সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শবে বরাত ও কোরআন নাযিল প্রসঙ্গ

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০১ এএম

মহান আল্লাহপাক আল কোরআন নাজিল হওয়া বা অবতীর্ণ হওয়া সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে দু’টি ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেছেন। যথা- ক. নাজ্জালা এবং খ. আনযালা। এবার এই দু’টি ক্রিয়াপদের ব্যবহারিক দিকের প্রতি নজর দেয়া যাক। ১. ‘নাজ্জালা’ ক্রিয়াপদটির অর্থ হলো, বারে বারে নাজিল করা, অল্প অল্প করে নাজিল করা। ষোলআনা কোরআন দীর্ঘ ২৩ বছরে (মক্কায় ১৩ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর) মক্কা এবং মদিনায় অল্প অল্প করে আল্লাহপাকের পক্ষ হতে নাজিল করা হয়। দশম হিজরির বিদায় হজের দিন আরাফাতের মাঠে সর্বশেষ আয়াত ‘আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দীনাকুম... নাজিল হয়। এই ‘নাজ্জালা’ ক্রিয়াটি চারটি রূপে আল কোরআনে আল্লাহপাক ব্যবহার করেছেন। যেমন- ক. ‘নাজ্জালা’ রূপে ১২ বার। খ. ‘নাজ্জালনা’ রূপে ১০ বার। গ. ‘নাজ্জালনাহু’ রূপে ২ বার। ঘ. ‘নাজ্জালাহু’ রূপে ২ বার।

২. ‘আনযালা’ ক্রিয়াপদটির অর্থ হলো একসাথে ষোলআনা কোরআন নাজিল করা, একসাথে বৃষ্টি নাজিল করা, একসাথে কিতাব নাজিল করা, একসাথে ফেরেশতা নাজিল করা ইত্যাদি। লক্ষ করলে দেখা যায় যে, আল্লাহপাক একসাথে ষোলআনা কোরআন ২ বার নাজিল করেছেন। যথা ক. আল কোরআনের ৯৭ নং সূরা আল কদরে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইন্না আনজালনাহু ফী লাইলাতিল কাদরি’, অর্থাৎ আমি তা (আল কোরআন) মহিমান্বিত রজনীতে নাজিল করেছি। আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জানো?

মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাত্রিতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিব্রাঈল আ.) তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হয়। শান্তিই শান্তি সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। মহান রাব্বুল আলামীন ‘আনযালা’ ক্রিয়াটি ৭টি রূপে আল কোরআনে ব্যবহার করেছেন। যথা- ক. ‘আনযালা’ রূপে ৬৩ বার। খ. ‘আনযালতু’ রূপে ৩ বার। গ. ‘আনযালতুমুহু রূপে ১ বার। ঘ. ‘আনযালনা’ রূপে ৪০ বার। ঙ. ‘আনযালনাহু’ রূপে ১৪ বার। চ. ‘আনযালনাহা’ রূপে ১ বার। ছ. ‘আনযালাহু’ রূপে ৩ বার। মোটকথা, কদরের রাত্রিতে কোরআনকে ‘লাওহে মাহফুজ’ হতে দুনিয়ার প্রথম আসমানে একসাথে নাজিল করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ আমরা জানি, রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর কোনো একটিকে লাইলাতুল কদর হিসেবে আল্লাহপাক মঞ্জুর করেছেন।

সে রাতটি ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের যে কোনো একটি হতে পারে। এ জন্যই পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদর রাত তালাশ করো।’ এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআনের ৪৪ নং সূরা দুখানের ৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো তা (কোরআন) এক মুবারক রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। আমি তো সতর্ককারী।’

এ পর্যায়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, ষোলআনা কোরআন একসাথে নাজিলের ব্যাপারে আল্লাহপাক দু’টি রজনীর কথা উল্লেখ করেছেন। এর একটি হলো ‘লাইলাতুল কদর’ মহিমান্বিত রজনী এবং দ্বিতীয়টি হলো, ‘লাইলাতুন মুবারাকাতুন’ অর্থাৎ বরকতময় রজনী। তাহলে কি এই উভয় রজনী এক ও অভিন্ন?

এ প্রশ্নের উত্তরে তত্ত¡জ্ঞানীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। তাদের এক দলের অভিমত হলো এই যে, বর্ণিত দু’টি রাত অর্থাৎ লাইলাতুল কদর ও লাইলাতুন মুবারাকাতুন এক ও অভিন্ন। কিন্তু দ্বিতীয় দলের অভিমত হলো এই যে, উল্লিখিত দু’টি রাত ভিন্ন ভিন্ন। লাইলাতুন মুবারাকাতুন হলো শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত।

হাদিস শরীফে যে রাতটিকে শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যাকে আরবিতে লাইলাতুন মুবারাকাতুন বা লাইলাতুল বারাআত বলা হয় এবং ফার্সি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় শবে বরাত বা সৌভাগ্য রজনী বলা হয়। এই রাতে মহান আল্লাহপাক স্বীয় এলেম হতে ষোলআনা কোরআনকে ‘লাওহে মাহফুজে’ বা সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ করেছেন। এ কথারই সাক্ষ্য পাওয়া যায় আল কোরআনের ৮৫ নং সূরা বুরুজের ২১ ও ২২ নং আয়াতে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘বস্তুত তা সম্মানিত কোরআন, যা সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ আছে।’ আল্লাহপাক ষোলআনা কোরআনকে সংরক্ষিত ফলকে সংরক্ষণ করেছিলেন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে অর্থাৎ ‘লাইলাতুন মুবারাকাতুন’-এ। যা মুক্তি লাভ ও সৌভাগ্যের রাত বলে সুপরিচিত।

উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, ‘লাইলাতুন মুবারাকাতুন’-এ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্বীয় এলেম হতে ষোলআনা কোরআনকে একসঙ্গে ‘লাওহে মাহফুজে’ লিপিবদ্ধ করেছেন। দ্বিতীয়বার লাওহে মাহফুজ হতে মাহে রমজানের কোনো এক কদরের রাতে ষোলআনা কোরআনকে প্রথম আকাশের বাইতুল ইজ্জতে নাজিল করেছেন। বাইতুল ইজ্জত হতে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে কোরআনুল কারিম মক্কা এবং মদিনায় সূরা বা অল্প অল্প করে নাজিল হয়েছে। আল কোরআনে ব্যবহৃত ‘নাজ্জালা এবং ‘আনযালা’ ক্রিয়াপদদ্বয় এ কথার সাক্ষীই বহন করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
মোঃ শহিদুল ইসলাম ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
সুবাহানআল্লাহে ওয়াবিহামদিহি, সুবাহানআল্লাহিল আজিম।
Total Reply(0)
Taslima Khatun Tasli ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে লাইলাতুল বরাত কিংবা শবেবরাত বলে। ‘শব’ কিংবা ‘লাইলা’ শব্দের অর্থ রাত। আর ‘বারাআত’ অর্থ হচ্ছে মুক্তি। বাংলায় ‘বরাত’ শব্দটি ভাগ্য বা সৌভাগ্য অর্থে ব্যবহৃত হলেও আরবিতে এ শব্দটির অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আরবিতে “বারাআত” শব্দটির অর্থ বিমুক্তি, সম্পর্কচ্ছিন্নতা, মুক্ত হওয়া, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া ইত্যাদি।
Total Reply(0)
Taslima Khatun Tasli ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
মানুষ যদি এ রাতে নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে চক্ষু হতে অশ্রু প্রবাহিত করে তাহলে মহান রাব্বুল আলামিন তার পাপরাশি মুক্ত করে দেন।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
ফার্সি ‘শবেবরাত’, আরবি “লাইলাতুল বারাআত” বা “বিমুক্তির রজনী” বলতে আরবি ৮ম শাবান মাসের মধ্যম রজনী বুঝানো হয়।
Total Reply(0)
মেহেদী ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
কুরআন ও হাদিসে “লাইলাতুল বারাআত” পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়নি। সাহাবী-তাবিয়ীগণের যুগেও এ পরিভাষাটির ব্যবহার জানা যায় না। এ রাতকে হাদিস শরীফে “লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান” বা “মধ্য শা’বানের রজনী” বলা হয়েছে।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৩ এএম says : 1
কোনো বিশেষ ব্যবস্থা বা আয়োজন না করে সাধারণভাবে এ রাতে কবরস্থানে যাওয়া এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্যে দোয়া করা, দরুদ-ইস্তেগফার পাঠ করে দোয়া করা।
Total Reply(0)
মহিউদ্দিনআহমেদ ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৪৪ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ পাকের দরবারে শুকরিয়া তিনি আমাকে আপনাকে মানুষ রুপে মুসলমানের ঘরে দূনিয়াতে পাঠিয়েছেন,ইচ্ছা করলে তিনি নর্দমার কীট রুপেও পাঠাতে পারতেন,আল্লাহ বড়ই দয়দবান,মেহেরবান যিনি যার যা প্রয়োজন নাচাইতেই তাকে তা দিয়ে দেন,যেমন অন্যান্য নবীদের জামানায় তাদের উম্মতের বয়স ছিল প্রায় হাজার বছর পর্যন্ত, আমাদের প্রিয় নবী মহব্বতের নবী সল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম এর উম্মতে৷ বয়স ৭০/৮০,কিন্তু আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তালা আমাদের জন্য একরাতেই দিয়েছেন হাজার বছর এবাদতের চেয়ে বেশি সওয়াব,সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাদের সেই রাতের নেয়ামতকে কবুল করুন, বেশিবেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুন, ঘরে বসেই করব ইনশাআল্লাহ,আমরা যেন কেউ কারো খতির কারন না হই, আমিন।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ৬ এপ্রিল, ২০২০, ৫:১৭ পিএম says : 0
মহতারম শুকরিয়া মহান আল্লাহ পাকের দরবারে, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান ও শবে বরাতের রাত্রি,, ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আমরা পালন করে আসছি,, এতে মুসলমানগন তাদের ঈমান ও আমলে বরকত লাভ করছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছু নব্য ফেতনা এই মহিমান্বিত রাত নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরীর অপচেষ্টা করছেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এর দরবারে ফরিয়াদ করি তিনি যেন এই মহান রজনীতে এবাদত ও ফরিয়াদের মাধ্যমে আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ দান করেন, আমাদের গুণাবলী ক্ষমা করেন। মহামান্বিত রজনী ওসিলায় পৃথিবীব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ ও প্রতি ইঞ্চি মাটিকে নিরাপদ করেন আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন