শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শবে বরাতের ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০১ এএম

ইসলামী চান্দ্র বর্ষের অষ্টম মাসের নাম শাবান। এই মাসের মধ্যবর্তী রাতটি অর্থাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটির ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
এই রাতটি বিভিন্ন ভাষায় ও বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন (ক) আল কোকরআনে এই রাতটিকে ‘লাইলাতুম্ মুবারাকাতুন’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, আমি তো ইহা (কোরআন) এক মুবারক রজনীতে নাযিল করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। (সূরা দুখান: আয়াত- ৩)। এই রাতে আল্লাহপাক লাওহে মাহফুজ হতে ষোলআনা কোরআনকে দুনিয়ার আকাশে ‘বাইতুল ইজ্জতে’ নাযিল করেছেন। তবে মহান আল্লাহপাক স্বীয় এলেম হতে ষোলআনা কোরআনকে এক সাথে প্রথমে কদরের রাতে ‘লাওহে মাহফুজে’ নাযিল করেছেন। যার কথা সূরা কদরে এর ১নং আয়াতে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আমি ইহা (আল কোরআন) এক মহিমান্বিত রজনিতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা কাদর : আয়াত-১)। মনে রাখা দরকার যে, আরবী আনযালনা শব্দ দ্বারা ষোলআনা কোরআনুলকারীম একসাথে নাযিল করা বুঝায়। আর এ কথাও স্মর্তব্য যে, ‘লাইলাতুল কাদর’ এবং লাইলাতুম্ মুবারাকাতুন’ পৃথক পৃথক রাত।

(খ) হাদীসের ভাষায় এই রাতকে ‘লাইলাতুম্ মিন নিসফি শাবান’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, শাবান মাসের রোজা আমার নিকট অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। যখন তোমাদের নিকট নিসফে শাবান রাত্রি উপস্থিত হবে, তখন তোমরা এই রাতটি জাগরণ করবে (নাজাত পড়ে, কোরআন তিলাওয়াত করে, তাসবীহ তাহলীল করে, জিকির আজকার করে কবর জিয়ারত করে দুআ করে ও বিভিন্ন ইবাদাতের মাধ্যমে) এবং পরের দিন রোজা রাখবে। কারণ এ রাত্রে আল্লাহপাক সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আসমানে চলে আসেন এবং বলতে থাকেন, আছে কি কোনো ব্যক্তি যে তার গোনাহ মাফের জন্য আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তাকে মাফ করে দিব। আছে কি কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী, যে আমার নিকট রিযিক চাইবে? আমি তাকে রিজিক দান করব। আছে কি এমন কোনো রোগ-শোক ও বিপদগ্রস্ত, যে আমার কাছে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে মুক্তি দিব। এভাবে আল্লাহপাক এক একটা বিষয়ের উল্লেখ করে করে সুবহে সাদিক পর্যন্ত বলতে থাকেন এবং ইবাদকারী বান্দাহগণের উপর তাঁর রহমত বৃষ্টির ন্যায় নাজিল হতে থাকে। (সুনানে ইবনে মাজাহ)।

(গ) ইরান ও তৎসংলগ্ন দেশসমূহ, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে শাবানের মধ্যবর্তী রাতকে শবেবরাত বলা হয়। শব অর্থ রাত্রি এবং বরাত অর্থ ভাগ্য। অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনি। এই রাতের ইবাদত বন্দেগীর দ্বারা বান্দাহ শরাফত ও বুজুর্গী, উচ্চ মর্যাদা, নেকী অর্জন, আল্লাহর প্রতি একান্ত ভালোবাসা নিবেদন ও হেদায়েতের নূর লাভে সৌভাগ্যবান হওয়ার সুযোগ লাভ করে থাকে। (মালফুজাতে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.), খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩০৯)। (খ) ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ দেশের আচেনীয়গণ এই রাতকে কুন্দুরী বলে। জাভার অধিবাসীগণ রাআহ্ বলে এবং টিগোগোত্রের লোকেরা একে মাদ্দাগণ বলে। এদের সকলেই এই রাতের ইবাদতকে বরকতময় বলে মনে করে। (জি.এফ, পিজপার: লাইলাতুন্ নিসফিমিন্ শাবান পৃষ্ঠা-৭)।

(ঙ) কেউ কেউ এই রাতকে ‘লায়ল আল্ বারাআত’ অর্থাৎ মুক্তি ও নিষ্কৃতির রাত বলেও অভিহিত করেন। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, এই রাতে আল্লাহপাক সর্বনিম্ন আকাশে অবতরণ করে মরণশীল মানব মন্ডলীকে তাদের পাপের মার্জনা প্রার্থনার আবেদন জানান এবং মুক্তিদানের খোশখবরি প্রদান করেন। (জামে তিরমিজী : অধ্যায় ৩৯)। (চ) তাৎপর্যের দিক থেকে রমজান মাসের সাথে শাবান মাসের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। হাদীসের বর্ণনা হতে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যান্য মাস অপেক্ষা শাবান মাসেই অধিকতর নফল রোজা রাখতেন (সহীহ বুখারী: সাওম, অধ্যায় ৫২; সহীহ মুসলিম : সিয়াম: হাদীস নং ১৭৬; জামে তিরমিজী : সাওম, অধ্যায় ৩৬)। হাদীস শরীফে আরও আছে উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রা.) পূর্ববর্তী রমযানের পরিত্যাক্ত রোযা শাবান মাসে আদায় করেছিলেন।

(ছ) ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুসারেও শাবান মাসের মধ্যবর্তীরাতের বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে ফুটে উঠে। কেননা, প্রাচীন আরবীয় সৌর বর্ষে শাবান এবং রমযান এই উভয় মাসই গ্রীষ্মকালে পড়েছিল। এই সময়টির কেন্দ্র ছিল শাবানের পনের তারিখ। আর চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতটিই হলো ১৫ তারিখের রাত। এজন্য এই রাতটি এবং পরবর্তী দিনটি প্রাচীন আরবে যেমন নববর্ষের সমারোহসহ পালিত হতো, তেমনি মুসলিম সমাজেও তা ইবাদত বন্দেগির মহাসমারোহের বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, এই রাত্রে আল্লাহপাক দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বান্দাহগণকে পাপের মার্জনা ভিক্ষার আহ্বান জানান। জামে তিরমিজী: অধ্যায় ৩৯)। এজন্যই শাবান মাসকে মুয়াজজাম বা মহিমান্বিত এই বিশেষণে বিভূষিত করা হয়েছে। সুতরাং মুসলিম মিল্লাতের উচিত এই রাতে অধিক হারে নফল ইবাদত করা এবং কবরবাসীদের রূহের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে দোয়া ও মোনাজাত করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন