সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কুকুর-বিড়ালকে খাবার দিন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

রাজধানীসহ বড় বড় শহর ও গ্রামে অনেক বেওয়ারিশ কুকুর থাকে। থাকে মালিকবিহীন বিড়াল। লকডাউনের সময় এদের খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে না। কারণ, হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। হাটবাজার ও জনসমাগম না থাকায় বর্জ্য পরিত্যাক্ত বস্তুও তারা পাচ্ছে না। চলাফেরার মধ্যে মানুষ তাদের ইচ্ছা করে এটা-সেটা দিত অথবা এমনিতেই নানা খাদ্যবস্তু ফেলে দিলে কুকুর-বিড়ালরা খেতে পারত। বর্তমানে রাজধানীতে শুরুর দিকে কয়েকদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র, বিভিন্ন মহল্লার লোকজন কুকুরকে খাবার দিত। কিন্তু ইদানীং বাইরে বের হওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ বিশেষ করে রাতে চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে কুকুর-বিড়ালদের জন্য কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পুরান ঢাকা, উত্তরা ও মালিবাগের দু’য়েকজন কিছু জায়গায় কুকুরের জন্য খাবার রেখে দিচ্ছেন। রাজধানীসহ শহর ও গ্রামের অন্যান্য জায়গায়ও প্রশাসন, আর্মি, পুলিশ, সাধারণ মানুষ সবাইকে এদের বিষয়ে আন্তরিক হতে হবে। যেভাবে সম্ভব জরুরি খাদ্য দিতে হবে। এসব অবলা প্রাণী যদি মানুষের অবহেলায় ক্ষুধায় কষ্ট করে বা মারা যায় তাহলে রাষ্ট্র ও সমাজের সবাইকে দায়ী হতে হবে। কুকুর-বিড়ালের খাবার পৌঁছে দিলে আল্লাহ অভাব ও দুর্ভিক্ষ থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত রাখবেন। এরা ক্ষুধায় মরলে মানুষের জন্যও ভয়াবহ বিপদ নেমে আসতে পারে।

একটি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা এক পাপিষ্ঠা নারীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। অপর এক ব্যক্তিও কুকুরকে পানি পান করিয়ে নাজাত পেয়েছিল। [বোখারি ও মুসলিম] এক লোক নবী কারীম (স.)-কে কুকুর-বিড়ালকে পানি পান করালে সাওয়াব হবে কি না? এমন প্রশ্ন করলে উত্তরে নবী কারীম (স.) বলেছিলেন, যে কোনো প্রাণীকে খাদ্য বা পানীয় দিলে কিংবা সেবা করলে সাওয়াব আছে। [বোখারি ও মুসলিম] আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যা কিছুই তোমরা আল্লাহর জন্য খরচ করবে তার বদলা আল্লাহর নিকট পাবে। তিনি অতি উত্তম ও বিশাল বিনিময় দিয়ে থাকেন। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাক। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু। [আল-কুরআন, মোজ্জাম্মিল-২০]

কোনো অস্বাভাবিক অবস্থায় যখন মানুষ কর্মতৎপর থাকে না, তখন দুনিয়াব্যাপী অচল অবস্থা দেখা দেয়। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে বর্তমান বিশ্ব। অভূতপূর্ব চরিত্রের কোভিড-১৯ পৃথিবীকে স্থবির করে দিয়েছে। মানুষকেও ঘরে বসিয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে সব মানুষের ওপর দায়িত্ব এসেছে একে-অপরের খোঁজ-খবর রাখার। যার নেই তাকে তারা দেবে, যাদের আছে। এই মূলনীতিতে দুনিয়ার বহু সমস্যা সমাধান করা যায়। কোরআন ও হাদিস এ ধরনের নীতি ও উৎসাহ দিয়েছে। মানুষ ছাড়াও মানুষের সাথে বসবাসকারী জীবজন্তু, পশুপাখি এসব বিপদের সময় সমস্যায় পড়ে। যে সব বন্যপ্রাণী মানুষ থেকে দূরে, তাদের বেঁচে থাকার সব আয়োজন আল্লাহ তায়ালা প্রকৃতির মাধ্যমেই করে থাকেন। আল্লাহর বিশাল রিজিক দান ও বণ্টন ব্যবস্থায় সৃষ্টিজগত চলে।

পৃথিবীতে বিচরণকারী এমন কোনো বস্তু নেই যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার ওপর নয়। [আল-কুরআন] তবে এর উৎপাদন, সংরক্ষণ, বণ্টন ইত্যাদিতে আল্লাহ মানুষকে অনেক দায়িত্বশীল করে দিয়েছেন। যেমন- শিশুদের খাদ্য মা-বাবা কিংবা বড়রা পৌঁছে দেয়। পরিবারের কর্তা বাকি সদস্যদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করেন। রাষ্ট্র দেশবাসীর খাদ্য ও জরুরি সকল বিষয়ের পরিকল্পনা, সরবরাহ, তত্ত্বাবধান, বণ্টন ইত্যাদি দেখভাল করেন। অভাবী, অথর্ব, অতি বৃদ্ধ, এতিম, বিধবা, মিসকিন কিংবা সাময়িক অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের দায়-দায়িত্ব সমাজের সমর্থ ব্যক্তিদের ওপর। গৃহপালিত পশু কিংবা খামারে রক্ষিত পশুপাখি দুর্যোগের সময়ও তার মালিকের জিম্মায় থাকে। যে কোনোভাবে তাদের আহারের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা কবুতর বা পাখি পালেন কোনো অবহেলা করে তাদের অভূক্ত রাখলে কঠিন আজাব হবে।

এক মহিলা বিড়ালকে আটকে রেখেছিল। খাদ্যও দেয়নি, তাকে ছেড়েও দেয়নি। বিড়ালটি মারা যায়। এ মহিলাকে জাহান্নামে অব্যাহতভাবে একটি বিড়াল খামচাচ্ছিল। এ দৃশ্য মহানবী (স.)-কে জাহান্নাম পরিদর্শনের সময় আল্লাহ তায়ালা দেখিয়েছেন। এ হাদিসটি বোখারি ও মুসলিম উভয় কিতাবে আছে। নবী কারীম (স.) বলেছেন, দুনিয়াতে যারা দয়ালু তাদেরকেই পরম দয়ালু আল্লাহ দয়া করেন। তুমি দুনিয়াবাসীর ওপর দয়া কর, ঊর্ধ্বজগতের অধিপতি আল্লাহ তোমার ওপর দয়া করবেন। [তিরমিযি]

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Anjum Aysha ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
এই সময়ে দুর্ভিক্ষ এড়াতে খাদ্য উত্পাদনে নজর রাখা জরুরি।বাড়িতে খালি জায়গা থাকলেই সেখানে সবার ফল বা সবজির গাছ লাগানো উচিত।সবাই যদি চাষে এগিয়ে আসে তাহলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে।কৃষি অধিদপ্তরকে অধিক জনসংখ্যার খাদ্যের চাপ সামাল দিতে আরও যুগোপযোগী হতে হবে।কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যার কারণে চাষ করার জায়গা অস্বাভাবিক হারে কমে যাচ্ছে।
Total Reply(0)
Nazmul Haq ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
সব কিছু বন্ধ করেও করোনার সংক্রমন ঠেকানো গেল না, তাহলে মানুষদের ঘরে বন্দি করে সরকার কেন ভাতে পানিতে মারতে আছে? শুনতাছি হাজার হাজার কোটি টাকা রাষ্ট মানুষদের দিতাছে আমাদের আশ পাশের কাউকে ও একটি চকলেট পাইতে দেখলাম না তাহলে টাকা গুলো কি মামুর দেশ ভারতে চলে গেল?
Total Reply(0)
Hm Oli Ullah ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৮ এএম says : 0
সচেতনতার সহিত সকলকে কাজে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন,অন্যথায় দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজবে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৯ এএম says : 0
কুকুর বিড়ালেরও খাওয়ার হক রয়েছে। তাদের অবশ্যই খাবার দিতে হবে। অমানবিক হওয়া যাবে না।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:২০ এএম says : 0
অতীব প্রয়োজনীয় একটা বিষয় নিয়ে লেখার জন্য লেখককে শুকরিয়া জানাচ্ছি। আমাদের পশুপাখির প্রতিও খেয়াল রাখা জরুরি।
Total Reply(0)
সাকা চৌধুরী ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:২০ এএম says : 0
গুরুত্বপূর্ণ একটা নজরে আনার জন্য ইনকিলাবকে ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
নূরুদ্দীন খান চৌধুরী ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
Humanitarian Nobel think. Islam is the best. Thanks for daily Inqilab and his honorable editor and writer ubaidur Rahman Khan nadvi.
Total Reply(0)
নূরুল্লাহ ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ৭:৪৯ এএম says : 0
অনন্য ইনকিলাব! এমন লেখা আপনারা লিখতে পারেন
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ৮:৪৩ এএম says : 0
আমরা যেন সচেতন হইতে পারি, আল্লাহ তা'আলার দরবারে দোয়া করি। সালাম জানাই সম্মানিত লেখককে। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Khokon ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ৯:০৭ পিএম says : 0
Of course, it is important as we're human being we need to give food other animals whether is domestic or not ? Our country a few people are kind to animals but maximum are arrogant. It is important too teach school, colleges and university that everyone should respect animals as a creature of Allah (god). If we have right to servive they have too same right. Allah love his all creatures, no doubt otherwise he wouldn't have created them. So we need to treat them like one of your family members.
Total Reply(0)
Khokon ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ৯:০৮ পিএম says : 0
Of course, it is important as we're human being we need to give food other animals whether is domestic or not ? Our country a few people are kind to animals but maximum are arrogant. It is important too teach school, colleges and university that everyone should respect animals as a creature of Allah (god). If we have right to servive they have too same right. Allah love his all creatures, no doubt otherwise he wouldn't have created them. So we need to treat them like one of your family members.
Total Reply(0)
mohammad Tanvir Haque ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ৮:০৬ পিএম says : 0
very important and wonderful article .May ALLAH bless writer and us all .We all should try for Human being as well as all creature in this world .Animals are also our neighbors
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন