রাবড়ীর সাজেদা ফাউন্ডেশনে ২৯টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত আছে। পাশপাশি আরও ১৬টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুতির কাজ চলছে। আশকোনা হজক্যাম্পে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ৩’শ জনের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, দেশের বিমান, সমুদ্র ও স্থাল বন্দর এবং ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৩ হাজার ৩০৮ জন স্ক্রিনিংকৃত যাত্রী দেশে প্রবেশ করেছে। দেশের এসব প্রবেশ পথে গত ২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট প্রবেশ করেছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯ জন।
সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরেজ ডিপার্টমেন্ট (সিএমএসডি) থেকে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩০ সেট হ্যান্ড গ্লাভস বিতরণ করা হয়েছে। আরও বিতরণ করা হয়েছে হেক্সিসল ২৫০ এমএল ৩২ হাজার ৭৭০ বোতল, ফেসমাস্ক ৫৬ হাজার ১০০টি, ক্যাপ ৪৮ হাজার ৩৮৫টি, সু-কভার ৪৮ হাজার ৮২০টি, সার্জিক্যাল ফেসমাস্ক ১৯ হাজার টি, কম্বো সার্জিক্যাল প্রোটেকশন ড্রেস ৫০০টি, গাউন ১২ হাজার ৬৬০টি, আই প্রোটেক্টর সেফটি গগোল্র ১৭ হাজার ৫৩৫টি। এছাড়া সাজেদা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০টি হাসপাতালে দুই হাজার পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুপমেন্ট বিতরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। ইতিমধ্যে ভাইরাসটি বিশ্বের ১৮৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল সন্ধ্যা (৬টা ৪০ মিনিট) পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৯২ হাজার ৪৩৫ এবং মারা গেছেন ১৭ হাজার ১৪৮ জন। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক লাখ ৩ হাজার ৩৯৫ জন। বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ জন।
করোনার বিস্তাররোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর। চারটি দেশ ও অঞ্চল ছাড়া সব দেশ থেকেই যাত্রী আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে দেশের সব বিপণিবিতান, ট্রেন যোগাযোগ ও লঞ্চ চলাচল। এছাড়া মুলতবি করা হয়েছে জামিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারিক কাজ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। এ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার জন্য দেশের সব জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন