শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রমজানের প্রস্তুতি যেভাবে নেব

মাওলানা আবদুল মালেক | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আসছে রমজান। রমাজানুল মোবারকের নাম আমাদের মন-মানসে এক নতুন অনুভূতি জাগ্রত করে। স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতার অনুভূতি। এই মাসটি একটি মহিমান্বিত মাস, যার ফযীলত ও মর্যাদা কোরআন মাজীদে উল্লেখ হয়েছে। এই মাস মুমিনের নব চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার মাস। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অন্বেষণে অগ্রণী হওয়ার মাস। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সা.) এই মাসে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হতেন। তাঁর সাহাবীগণকেও ইবাদত-বন্দেগিতে অগ্রসর হতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাই মুমিনের কাছে এই মাস আলাদা মহিমা ও তাৎপর্য নিয়ে আগমন করে। মুমিনের কর্তব্য, ইবাদত-বন্দেগিতে অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি চাল-চলন, আচার-আচরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি সবক্ষেত্রে একটি আদর্শিক ছাপ রাখার চেষ্টা করা।

রমাজানুল মোবারককে উপলক্ষ করে আমাদের সমাজে যদি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে সেটি হবে অতি সুখের ব্যাপার। ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয়াদি- সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ইভটিজিং, মাদকের ব্যবহার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়া উচিত। রমাজানুল মোবারকের ভাবমর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের প্রচারমাধ্যমগুলো যদি এইসব অনাচার নির্মূলে সংকল্পবদ্ধ হয় তাহলে সুফল আসবে বলে আশা করা যায়।

এই পবিত্র মাসের বিশেষ ফরয ইবাদত হচ্ছে সওম। ঈমানের পর যে চারটি বিষয়কে ইসলামের রোকন বলা হয়েছে সওম তার অন্যতম। কাজেই যার ওপর সওম ফরয এমন প্রত্যেকের কর্তব্য, যত্মের সাথে এই ফরয ইবাদতটি আদায় করা। ইসলামে ফরয ইবাদত-আমলের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি, এর মাধ্যমেই অর্জিত হয় আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নৈকট্য।

কাজেই নফল ইবাদত-আমলে কিছু ত্রুটি হলেও ফরয-ওয়াজিবে ত্রুটি হওয়া উচিত নয়; বরং গুরুত্বের সাথে তা পালন করা উচিত। একইসাথে কর্তা ব্যক্তিদের দায়িত্ব রোজাদার কর্মীর কাজের ভার কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করা। এটি যেমন এক রোযাদার বান্দার ওপর অনুগ্রহ তেমনি একটি ফরয ইবাদত আদায়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা। পাশাপাশি তা ফরয আদায়ে উৎসাহিত করারও একটি উপায়।

যারা রোজা রাখেন তাদের জন্যেও রয়েছে উন্নতির সুযোগ। কারণ পানাহার ও স্ত্রী-মিলন থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি রোজাদারের কর্তব্য, সব অন্যায়-অনাচার থেকেও বেঁচে থাকা। কট‚ক্তি ঝগড়া-বিবাদ ও অশোভন উচ্চারণ থেকেও বেঁচে থাকা। হাদিস শরীফে আছে, ‘যখন তোমাদের রোজার দিন আসে তখন তোমরা অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকবে। কেউ যদি ঝগড়া-বিবাদে প্রবৃত্ত হয় তাহলে বলবে, আমি রোজাদার।’ কাজেই রোজাদারের রোজার পূর্ণতা সাধনের জন্য সব ধরনের অন্যায়-অশোভন কাজ থেকে বিরত থাকাও কর্তব্য। বলা বাহুল্য, মুমিন যদি একমাস এভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখার চেষ্টা করে, ইনশাআল্লাহ তার স্বভাব-চরিত্রে, কথা ও কাজে পরিবর্তন সাধিত হবে। এভাবেই রোজা মানবজীবনে শুদ্ধি ও পরিশুদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে।

মাহে রমজান ঈমান ও ইহতিসাবের ক্ষেত্রে অগ্রসরতার মাস। ঈমান মানে বিশ্বাস, আর ইহতিসাবের মর্মার্থ প্রত্যাশা। এই মাসের সকল ইবাদত-আমলে ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও প্রত্যাশার প্রেরণা জাগরূক রাখা কর্তব্য। হাদিস শরীফে এ মাসের সিয়াম-কিয়ামে ঈমান ও ইহতিসাবের চেতনা জাগ্রত রাখার উৎসাহ দেয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও প্রত্যাশা নিয়ে রমজানের রোজা রাখে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও প্রত্যাশা নিয়ে রমজানের রাতে আল্লাহর ইবাদতে দাঁড়ায় তারও পেছনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

তাই রমজান মাস ঈমানী চেতনায় অগ্রগামী হওয়ার মাস। আল্লাহ তাআলা যা যা সংবাদ দিয়েছেন সকল সংবাদে দৃঢ় বিশ্বাস, যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার গভীর প্রত্যাশা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। এই বিশ্বাস ও প্রত্যাশাই আল্লাহর ইচ্ছায় মুমিনকে পরিচালিত করে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে। আমল ও ইবাদতকে করে তোলে সার্থক ও প্রাণবন্ত। অধিকারী করে দুনিয়া-আখেরাতের সৌভাগ্য ও প্রাপ্তির। এই একমাসের অনুশীলনের মাধ্যমে মুমিনের গোটা জীবনটি হয়ে উঠতে পারে ঈমান ও ইহতিসাবের জীবন; বিশ্বাস ও প্রত্যাশায় আলোকিত জীবন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Ataul Karim ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মুমিনের জীবনকে বদলে দেওয়ার যে মহাসুযোগ রমজান নিয়ে আসে তা যেন কিছুতেই হাতছাড়া না হয় সেজন্য প্রয়োজন প্রস্তুতি নেওয়ার।
Total Reply(0)
মেহেদী ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিজেদের আল্লাহর কাছে নিবেদন করতে রমজানের আগেই যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
পরিবারের সদস্যদের রমজানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে রোজার ফজিলতের হাদিস ও এর বিভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরে খাবারের টেবিলে বা অন্য কোনো সুযোগে প্রতিদিন কিছু সময় ঘরোয়া তালিম হতে পারে। এ ব্যাপারে পিতামাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। পরিবারে এমন একটি রুটিন করে নেওয়া প্রয়োজন যাতে কাজের কারণে ইবাদতে ব্যাঘাত না ঘটে, একটি মুহূর্তও নফল ইবাদত, তিলাওয়াত ও আল্লাহর জিকিরমুক্ত না হয়।
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
সামাজিক পরিমন্ডলে রমজানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রতিবেশী ও সমাজের লোকজন একে অন্যের সঙ্গে দেখা হলে রমজানের বিভিন্ন ফজিলত ও ইতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করে একে অন্যকে রোজার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা চাই।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৮ এএম says : 0
মহান আল্লাহ আমাদের ৩০টি রোজা ঠিকমত করার তৌফিক দিন। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন