সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

করোনায় আমাদের করণীয়

মুহাম্মদ ওয়ালীয়ুর রহমান খান | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

গোটা বিশ্ব অচল করে দেয়া এ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহান আল্লাহর অসীম শক্তি ও ক্ষমতার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশমাত্র। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আসে না। যে আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে তার অন্তরকে তিনি সৎপথে পরিচালিত করেন। (সূরা তাগাবুন-১১)।

বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে এসেছে, তার নির্দেশেই পরিচালিত হচ্ছে এবং একমাত্র তাঁর ইচ্ছাতেই নিষ্ক্রিয় হতে পারে। বিশে^র আক্রান্ত দেশ ও মানুষেরা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে এ রোগের প্রতিরোধের নামে যা কিছু করছে সবই হলো রোগের সংক্রমণ বা বিস্তার রোধের চেষ্টা। মূল ভাইরাসটি নির্মূল বা ধ্বংসের কোনো শক্তি বা বিজ্ঞান কারো হাতে নেই।

পরম করুণাময় আল্লাহ এটিকে নিয়ন্ত্রিত রূপে রেখেছেন। তিনি চাইলে এ ভাইরাস এক মুহূর্তেই পৃথিবীকে মহাগোরস্তানে পরিণত করতে পারে। অনেক শক্তি, প্রযুক্তি ও সক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও উন্নত দেশগুলোও বর্তমান মাত্রার করোনার সামনে আজ অসহায়। কোভিড-১৯ এর আঘাতে সব চেয়ে বিপর্যস্ত ইটালির প্রেসিডেন্ট তো এ মর্মে বলেই ফেলেছেন, ‘পৃথিবীর সব শক্তি ব্যর্থ; এখন আকাশের সাহায্যের আশায় আছি।’ বিধর্মীরাও এখন ধর্মকর্মে মগ্ন। অনেক নাস্তিকও মনে মনে আস্তিক হয়ে যাচ্ছে।

মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, অসীম শক্তির অধিকারী আল্লাহ মানুষকে সুপথে আসার জন্য এ মহামারী দ্বারা সতর্কবাণী দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা রূম-৪১)।
সুপথে ফিরে আসার জন্য শাস্তি। সবাইকে ধ্বংস করার জন্য এ আযাব দেননি। যেমনটি মিসরের একজন মুসলিম স্কলার বলেছেন, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃতের হার ৩% ভাগের মত (এই লেখা পর্যন্ত); আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যদি সবাইকে ধ্বংস করতে চাইতেন তাহলে ১০০% ভাগ প্রাণঘাতী করে ভাইরাসটি পাঠাতেন। আক্রান্তদের মধ্যে থেকে শতকরা ২/৩ ভাগের প্রাণঘাতী এ করোনার আক্রমণেই সারা পৃথিবী আজ প্রায় অচল।
এমতাবস্থায়, আমাদের উচিত সর্বাগ্রে আল্লাহ সর্বশক্তিমানের নিকট তাওবা করা, পাপ কাজ ত্যাগ করা এবং মুক্তির জন্য নিরন্তর প্রার্থনা করা। তাঁর ইশারাতেই ভয়াবহ এ আযাব দূর হতে পারে। এর সৃষ্টি, গতিবিধি, বিস্তার, বিলুপ্তি কিংবা এ থেকে আরোগ্য সব কিছু একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহর হাতে।

ইসলামের ইতিহাসে মহামারীর ঘটনা ও এ সময়ে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা আছে। রাসূলুল্লাহ সা. এক বাণীতে বলেছেন, ‘এগুলো হলো আযাব’। আল্লাহ যার চান প্রেরণ করেন। পরিশেষে তিনি এ আযাবকে মুমিনদের জন্য রহমত স্বরূপ করে দেন। সুতরাং কোনো মানুষ যদি মহামারীতে পতিত হয় এবং ধৈর্য ও আল্লাহর সাহায্যের প্রত্যাশা নিয়ে নিজ ঘরে অবস্থান করে এবং এই বিশ্বাস অন্তরে পোষণ করে যে, আল্লাহ তার ভাগ্যে যা লিপিবদ্ধ করেছেন এর বাইরে তার কিছুই হবে না। সে শহীদের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬১৮২)।

এসব নির্দেশনার আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম এমন সঙ্কটে মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ আদায়ের অবকাশ দিয়েছেন। তাছাড়া বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের নির্দেশনায় মানুষ এখন ঘরবন্দি। এমন অবসর বা কাজ-কর্মহীনভাবে ইতোপূর্বে মানুষ কখনো থাকেনি। আরো কতদিন এভাবে থাকতে হবে আল্লাহই ভালো জানেন।

এ অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠার জীবনে পরিবার পরিজনকে সময় ও সহযোগিতা দেয়ার পাশাপাশি এ অবসর সময়টুকু আমরা যদি মহান আল্লাহর দয়া লাভের আশায় বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার ও নেক আমলে ব্যয় করি তাহলেই হবে সবচেয়ে উত্তম ও উপযুক্ত কাজ। যে উত্তম কাজের পথ দেখায় সেও এর সমান সওয়াব পায়। সে লক্ষেই নিম্নে কিছু আমল ও করণীয় উপস্থাপিত হলো:

১.সব ধরনের গোনাহ ও অন্যায় কাজ পরিহার করা। ২. আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হয়ে অতীতের গোনার জন্য তওবা ইস্তিগফার করা। ৩. বান্দার হক থাকলে এখনই তা পরিশোধের ব্যবস্থা করা। ৪. পরিবারের সবাইকে নিয়ে নামাজ কায়েম করা। সম্ভব হলে ঘরে জামাত করা। ৫. কোরআন তিলাওয়াত, শিক্ষাদান, অর্থসহ পাঠ, শিশুকিশোরদেরকে নামাজ ও মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দান। ৬. বেশি বেশি ইস্তিগফার, দরূদ, তাসবীহ, তাহমীদ, তাকবীর, দুআ ইউনুস (কমপক্ষে-১০০বার করে), সাইয়েদুল ইস্তিগফার এবং আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জনূনি ওয়াল জুযামি ওয়া মিন সাইয়িইল আসকাম ভাইরাসের দুআটি পাঠ করা।

৭. সকাল-সন্ধায় ৩বার করে ‘বিসমিল্লাহিল্লাযী লা ইয়াদুররু মাআসমিহী শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা’ই ওয়া হুয়াস সামীউল আলীম’ ও সূরা ফালাক নাস পাঠ করা। ৮. হাদীসে আছে, ‘আসসাদকাতু তারুদ্দুল বালা’ দান সদকা বালা-মুসিবত দূর করে। এখন বেশি পরিমাণে দান করা। কর্মহীন খাদ্যহীন মানুষদের কাছে খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা। ৯. এ রকম ভয়াবহ সঙ্কটে গণমাধ্যমের নাচ-গান, ছবি ও অশ্লীল বিজ্ঞাপন বন্ধ করে সতর্কতামূলক ও ইসলামী প্রোগ্রাম প্রচার করা উচিত। সব ধরনের গোনাহ ও নাফরমানি ত্যাগ করে আমাদের জাতীয়ভাবে তওবা করার জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে উদ্ভুদ্ধ করা।

১০. যে কোনো রোগীর সেবা করা অনেক সওয়াবের কাজ। করোনায় আক্রান্ত মানুষকে সুরক্ষিত হয়ে যথাসাধ্য সেবা ও সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে উৎসাহিত করা। এই সেবার জন্য আল্লাহ আপনাদেরকে বহুগুণ বেশি প্রতিদান দিবেন। ১১. রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, ‘আত তাঊনু শাহাদাতুন লিকুল্লি মুসলিম।” মহামারীতে মৃত প্রত্যেক মুসলমান শহীদ। এ শহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা আবশ্যক। সুতরাং এঁদের কাফন, জানাযা ও দাফনে আন্তরিক সহযোগিতা করা। স্মরণ রাখতে হবে, এসব পরিস্থিতি যে কারো জীবনে আসতে পারে।

১২. আমরা সবাই আল্লাহ গাফূরুর রাহীম এর কাছে একান্তভাবে এ প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে ক্ষমা করেন এবং আমাদের পরিবার পরিজন, দেশবাসী, মুসলিম উম্মাহ ও বিশ^বাসীকে এ মহাদুর্যোগ ও মহামারী থেকে মুক্তি দান করেন। এ সঙ্কট দ্বারা বিশ^ থেকে সব কুফরি, জুলুম ও নাফরমানি নির্মূল করে সর্বত্র ঈমান ও হিদায়াতের স্রোতধারা প্রবাহিত করে দেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Tofail uddin chowdhury ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৮ এএম says : 0
Kob sondar sabai amal karar sesta karon amin.
Total Reply(0)
Mohammad Zahurul Islam ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
Constructive and educative discussion.
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেফাজতে রাখুন আমিন.
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
আপকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি , আমাদের সবার জীবনের খুব মূল্যবান সচেতনা মুল্লুক কথাগুলো বলার এবং সবার সামনে উপস্থাপন করে তুলে ধরার জন্যে , আমিও আপনার সুস্থ্য সুন্দর জীবন এবং সুদীর্ঘ আয়ু কামনা করছি
Total Reply(0)
Saydur Rahman Jibon ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
খুব সাবলীল ভাষায় উপস্হাপন করার জন্য ধন্যবাদ,যা আপনি বরাবরই করেন।
Total Reply(0)
Md Milad ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
শুধু ঘরে বসে থাকলে চলবে না সতেচন থাকা দরকার, আল্লাহর দরবারে মাফ চান নামাজ পড়ুন বেশি বেশি দুরুদ পড়ুন আল্লাহর সবাইকে সকল রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন, ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
Mohammad Alam ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ৮:৩৮ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সকলকে নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করার তৌফিক দিন। এ আল্লাহ এই করোনা নামক মহামারীর দুর্যোগ থেকে আমাদের হেফাজত করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন