সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শবে বরাতে করণীয়

মাওলনা মুহাম্মাদ আবদুল হামিদ | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

শবে বরাত একটি মহিমান্বিত রজনী। এ রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন, পাপী-তাপী বান্দাদেরকে উদারচিত্তে ক্ষমা করেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন- এ জন্য এ রাতকে শবে বরাত বলা হয়। হাদিস শরীফে এ রাতটিকে ‘নিসফে শাবান’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যবর্তী রজনী তথা ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রি। মুসলিম উম্মাহর কাছে এ রাতটি খুবই গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ।

শাবান মাস হলো বিশেষ মর্যাদাবান। মোবারক মাহে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে এ মাসটি। রমজানের প্রস্তুতির জন্য এ মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (সা.) এ মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতেন। অন্যান্য মাসের চেয়ে এ মাসে নফল রোজা বেশি রাখতেন। হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন- ‘আমি রাসূল (সা.)-কে রমজান ব্যতীত অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা রাখতে দেখিনি। কিন্তু তিনি শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রেখেছেন।’ (সহি মুসলিম)।
এ মাসের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন- ‘রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান হলো উম্মতের মাস। রাসূল (সা.) রজব, শাবান মাসের অত্যধিক গুরুত্ব ও তাৎপর্যের প্রতি লক্ষ রেখে ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শা’বান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান’- এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন এবং উম্মতকে পড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। যার অর্থ হচ্ছে- ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব ও শাবানের সকল বরকত দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ এ মাসে রয়েছে বিশেষ ফজিলতময় শবে বরাত।
বিভিন্ন হাদিসে শবে বরাতের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়শা (রা.) বর্ণনা করেন- কোনো এক শাবানের অর্ধরাতে রাসূল (সা.)-কে বিছানায় পাওয়া যাচ্ছিল না। খুঁজে দেখা গেল তিনি জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করছেন। (সহি মুসলিম)।
আরেক হাদিসে হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন অর্ধশাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত করো এবং পরের দিনটিতে রোজা রাখো। কেননা এ রাতে আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। আর সুবহে সাদিক পর্যন্ত এ ডাক অব্যাহত থাকে। (ইবনে মাজাহ)।
হযরত ইকরিমা (রা.)-সহ প্রমুখ তাফসিরবিদের মতে, আল কুরআনে সূরায়ে দোখানের প্রথম আয়াতগুলোতে শবে বরাতের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় এ রাতকে ‘লাইলাতুসসফ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে এবং এর বরকতময় হওয়া ও রহমত নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কেউ কেউ শবে বরাত সম্পর্কিত কিছু হাদিসকে দুর্বল বলে একেবারেই অস্বীকার করে ফেলেন। এটা মোটেই উচিত হবে না। কারণ, একই বিষয়ে একাধিক হাদিস বর্ণিত হলে এর গ্রহণযোগ্যতায় আর কোনো প্রশ্ন থাকে না। ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনায় শবে বরাতের বরকত ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। ঢালাওভাবে সবগুলো হাদিসকে দুর্বল বলে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া হাদিস শাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী ফজিলতের হাদিসগুলো দুর্বল হলেও পালনযোগ্য।
মুসলিম উম্মাহর তিনটি স্বর্ণোজ্জ্বল যুগ তথা সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের যুগেও এ রাতের ফজিলত থেকে উপকৃত হওয়ার বিশেষ গতি ও গুরুত্ব ছিল। সেই যুগের মানুষেরাও এই রাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করেছেন। এ রাতটি বিশেষ ফজিলতময় ও গুরুত্ববহ। তাই এ রাতে দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকা ও ইবাদত করা সওয়াবের অছিলা হিসেবে গণ্য হবে নিঃসন্দেহে।
শবে বরাত বিশেষ ফজিলতময় হওয়ায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হন। নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ পাঠ, জিকির-আজকার, তাওবা-ইস্তেগফার করে নিজেদের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করেন এবং তাদের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।
অধিক নফল নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, তাসবিহ পড়া, দোয়া করা; এসব ইবাদত এই রাতে করা যায়। কোনো কোনো হাদিসের আলোকে শাবান মাসের পনেরো তারিখ অর্থাৎ, বরাত রজনীর পরের দিন নফল রোজা রাখা অনেক সওয়াবের কাজ।
এই রাতে আরেকটি বিশেষ আমল রয়েছে, যা একটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তা হলো, রাসূল (সা.) এই রাতে একবার জান্নাতুল বাকিতে গিয়েছিলেন। যেহেতু রাসূল (সা.) জান্নাতুল বাকিতে গিয়েছিলেন এই রাতে, তাই মুসলমানরাও এই রাতে কবরস্থানে যাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। নবী (সা.) থেকে যে কাজটি যেভাবে এবং যে স্তরে প্রমাণিত, সেটাকে সে স্তরে রাখাই বাঞ্ছনীয়। সেই সীমারেখা অতিক্রম করা কিছুতেই উচিত নয়। এই রাতের বিশেষ কোনো ইবাদত ও ইবাদতের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। নেই নামাজের কোনো নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা, নেই ভিন্ন কোনো পদ্ধতি। এই রাতে যেসব ইবাদত করা হবে সবই নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। আর নফল ইবাদত নীরবে আপন আপন ঘরে একাগ্রচিত্তে করা উত্তম।
এসব ইবাদতের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু এবারের পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় কবরস্থান ও মসজিদে না যাওয়াটাই বেশী সওয়াবের কাজ হবে বলে আশা করা যায়। যেখানে ফরজ নামাজের জন্যই মসজিদে গমন না করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে, সেখানে নফল ইবাদতের জন্য মসজিদে যাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। তাই মৃত আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম মরহুম-মরহুমাদের জন্য ঘরে বসেই দোয়া করা উত্তম হবে। এবারের শবে বরাতে আমাদের আল্লাহর কাছে একটা চাওয়া হোক, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সবাইকে করোনা নামক এই মহামারী থেকে যেন রক্ষা করেন। আমীন

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
আল ইমদাদ ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
শবে বরাত হাদিসের চয়ন করা শব্দ নয়। হাদিসে রয়েছে লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান বা মধ্য শা’বানের রজনী। অর্থাৎ শা’বান মাসের ১৪ তারিখ সন্ধ্যার পর যে রাত সেটাই শবে বরাত।
Total Reply(0)
Kausar Ahmed Chowdhury ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
এই রাত নিয়ে প্রচুর গবেষণা, মনীষীদের উক্তি ও পক্ষে বিপক্ষে নানা মত রয়েছে। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করে আমাদের প্রত্যেকের কিছু করণীয় ও বর্জনীয় থাকে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে
Total Reply(0)
Md Amin ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
এ রাতে যেমনভাবে আমরা ইবাদত করার জন্য বিশেষভাবে উদগ্রিব হই আমাদের উচিত রাতের বরকতময় সময়ে ইবাদত করার জন্য উদগ্রিব হওয়া। কেননা প্রতিটি রাতেই একটি বিশেষ সময় আছে যখন আল্লাহ তায়ালা আমাদের ডেকে ডেকে বলতে থাকেন যে, কার কী দরকার সে যেন আমার কাছে চায়, আমি দেবো। কে আছো ক্ষমা চাইবার আমি মাফ করে দেবো। কে আছে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। আর তা হলো প্রতি রাতের এক-তৃতীয়াংশ এর শেষ অংশে যা ফজর পর্যন্ত চলতে থাকে।
Total Reply(0)
Md Masud Hawlader ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
রাতে নিজস্ব পরিসরে নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও তাসবিহ তাহলিল করা যেতে পারে। এবং এ রাতে কোনো ইবাদত করলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে। আর নফল সালাত বা ইবাদত ঘরেই করা বেশি ভালো।
Total Reply(0)
Jafrul Kabir ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 1
মূলত সবচেয়ে সেরা রাত হলো রমজান মাসের শেষের ১০দিন। এই রাতকে যেন আমরা সেই সমস্ত রাত থেকে বেশি মর্যাদাপূর্ণ রাত না ভাবি সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Total Reply(0)
Farid Khondoker ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
লাইটিং করা, হালুয়া রুটি খাওয়া, আতশবাজি ফুটানো, বিশেষ রজনী হিসেবে দলে দলে আনন্দের সাথে উদযাপন অবশ্যই বর্জনীয়
Total Reply(0)
রাকিবুল ইসলাম ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪৬ এএম says : 0
আচ্ছা ভাই শবেবরাতের তাং নিয়ে আমারা বিভ্রান্তিতে আছি, নিউজ ২৪ আজকে ৭ই এপ্রিল,১৩ই শাবান লিখছে, আবার গুগল ক্যালেন্ডার ও তাই বলছে,, এদিকে আপনাদের পত্রিকা আজ ১২ই শাবান লিখছেন, প্লীজ একটা সমাধান দিন
Total Reply(0)
Faruk ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৫ পিএম says : 0
কেউ কেউ শবে বরাত সম্পর্কিত কিছু হাদিসকে দুর্বল বলে একেবারেই অস্বীকার করে ফেলেন। এটা মোটেই উচিত হবে না। কারণ, একই বিষয়ে একাধিক হাদিস বর্ণিত হলে এর গ্রহণযোগ্যতায় আর কোনো প্রশ্ন থাকে না। ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনায় শবে বরাতের বরকত ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। ঢালাওভাবে সবগুলো হাদিসকে দুর্বল বলে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া হাদিস শাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী ফজিলতের হাদিসগুলো দুর্বল হলেও পালনযোগ্য। How far it is true ????????????????????? There are lots of controversy regarding Sab-e-borat. An authentic proof was not found in favor of Celebrating Sob-e-borat, as so many Islamic scholar agreed.
Total Reply(0)
মাহমুদ ৮ এপ্রিল, ২০২০, ৪:৪৯ এএম says : 0
ভাই নামাজ পরবো কত তারিকে বা কোন রাত্রে একটু বুজিয়া বলেন
Total Reply(0)
জিয়াউর রহমান ৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৩ পিএম says : 0
এই রাতের উছিলা করে আল্লাহ তায়ালা যেন করোনা থেকে আমাদের সবাকে হেফাজতে রাখেন। এই রাতকেই জীবনের শেষ রাত ভেবে আমরা সবাই মন খুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি।।।।
Total Reply(0)
মোঃ সোলায়মান মিঞা ১০ এপ্রিল, ২০২০, ২:১৯ এএম says : 0
আল্লাহ্ পাকের দরবারে এই গুনাগার বান্দার আকুতি প্রতিটি মুসলিম যাতে রমজানের ইবাদত মসজিদে গিয়ে পালন করতে পারেন তাই তিনি এই প্রাণঘাতী করনা গুজবকে শীঘ্রই খতম করে দেন ।আমিন
Total Reply(0)
md sarif sk ১০ এপ্রিল, ২০২০, ৪:২৬ এএম says : 0
হাদিস নং গুলি দিলে ভালো হয়।
Total Reply(0)
Muntakim Uzzal ১২ এপ্রিল, ২০২০, ৩:১১ পিএম says : 0
Amin
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন