শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শবে-বরাতের আমল

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ৮ এপ্রিল, ২০২০

করোনাভাইরাসজনিত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের শবে-বরাত সমাগত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ করোনা সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত যাবতীয় বিধিমালা পরিপূর্ণভাবে অবশ্যই অনুসরণ করে চলবেন। বিশেষভাবে এবারের শবে-বরাতের আমলগুলো কীভাবে পালন করা উচিত তার খোলাসা নিম্নরূপ:

১। ইসলামে নফল ইবাদত ঘরে আদায় করা উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শবে-বরাতে নফল ইবাদতগুলো অতি উত্তম, তবে এবার যেহেতু পরিস্থিতি অন্যরকম এবং প্রায় সর্বত্র মসজিদসমূহে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি কড়াকড়ি আরোপিত হয়েছে, সেহেতু শবে-বরাতের যাবতীয় ইবাদত ঘরেই সমাধা করা উচিত।
২। শবে-বরাতের নফল নামাজ আদায়ের জন্য রাকাতের সীমা ও সূরা নির্ধারিত নয়, তাই যার যার খুশিমত এবং সাধ্যানুযায়ী পাঠ করবেন।

৩। এ রাতে নফল ইবাদত হিসেবে নামাজ এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা অতি উত্তম। কোরআন তেলাওয়াতে সক্ষম ব্যক্তি ঘরে বসেই যত বেশি সম্ভব তেলাওয়াত করবেন। যারা কোরআনের বিভিন্ন সূরা সমন্বিত দোয়া-দুরূদ ও অজিফা পাঠে অভ্যস্ত, তারা এ রাতে এগুলো পাঠ করতে পারেন ।
৪। বহু প্রকারের তাসবীহ, তাহলীল, দোয়া, ইস্তেগফার, দুরূদ শরীফ এবং মোনাজাত রয়েছে, যার পক্ষে যা সুবিধাজনক ও সহজ হয় তিনি তা পাঠ করবেন ।

৫। আজকাল বাংলা ভাষায় দোয়া-দুরূদ সংক্রান্ত ভালো ভালো বই-পুস্তক পাওয়া যায়। মূল আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদসহ প্রকাশিত এসব বই-পুস্তক হতে শবে-বরাতে পাঠ করা যেতে পারে।
৬। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সময় অধিক ব্যয় না করে এ পবিত্র রজনীতে আল্লাহর এবাদত বন্দিগীতে আত্মনিয়োগ করাই শ্রেয়।

৭। এ পবিত্র ও সৌভাগ্যময় রজনী প্রত্যেক মোমেন মুসলমানের স্বীয় গোনাহ মাফ করানোর এবং ভাগ্যোন্নয়নের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে চাওয়া-পাওয়ার উপযুক্ত সময় বলে বিভিন্ন হাদিস হতে জানা যায়। সুতরাং অবহেলায় এ সময় আল্লাহর অসীম বরকত ও রহমত হতে বঞ্চিত থাকা উচিত নয়। এরূপ সৌভাগ্যময় রাত জীবনে আর নাও আসতে পারে।

৮। সকল প্রকারের রোগ-বালাই, বিপদাপদ, অভাব-অনটন ইত্যাদি হতে সুরক্ষার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করার জন্য উপযুক্ত সময় এ রাত।
৯। সকল প্রকারের পাপাচার হতে রক্ষা এবং সমগ্র মানবের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দোয়ার মাধ্যমে এ রাত অতিবাহিত করা এবং পরবর্তী সময়েও তা অব্যাহত রাখা উচিত।

১০। আমাদের দেশে শবে-বরাত উপলক্ষে দলবদ্ধভাবে কবরস্থানগুলোতে ভিড় করার প্রবণতা রয়েছে এবং কবরস্থানগুলোর আশেপাশে বিভিন্ন প্রকারের (খাদ্যদ্রব্য, নানা প্রকারের সামগ্রী) দোকান বসে থাকে। এবারের শবে-বরাতে কবর যিয়ারতকারীরা যাতে অনুরূপ ভিড় না করতে পারে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কেননা কবরস্থানে গমনকারীদের সমাগমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সমূহ আশঙ্কা বিদ্যমান। মনে রাখতে হবে, মৃতদের মাগফিরাত ও সোয়াবরেসানীর জন্য ঘরে বসেই দোয়া, ইস্তেগফার করা যায়। এবারের বিশেষ পরিস্থিতিতে কবরস্থানগুলোতে গমন করে পরিবেশ যেন বিনষ্ট করা না হয়, সে ব্যবস্থা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

শবে-বরাত সৌভাগ্য রজনী। বিভিন্ন হাদিসে রসূলুল্লাহ (সা.) এ রাতের অপূর্ব মহিমা ও সৌভাগ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। বিশেষভাবে এই সুসংবাদও প্রদান করেছেন যে, এ রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হয়ে ফজর পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ রাতের আমল সর্ম্পকে হযরত আলী (রা.) রসূলুল্লাহ (সা.)-এর জবনী বর্ণনা করেন, যাতে তিনি বলেন, শাবান মাসের পনেরো (১৫ তারিখ) তম রাত তোমরা জাগ্রত থাক। আল্লাহর এবাদত বন্দেগীতে আত্মনিয়োগ করো এবং পরের দিন রোজা রাখো। এ রাত আল্লাহতা’লা মাগরিবের সময় থেকেই দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বলতে থাকেন কেউ আছ কি যে আমার নিকট মাগফিরাত তলব করবে, যা আমি ক্ষমা করে দেব, কেউ রুজি-রোজগারের প্রার্থনাকারী আছে কি, যাকে আমি অধিক দান করব, কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি, যাকে আমি বিপদমুক্ত করব। এভাবে ফজর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহতা’লা তাঁর করুণা প্রদানের জন্য জিজ্ঞাসা করতে থাকেন। (ইবনেমাজা ও বায়হাকী)

অনুরূপ একটি বর্ণনায় হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, শাবানের পনেরোতম রাত্রে আহ্বান আসে, মাগফিরাত তলবকারী কেউ আছে কি, যাকে আমি ক্ষমা করে দেব, কোনো সায়েল (প্রার্থনাকারী) আছে কি, যার দামান আমি উদ্দেশ্যের মুক্তা দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেব এবং আল্লাহতা’লা প্রত্যেক প্রার্থনাকারীর দোয়া কবুল করেন।

উপরের বর্ণনাগুলোর আলোকে শবে-বরাতে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও তাঁর করুণা চাওয়ার এ সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করা প্রত্যেক মোমেন মুসলমানের উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Rabiul Hoque ৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩৯ এএম says : 0
মুসলমানদের কাছে শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রজনী অত্যন্ত বরকতময় ও মহিমান্বিত বলে বিবেচিত। আল্লাহ পাক মানবজাতির জন্য তাঁর অসীম রহমতের দরজা এ রাতে খুলে দেন। পরম করুণাময়ের দরবারে নিজের সারা জীবনের দোষ-ত্রুটি, পাপকাজ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার রাত।
Total Reply(0)
Fazlul Hoda ৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 1
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তার কুরআন ও হাদীস সম্মত পন্থায় ইবাদত পালনের তাওফীক দিন। আমীন।
Total Reply(0)
Homaun Kobir ৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)।
Total Reply(0)
Kazi Imran Yousuf ৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
সকলের উচিত বেশি বেশি ইবাদত করে নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।
Total Reply(0)
Rashed Khan ৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
বিশ্বের এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা
Total Reply(0)
Dewan Suman ৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য লেখক ও ইনকিলাবকে ধন্যবাদ
Total Reply(0)
মোঃ আলীহোসেন ৮ এপ্রিল, ২০২০, ৬:২৫ এএম says : 0
ভালোলাগলো আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)
নোমান আহমেদ ৮ এপ্রিল, ২০২০, ৮:১৭ পিএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ রাতের ইবাদতকে যথাযথ ভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন।
Total Reply(0)
হারুন অর রশীদ ৮ এপ্রিল, ২০২০, ৮:২৩ পিএম says : 0
ইনকিলাব কে অসংখ্য ধন্যবাদ শবে বরাত সম্পর্কে সুন্দর ভাবে লিখে জানানোর জন্য।
Total Reply(0)
Kazi RaihanulIslamMehedi ৯ এপ্রিল, ২০২০, ১১:১৪ পিএম says : 0
আল্লাহ আজকের রাতের উছিলায় আমাদের সবাই কে ক্ষমা করে দেন
Total Reply(0)
ZAHID ১২ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৪ এএম says : 0
অসুস্থ হয়ে পড়ায় হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন