শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

স্বাগত মাহে রমজান

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

কোরআন সুন্নাহর দাবি থেকে বোঝা যায়, রমজানকে স্বাগত জানাতে ও কাজে লাগাতে আমরা কমপক্ষে পাঁচটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে পারি। এক. পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। দুই. নিজেকে সারা বছরের অভ্যাস থেকে কিছুটা অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করা।

তিন. সবাইকে ক্ষমা করা, হিংসা-বিদ্বেষ রাগ শত্রুতা মনঃকষ্ট সব ভুলে গিয়ে নিজেকে হালকা করা। অন্যদেরও দায়মুক্ত করে দেয়া। চার. মানবতার প্রতীক হয়ে সবার জন্য ভালোবাসা বিলানো। আচরণগতভাবে সবাইকে ভালোবাসা, আদর্শিকভাবে মজবুত থেকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পূর্ণ উদার হওয়া। পাঁচ. মানবজনমের একমাত্র লক্ষ্য নিজের সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সন্তুষ্ট করা। যার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ।

রমজান এত বরকতময় হওয়ার কারণ, পবিত্র কোরআন এতে নাজিল হয়েছে। এসবই উম্মত লাভ করেছে মহানবী সা.-এর মাধ্যমে। অতএব, এ রমজানের স্বাগত জানানোর প্রথম ও প্রধান প্রস্তুতি হচ্ছে, নিখুঁত ঈমানদার হওয়া। ঈমান অর্থ, কুফর শিরক নিফাক ও সংশয়মুক্ত পবিত্র বিশ্বাস। যে বিশ্বাসের আওতায় অবশ্যই থাকবেন আল্লাহ, তার রাস‚লগণ, আসমানি কিতাবগুলো, ফেরেশতাগণ, পরকাল, ভালো ও মন্দ সকল ভাগ্য আল্লাহর হাতে আর মৃত্যুর পর পুনরুত্থান।

বোধ বিশ্বাসকে অবিশ্বাস থেকে, নাস্তিকতা থেকে, সংশয় থেকে পবিত্র করা। অন্তরকে হিংসা-বিদ্বেষ অহঙ্কার পরনিন্দা চোগলখোরী কৃপণতা নিকৃষ্ট চিন্তা ইত্যাদি থেকে পবিত্র করা। নিজের দেহ-মন পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগণ পারিবারিক সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক জনগণকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুস্থ সুরভিত করা। রমজানের এটাও প্রস্তুতি। কারণ, এযে মুমিনের ঈমানী বসন্তকাল। জান্নাতের সওগাত নিয়ে আসা খোদায়ি মওসুম।

এরপর আসে নিজের জীবনে জৈবিক সকল বৈধ অভ্যাস কিছু সময়ের জন্য পালনকর্তা আল্লাহর হুকুমে স্থগিত রাখা। অবৈধ কাজ বা গোনাহ থেকে পূর্ণরূপে দূরে থাকা। এতে মন-দেহ ও চেতনা পরিশুদ্ধ হয়। মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপযোগী হয়। বিরত থাকতে ধৈর্য ধরতে কষ্ট অনুভব করতে অভ্যস্ত হয়। আত্মনিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষিত হয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শরীরের কোটি কোটি কোষ নতুন জীবন লাভ করে। প্রতিটি দেহকণা সঞ্জীবিত হয়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও শারীরতন্ত্র পূর্ণরূপে নবজীবন লাভ করে।

আধ্যাত্মিক উপকারের তো কোনো সীমাই নেই। মানুষ রোজা রেখে ও রাতে নফল নামাজ পড়ে এমন হয় যেন সে সদ্য মাতৃ উদর থেকে ভ‚মিষ্ঠ হয়েছে। এরপর সবাইকে ক্ষমা করে মন থেকে সব দুঃখ-কষ্ট-বেদনা ও বিদ্বেষ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে মানুষ আল্লাহর ক্ষমা লাভের উপযুক্ত হতে পারে। নবী করিম সা. এক সাহাবীকে দেখিয়ে বলেছিলেন, এ লোকটি জান্নাতি। তখন যুবক এক সাহাবী কৌশলে একাধারে তিনদিন সেই সাহাবীর বাড়িতে মেহমান হয়ে রাত্রিযাপন করেন।

খেয়াল করেন, তিনি কত বেশি আমল করেন। তার ধারণা ছিল, তিনি হয়তো রাতভর নামাজে কাটান। কিন্তু তিনদিনই তিনি দেখতে পান, শ্রমজীবী এ সাহাবী এশার পর বিছানায় যান আবার ফজরে উঠেন। শেষদিন যুবক সাহাবী জিজ্ঞেস করেন, আপনি আসলে কি আমল করেন, বিশেষ কোনো আমলের কারণে আল্লাহর নবী আপনাকে দুনিয়ায় থাকতেই জান্নাতি খেতাব দিয়েছেন। আমি কিন্তু আপনার এ রহস্য জানার জন্যই নানা বাহানায় তিনরাত আপনার বাড়িতে কাটিয়েছি।

তখন ওই সাহাবী বললেন, আমি তোমাদের তুলনায় বেশি ইবাদত করি না। বিশেষ কোনো আমলে রাত অতিবাহিত করি না। হালাল খাই, ফরজ ইবাদত করি, ঘুম বিশ্রাম ইত্যাদিও করি। তবে, ইচ্ছা করে যে কাজটি করি সেটি হলো, যখন ঘুমাতে যাই, তখন সংশ্লিষ্ট সকল মানুষকে ক্ষমা করে বিছানায় যাই। আর যখন ভোরে ঘুম থেকে উঠি, তখনও আমার মনে কারও ব্যাপারে অসন্তুষ রাগ ঘৃণা-বিদ্বেষ ইত্যাদি পোষণ করি না। আমল বলতে এটিই আমি মন লাগিয়ে করি। মেহমান সাহাবী বললেন, এজন্যই আল্লাহর নবী আপনাকে জান্নাতি বলে ঘোষণা দিয়েছেন। রমজানে আমরা নিজেদের মনোভাব এমন উদার ও পরিচ্ছন্ন বানাতে চেষ্টা করব।

পাশাপাশি শুধু মানুষ কেন, সৃষ্টিজগতকেই আমরা ভালোবাসব। প্রাণী মাত্রই যেন আমাদের মনুষ্যত্বের ছোঁয়া লাভ করে। গাছপালা প্রকৃতি সবাই যেন আমাদের কাছ থেকে শান্তির স্পর্শ পায়। আত্মীয় পরিজন, বন্ধু, অভাবী, বিপদগ্রস্ত, এতিম, বিধবা, বঞ্চিত, অসহায়, বৃদ্ধ সবাই যেন আমাদের কল্যাণের অংশ পায়। সবার জন্য ভালোবাসা রমজানের শিক্ষা। যার প্রথম দশক রহমতের জন্য খাস। মাঝের দশক ক্ষমার জন্য। শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির।

আমরা যদি কোরআন সুন্নাহর দাবি অনুযায়ী রমজান কাটাতে পারি, তাহলে গোটা মাস ও বিশেষ করে শবে কদরের বরকতে আমাদের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। স্বাভাবিকভাবেই আমরা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবো। আর জান্নাতে প্রবেশ তো আল্লাহর সন্তুষ্টির বাহ্যিক নমুনা। আল্লাহ অনুধাবনের শক্তি দিন। উপলব্ধি করে বুঝে শুনে জীবনের এ রমজানটি সঠিকভাবে বরণ ও পূর্ণ মন সংযোগের সাথে পালনের তাওফিক দিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Raisa Akter Ruhi ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৭ এএম says : 0
রমজান মাস আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নিয়ামত । সাওয়াব অর্জন করার মৌসুম । এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে । রহমাত , বরকত ও নাজাতের মাস রমজান মাস । আল কুরআনে এসেছে : ‘‘ রমজান মাস , যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী রূপে ’’ [ সূরা : আল বাকারাহ : ১৮৫ ] রমজান মাসের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘‘ রমজান বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে । পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন । এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয় , বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো । দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয় । এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে , যা হাজার মাস থেকে উত্তম । যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল , সে বঞ্চিত হল ( মহা কল্যাণ হতে ) ’’ [ সুনান আত-তিরমিযি ৬৮৩ ]
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
করোনাভাইরাসে যখন বিশ্বের মানুষ বিপর্যস্ত, তখন মাহে রমজান আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে মহান আল্লাহর রহমতের সুযোগ হিসেবে।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এই পবিত্র মাসে আমরা আল্লাহর দরবারে করোনা মহামারীর কবল থেকে মানবজাতিকে রক্ষার আকুতি জানাব। আল্লাহ যাতে তাঁর রহমতের দ্বার খুলে দেন সে প্রত্যাশায় সিয়াম সাধনায় ব্রতী হব।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
রমজানের এই পবিত্র মাস ভোগবিলাস, অপচয় ও অসংযমের পথ থেকে মানুষকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়।
Total Reply(0)
মেহেদী ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য রচনাকারী আল কোরআন নাজিল হয়েছিল মহিমান্বিত এই মাসে। আত্মসংযমের মাধ্যমে বিশ্বাসীরা যাতে ইন্দ্রিয়, আত্মিক উভয় দিক থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সন্তুষ্টিবিধানে নিয়োজিত হয় সে উদ্দেশ্যে সব সুস্থ ও সাবালক নর-নারীর জন্য সিয়াম সাধনাকে অবশ্যপালনীয় ইবাদত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন