বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের দাবি

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

আপনি গাড়িতে, ট্রেনে, বাসে, রাস্তাঘাটে ময়লা, কাগজ, খোসা বা প্যাকেট যেখানে সেখানে ফেলে না দিয়ে নির্দিষ্ট বা উপযুক্ত জায়গায় নিয়ে ফেললেন। এতে কি আপনার কোনো সওয়াব হবে? এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেরই মনে জাগে।

জবাব হলো, শুধু সওয়াব নয়। এটি বা এ ধরনের আরও অনেক কাজই ঈমানের শাখা। ঈমানের দাবি। ইসলামের মূল প্রেরণা। এসবও ইবাদত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, যে অণু পরিমাণ ভালো কাজ করবে তা সে বিচারের দিন দেখতে পাবে আর যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করবে তাও সে তখন দেখতে পাবে। নবী করিম সা. বলেছেন, ঈমানের ৭৭টি শাখা রয়েছে। যার প্রথমটি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাক্ষ্য দেয়া। আর শেষটি হচ্ছে মানুষের চলাচলের পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। (আল হাদীস)। হাদীস ব্যাখ্যাদাতাগণের মতে ৭৭ সংখ্যাটিকে নবী করিম সা. নির্দিষ্ট অর্থের চেয়ে অসংখ্য বা অধিক বোঝানোর জন্যই ব্যবহার করেছেন। যা আরবি ভাষারীতিতে পাওয়া যায়। ঈমানের যে ৭৭ বা ততধিক শাখা রয়েছে এসবের আলোকেই মুসলিম জাতির জীবন গড়ে তোলা কর্তব্য।

শুধু নামাজ রোজার মধ্যেই ইসলামকে সীমিত করে ফেলা ঈমানের দাবি নয়। ঈমানের দাবি আরও অধিক কিছু। হাদীস শরীফে এসেছে, মহানবী সা. বলেন, মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে সব মানুষ নিরাপদ থাকে। (আল হাদীস)। প্রকৃত মুসলমানের আচরণে বা তৎপরতায় শুধু মানুষ কেন জীব-জন্তু, গাছ-পালা, ফুল-পাখি, পরিবেশ ও আবহাওয়া পর্যন্ত বিনষ্ট বা বিব্রত হতে পারে না। ‘পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ’ -এটি হাদীসের বাণী।

মানুষের চলাচলের পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ যেমন ঈমানের শাখা, মানুষকে কোনোভাবে কষ্ট না দেয়া যখন ইসলামে বিশ্বাসী ব্যক্তির প্রধান দায়িত্ব তখন এর আওতায় দুনিয়ার কোন বিষয়টি না আসবে। যেখানে সেখানে থুথু ও ময়লা ফেলা। বায়ু, পানি, শব্দ ও পরিবেশ দূষণের মতো খারাপ কাজ করা। নিজের দেহ, পোষাক, বাড়ি, কর্মস্থল, পথঘাট, পরিপার্শ্ব, গ্রাম, শহর ও নগরীকে অপরিচ্ছন্ন করে রাখা। ইসলাম এসব পছন্দ করে না। এসব ঈমানের চেতনা বিরোধী কাজ।

ইসলামী জীবন বিধান একটি মহাসমুদ্র। বিশ্বের সব যুগের সব জায়গার সব পরিবেশের সব মানুষের সামগ্রিক জীবনের সকল জিজ্ঞাসার জবাব ইসলামে রয়েছে। ইসলামে ইবাদত শুধু দু’য়েকটি আনুষ্ঠানিক আচার-উপাসনায় সীমাবদ্ধ নয়। দেহ, মন, অর্থ ও সমাজ; ব্যক্তি, পরিবার, রাষ্ট্র ও পৃথিবী, যে ক্ষেত্রেই মানুষ কাজ করুক তার ইবাদত হতে থাকবে, সে সওয়াব পেতে থাকবে। এমন সুন্দর জীবন ব্যবস্থা আর হতে পারে না। এমন কি এর কাছাকাছি কোন বিকল্পের কথাও মানুষ ভাবতে পারে না।

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, যে কোনো ঈমানদার নারী বা পুরুষ, ছোট বড় যে নেক আমলই করে ইহকাল ও পরকালে এর যোগ্য প্রতিদান তাকে আমি দান করব। প্রিয়নবী সা. একটি একটি করে প্রতিটি আমলের কথা ভাঙিয়ে বলে গেছেন। গাছ লাগানোর প্রতিদান বলেছেন, যতদিন গাছটি থাকবে, এর যত পাতা, ফুল, ফল মানুষ পশু-পাখিতে খাবে, যত মানুষ এর ছায়া পাবে সবকিছুর সওয়াব বৃক্ষরোপণকারীর আমলনামায় লেখা হতে থাকবে। কেউ যদি কোনো প্রাণীকে রক্ষা করে, সাহায্য করে, পানি বা খাবার দেয় সবকিছুর জন্য সে সওয়াব বা প্রতিদান পাবে।

হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, প্রতিটি জীবের সেবায়ই রয়েছে সওয়াব বা প্রতিদান। প্রিয়নবী সা. বলেছেন, তোমাদের পরিবারের পেছনে তোমার ব্যয়ও সওয়াবের কাজ। মানুষ তার স্ত্রীর মুখে যে খাদ্যটুকু তুলে দেয় তাও সাদাকার সমতুল্য। একজন মুসলমান যখন কোনো মানুষের সাথে হাসি মুখে কথা বলে সেটিও সাদাকাহ। সেটিও ইবাদত ও সওয়াবের কাজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
জান্নাতুল নাঈম মনি ১ এপ্রিল, ২০২০, ৭:৫১ এএম says : 0
আমাদের সকলের উচিত পুরোপুরি ইসলামের বিধান মেনে চলা
Total Reply(0)
মাহফুজ আহমেদ ১ এপ্রিল, ২০২০, ৭:৫৯ এএম says : 0
পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ইসলামে বেশ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে পরিচ্ছন্নতার অনুশীলন দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও রাসুল (সা.)-এর হাদিসে পরিচ্ছন্নতা বিষয়টির ক্ষেত্রে আরও ব্যাপক শব্দ ‘তাহারাত’ বা পবিত্রতা ব্যবহার করা হয়েছে।
Total Reply(0)
সফিক আহমেদ ১ এপ্রিল, ২০২০, ৮:০০ এএম says : 0
বাস্তবে ইসলাম সতত সৌন্দর্য ও মাধুরীপূর্ণ ধর্ম। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইসলামের সৌন্দর্য মোতাবেক জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন।
Total Reply(0)
নাঈম ১ এপ্রিল, ২০২০, ৮:০১ এএম says : 0
ইসলাম মানুষের পূতপবিত্র জীবনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। মহানবী (সা.) পবিত্রতাকে ঈমানের অংশ ঘোষণা করেছেন এবং নামাজসহ একাধিক ইবাদতের জন্য পবিত্রতার শর্তারোপ করেছে ইসলামী শরিয়ত। একাধিক আয়াত ও হাদিসে মুমিনদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে পবিত্র জীবনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
Total Reply(0)
রিফাত ১ এপ্রিল, ২০২০, ৮:০১ এএম says : 0
বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে বান্দা ধীরে ধীরে আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের পথে এগিয়ে যায় এবং আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক দৃঢ় হয়, ফলে সে ঈমানের দাবিগুলো পূরণের সামর্থ্য লাভ করে, তাই পবিত্রতা ঈমানের অংশ।
Total Reply(0)
লোকমান ১ এপ্রিল, ২০২০, ৮:০৩ এএম says : 0
এই বিষয়ে লেখার জন্য উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
মোঃ আলফাজ হোসেন ১ এপ্রিল, ২০২০, ৫:০২ পিএম says : 0
খুব ভাল লাগলো লেখাটি পড়ে। দুঃখের বিষয় হলো বাংলাদেশ একটা মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বও আমরা খুব অগোছালো। যেখানে সেখানে ময়লা করতে একটু লজ্জা পায়না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন