সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সাদাকাহ’র মাধ্যমে বিপদ দূরীভূত হয়

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

যে সকল উপাত্ত বা উপকরণ সম্পদ বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির পথ সুগম করে তোলে তন্মধ্যে দান-খয়রাত বা আল্লাহর পথে ব্যয় করা অন্যতম। কোরআনুল কারীমে দান-খয়রাত বোঝাতে তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যথা- (১) ইনফাক, ব্যয় করা, খরচ করা। (২) ইতআম : খাওয়ানো, খাদ্য দান করা এবং (৩) সাদাকাহ : দান-খয়রাত করা। আল্লাহর পথে ব্যয় করা বলতে উল্লিখিত তিন শ্রেণির দানকেই বুঝায়। চাই তা ফরজ হোক, ওয়াজিব হোক, নফল অথবা মোস্তাহাব হোক।

এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে: ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের উপার্জিত বস্তু থেকে এবং আমি ভূমি থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু খরচ বা দান করো।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬৭)। এই দানের সওয়াব এক থেকে শুরু করে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করে, তাদের উপমা একটি শস্য বীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যকলা, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বর্ধিত করে দেন, আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬১)।

এই আয়াতের কারীমার অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, আল্লাহর পথে দান করার সওয়াব বহুগুণে বর্ধিত করা হয়। তবে, এর জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত : দান-সাদাকাহ যোগ্য ও উপযুক্ত নয় এমন ব্যক্তিকে দিলে দান-সাদাকাহ ব্যর্থ হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত : যে ব্যক্তি দান-খয়রাত করবে তাকে সৎ ও সৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে হবে। নিয়তের মাঝে কোনোরূপ আবিলতা থাকতে পারবে না। যদি যশ অর্জনের জন্য বা লোক দেখানোর জন্য দান-খয়রাত করে তা বিফলে যাবে। এর দ্বারা কোনো পুণ্য লাভ করা যাবে না। সে ব্যক্তি অজ্ঞ ও মূর্খ কৃষকের মতো, যে অনুর্বর বা মরুভূমিতে বীজ বপন করে, যার ফলে বীজ মরে যায়, অঙ্কুর উদগম হয় না। তৃতীয়ত : আল্লাহর পথে যে মাল-সম্পদ খরচ করবে তা পবিত্র হালাল হতে হবে। হাদিস শরিফে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ পাক পবিত্র, তিনি হালাল বস্তু ব্যতীত কিছুই কবুল করেন না।
বস্তুত: আল্লাহ পাকের দরবারে দান-খয়রাত গ্রহণযোগ্য হওয়ার দুটি শর্ত রয়েছে। এর একটি হলো, দান-খয়রাত করে অনুগ্রহ প্রকাশ করা যাবে না, মনোতুষ্টির ভাব দেখানো যাবে না। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ায় না, এবং গ্রহীতাকেও ক্লেশ দেয় না, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিতও হবে না। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬৯)।

মোট কথা গ্রহীতার সাথে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না, যাতে সে নিজেকে হেয়, ঘৃণিত মনে করে ও কষ্ট পায়। আর দ্বিতীয়টি হলো, দান-খয়রাত রাতে ও দিনে এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে মুক্ত মনে আদায় করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করছেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে তাদের পুণ্যফল তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। তাদের কোনো ভয় ও শঙ্কা নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৭৪)।

বস্তুত: আল্লাহর পথে খরচকারীগণ পরকালীন অধিক নেকি লাভের পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনেও প্রচুর অর্থ-সম্পদ লাভ করে থাকেন। এতদ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল কোরআনে ঘোষণা করছেন, ‘তোমরা যা কিছু (আল্লাহর পথে) খরচ করো তিনি তার বিনিময় প্রদান করেন। তিনি উত্তম রিজিক (সম্পদ) দাতা। (সূরা সাবা : আয়াত ৩৯)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছির রাহ. বলেছেন, যারা আল্লাহর পথে খরচ করে, আল্লাহ পাক তাদেরকে এর বিনিময় দুনিয়া এবং আখেরাতে উভয় জাহানেই প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা আল্লাহর বান্দাহর নিকট আসে। তাদের একজন এই দোয়া করে, হে আল্লাহ, তোমার পথে দানকারীকে উত্তম বিনিময় প্রদান করো।

আর দ্বিতীয়জন বলে, হে আল্লাহ, তোমার পথে যারা খরচ করে না তাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও। (সহিহ বুখারি : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩০৪)। এখানে উত্তম বিনিময় দান করার অর্থ হচ্ছে দুনিয়া এবং আখেরাতে উভয় জাহানে দান করা। সুতরাং সমৃদ্ধি অর্জনে দান-খয়রাতের ভূমিকা যে বিশিষ্ট স্থান দখল করে রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
এম. এম. হাসান ১৪ এপ্রিল, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
দান বলতে শুধু অর্থ নয়, সময় নিয়ন্ত্রণ, অন্যের অধিকার রক্ষায় কাজ করা, নিজের স্বত্য ত্যাগ করে অন্যের জন্য কিছু করাকে বুঝায়। যেমন রক্ত দান। জীবিত অবস্থায় একজন মানুষের সবচেয়ে বড় দান অন্যের জীবন বাঁচাতে রক্ত দান করা।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১৪ এপ্রিল, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
বিপদ ও ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষার পেতে প্রতিদিন কিছু না কিছু দান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দান করলে মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। শুধু আপনি নন, আপনার পরিবারের মাঝেও এ ধারা চালু রাখুন। ছোট খাট বিষয়ে বাচ্চাদের শিক্ষা দিন। অপরের উপকারার্থে এগিয়ে আসুন।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৪ এপ্রিল, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
দানের ব্যাপারে ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে বিশ্বাসের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে একটি হলো বাধ্যতামূলক দান। দান সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের অনেক স্থানে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। সূরা বাকারার ২৬১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “সৎ দান এমন একটি শস্যবীজ, যাতে উৎপন্ন হয় ৭টি শীষ আর প্রতিটি শীষে থাকে শত শস্য দানা। আল্লাহ যাকে চান তাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেন।”
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ১৪ এপ্রিল, ২০২০, ২:৪৮ এএম says : 0
আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন থেকে তার সবধরনের আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি দরজা খোলা থাকে। তার মধ্যে একটি হলো দান খয়রাত বা সদকা।
Total Reply(0)
চাদের আলো ১৪ এপ্রিল, ২০২০, ২:৪৯ এএম says : 0
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের বেশি বেশি দান সাদকাহ করার তৌফিক দিন। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন