শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ফুল রাজ্যে বিপর্যয়

করোনায় রঙিন মেলা ধূসর

মিজানুর রহমান তোতা : | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

ফুল রাজ্য যশোরের গদখালীর রঙিন মেলা এখন ধূসর। নানা রঙের ফুলের চাদর বিছানো মনমাতানো অভুতপূর্ব নয়নাভিরাম দৃশ্য হয়েছে ভিন্ন। ক’দিনেই তছনছ হয়ে গেছে। ফুল চাষিরা নির্বাক। তাদের চোখেমুখে এখন দুশ্চিন্তার ছাপ। হাসি মøান হয়ে গেছে। ফুলের বাজার খাঁ খাঁ করছে। নিত্যদিনের জমজমাট চিত্র নেই। ফুল শুধু সৌন্দর্য কিংবা মিষ্টি সুবাতাস ছড়াতো না। বিরাট বাণিজ্যিক গুরুত্ব বহন করে।
মাঠের পর মাঠ ফুল চাষ, পরিচর্যা, ফুল তোলা, বান্ডিল করা, সংরক্ষণ, পরিবহন, ক্রয় ও বিক্রয়সহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রয়েছে অসংখ্য মানুষের বিশাল এক কর্ম ব্যস্ততা চলতো ফুল রাজ্যে। লেনদেন হতো কোটি কোটি টাকার। করোনায় ফুল রাজ্যে ঘটেছে বিপর্যয়। চাষিদের কথা, ফুল মাঠ থেকে কেটে ফেলে দিতে হচ্ছে। জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ফুল। গরু ছাগলে খাচ্ছে ফুল।

যশোরের ঝিকরগাছা গদখালির হাড়িয়া গ্রামের ইমামুল হোসেন বললেন, ৫ হাজার জারবেরা ফুল কেটে ফেলতে হয়েছে। কেউ আর ফুল কিনছে না। আমরা চরম বিপদের মধ্যে আছি। পটুয়াপাড়া গ্রামের শাহিদা বেগম তার জমির ১০ হাজার লাল গোলাপ ফেলে দিয়েছেন। করোনা শেষ করে দিয়েছে স্বপ্ন সাধ। পানিসারা গ্রামের আব্দুল সরদারসহ ফুল চাষিদের কথা, ফুল বেচাকেনার হাটে বিরাট শূন্যতা বিরাজ করছে।

ফুল চাষিদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। সন্তানের মতো পরিচর্যা করে ফুল বিক্রি করে সংসারের প্রয়োজন মিটানোর সাধ ধুলিস্যাত হয়ে গেছে। একদিন দু’দিন নয়, টানা প্রায় ২০দিন এই অবস্থা বিরাজ করছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে গত ১৮ মার্চ থেকে ফুল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। সবার ধারণা ছিল টুকটাক বিক্রি হবে। কিন্তু তা হয়নি। একেবারে বন্ধ রয়েছে বিক্রি। মাঠের পর মাঠ থোকা থোকা ফুল চাষিদের চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও পহেলা বৈশাখে আড়াইশো’ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট ছিল। আশাভঙ্গ করে দিয়েছে করোনা। শুধু যশোর নয়, সারাদেশের ফুলচাষিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানালেন, যশোর, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গাসহ ২৫টি জেলায় ১০সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয় বাণিজ্যিকভাবে। সবখানেই একই অবস্থা।

তিনি বললেন, দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ ফুল উৎপাদন হয় বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদনের সূতিকাগার ফুলরাজ্য হিসেবে চিহ্নিত যশোরের গদখালি এলাকায়। যশোর-বেনাপোল সড়কের গা ঘেষা ঝিকরগাছার গদখালী ফুলের রাজ্য ঘুরে দেখা গেছে, নানা জায়গায় ফুলের স্তুপ। ফুলের বাগানে চাষি ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা নেই। এখন ছাগল গরুর খাদ্য হয়েছে ফুল।

সূত্র জানায়, সারাদেশের দেড় হাজার কোটি টাকার ফুলের বাজার নষ্ট হয়েছে করোনায়। প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার চাষি। চাষিসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত ৩০ লক্ষাধিক মানুষ হাতগুটিয়ে আছেন। গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি থেকে কৃষিমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে সরকারি সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন