সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নিরাশা মুমিনের কর্ম নয়

মাওলানা শিব্বির আহমাদ | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

এক আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে, যারা মুমিন, যারা সঠিক পথের অনুসারী; তারা তো কিছুতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। হযরত ইবরাহিম (আ.) ও হযরত ইয়াকুব (আ.) ছিলেন পার্থিব বিপদের শিকার। একজন সন্তানহীন অবস্থায় পুরো জীবন কাটিয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, আরেকজন এক সন্তানের শোকেই যখন পাথর হওয়ার অবস্থা, তখন হারালেন আরেক সন্তান! তবুও তাঁরা আল্লাহর অসীম কুদরতের কাছে আশাবাদী ছিলেন। হতাশা তাদের স্পর্শ করতে পারেনি।

পরিশেষে তাঁরা উভয়েই এই পৃথিবীতে থেকেই এর ফল ভোগ করে গেছেন। মুমিনের শান এমনই হওয়া উচিত। যতকাল বেঁচে থাকবে, আল্লাহর রহমতের কাছে আশাবাদী হয়েই সে বেঁচে থাকবে। সাধ্যে যতটুকু কুলায়, চেষ্টা করে যাবে। একবারের চেষ্টা ব্যর্থ হলে আবার করবে। বারবার করবে। কবি যেমনটি বলেছেন : ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর/ একবার না পারিলে দেখ শতবার।’
হযরত ইয়াকুব (আ.) দুই সন্তান হারিয়ে চরম সঙ্কটের মুহূর্তেও ছেলেদের বলছেন, তোমরা গিয়ে ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো! অর্থাৎ তিনি নিজেও আশাবাদী, আশা পোষণ করছেন। অন্যদের মনেও আশার সঞ্চার করতে চাচ্ছেন।

বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), নবীজী সা. তাকে বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’- এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : হাদিস ১৯৭০১)।

বিপদে পড়লে মানুষ যে কিভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এর কিছু বর্ণনা পবিত্র কোরআনেও আছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি মানুষকে যখন কোনো নিয়ামত দেই তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে তাহলে সে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে!’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ৮৩)।
নানা কারণেই মানুষ হতাশায় আক্রান্ত হতে পারে। বিপদে যদি কেউ ধৈর্য ধারণ করতে না পারে তখন দেখা যায়- সামান্য সঙ্কটেই সে ভেঙে পড়ে। কখনো হতাশাগ্রস্তদের সঙ্গও আরেকজনকে হতাশ করে দেয়। আরবিতে প্রবাদ আছে- ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শই গ্রহণ করে থাকে।’ এটাই স্বাভাবিকতা। তাই কেউ যদি হতাশাগ্রস্তদের সঙ্গে ওঠাবসা করে, তাহলে এই হতাশায় একসময় সেও আক্রান্ত হবেই। কখনো আবার প্রত্যাশার পাহাড়ও মানুষকে হতাশ করে।

নিজের জীবন নিয়ে কিংবা জীবনের কোনো দিক নিয়ে যখন কেউ নিজ সামর্থ্যরে বিবেচনা না করে অনেক উঁচু স্বপ্ন দেখতে থাকে, এর পরিণতিতেও সে হতাশাগ্রস্ত হতে পারে। একের পর এক যখন আশাভঙ্গ হতে থাকে, তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। আবার এমনও হয়- আকস্মিক কোনো বিপদ কাউকে এতটাই ঝাঁকুনি দেয়, যার ফলে সে আর মাথা সোজা করে সামনে এগিয়ে চলার হিম্মত করতে পারে না। পরিণামে কেবলই হতাশা।

হতাশা যে কেবল পার্থিব বিষয়াদিকেই আক্রান্ত করে এমন নয়, দ্বীনি ও পরকালীন বিষয়েও মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়। কারও যখন পাপের পরিমাণ বেশি থাকে, সারাদিন যখন কেউ বড় বড় পাপে ডুবে থাকে, যখন নিজেও পাপ করে, অন্যকেও পাপের দিকে ডাকে। মোটকথা, দিনের পর দিন মাসের পর মাস ধরে কেউ যখন কেবলই পাপই করে চলে, এমতাবস্থায় কেউ যদি দয়াময় প্রভুকে স্মরণ করতে চায়, তখন একরাশ হতাশা তাকে ঘিরে ধরতে পারে- আমার যে এত এত পাপ, আমারও কি এখান থেকে মুক্তি সম্ভব?

গোনাহের পঙ্কিলতা থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার সম্ভাবনা যতটুকু থাকে, তাও এ হতাশার আঘাতে শেষ হয়ে যায়। আবার এমন গোনাহগার কাউকে দেখে দ্বীনদার লোকেরাও অনেক সময় হতাশ হয়ে পড়ে- একে মনে হয় আর ভালো পথে আনা যাবে না! কথা কী, এ উভয় হতাশাই আল্লাহ তায়ালার রহমত সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল। আল্লাহর রহমত যখন ভাগ্যে জোটে, তখন তো ইসলামের চরম দুশমনও মুহূর্তের ব্যবধানে অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Hreed Azman ১১ এপ্রিল, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 1
মুমিনদের মোটেও নিরাশ হওয়া উচিত/বাঞ্ছনীয় নয়।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ১১ এপ্রিল, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
মুমিন যদি বিপদে ধৈর্য ধারণ করে। আর আল্লাহ তাআলা বিনিময়ে দেন। গুনাহ-পাপ মাফ করেন। এমনকি শরীরে সামান্য কাঁটা বিদ্ধ হলেও বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা গুনাহ মাফ করেন।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ১১ এপ্রিল, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
একবার নবী (সা.) প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবী (সা.)-এর কাছে এলেন। তখন নবী (সা.) বললেন, ‘মুমিন যখন কোনো (বিপদ) কষ্টে আক্রান্ত হয় তখন আল্লাহ বিনিময়ে তার গুনাহগুলো (ঝরিয়ে দেন) মাফ করে দেন; যেমন (শীতকালে) গাছের পাতা ঝরে পড়ে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৪৭)
Total Reply(0)
কামাল ১১ এপ্রিল, ২০২০, ২:০৬ এএম says : 0
মুমিন বান্দা বিপদে শুধু ধৈর্য ধারণই করে না, বরং আল্লাহ যে অবস্থায় রেখেছেন তার ওপর কৃতজ্ঞতা আদায় করে। ফলে আল্লাহ তার গুনাহগুলো এমনভাবে মাফ করে দেন, যেন সে সদ্য ভূমিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশু, যার কোনো গুনাহই থাকে না। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করলে, সুস্থ অবস্থায় সে যে নেক আমল করত, তার সওয়াব লাভ করে।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১১ এপ্রিল, ২০২০, ২:০৬ এএম says : 0
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী বিপদাক্রান্ত হতে থাকে; সে কখনো শরীর, কখনো সম্পদ ও কখনো সন্তান-সন্ততির বিপদে আক্রান্ত হয়। (এসব বিপদে মুমিন ধৈর্য ধারণ করে, ফলে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ মাফ করতে থাকেন।) একপর্যায়ে সে গুনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৮৫৯)
Total Reply(0)
Miron ১১ এপ্রিল, ২০২০, ৫:২৮ পিএম says : 0
মনেহয় বাংলাদেশের ৪০ লাক ধার্মিক পরিবার মুভ হইবে, তারপর আপনারা শান্তিতে থাকবেন. আপনাদের প্রতি শুভ কামনা রইলো.
Total Reply(0)
Habibur Rahman Faruk ১২ এপ্রিল, ২০২০, ৩:১৬ পিএম says : 0
হিম ঠিকই বলেছেন হুজুর
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন