শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মানবজীবনে রোজার প্রভাব

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০২ এএম

রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওপর রোজা ফরজ করে দেয়ার মধ্যে অনেক উদ্দেশ্য ও বিপুল হিকমত নিহিত রয়েছে। এ সম্পর্কে নিম্নে কয়েকটি উদ্ধৃতি পেশ করা হলো।

ইমাম গাজ্জালী রহ. তার স্বভাবসুলভ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সিয়ামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘আখলাকে ইলাহী তথা ঐশ্বরিক গুণে মানুষকে ফেরেশতাদের অনুকরণের মাধ্যমে যতদূর সম্ভব নিজেকে প্রবৃত্তির গোলামি থেকে মুক্ত হওয়ার শিক্ষা দেয়। কেননা ফেরেশতারা সব চাহিদা থেকে সম্প‚র্ণ মুক্ত। আর মানুষের মর্যাদা পশুর চেয়েও ঊর্ধ্বে। কেননা, মানুষ জ্ঞানের আলো দ্বারা জৈবিক চাহিদা মোকাবেলা করতে সক্ষম। আর তার স্থান ফেরেশতাদের চেয়ে নিম্নস্তরের, যেহেতু কখনো কখনো তার ওপর জৈবিক চাহিদা বিজয় লাভ করে এবং তার ভেতরের পশুত্ব দমনে তাকে কঠোর সাধনা করতে হয়। মানুষ যখন পাশবিক ইচ্ছার সুতীব্র স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়, তখন সে নেমে যায় অধঃপতনের নিম্নতম স্থানে। তখন অরণ্যের পশু আর লোকালয়ের মানুষের মাঝে কোনো প্রভেদ থাকে না। আর যখন যে তার পাশবিকতা দমন করতে সক্ষম হয়, তখন তার স্থান নির্ধারিত হয় নূরের ফেরেশতাদের ওপরে। (ইহয়াউল উল‚ম : ১/২১২)।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. এ বিষয়ের ওপর আরো বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিয়ামের উদ্দেশ্য হলো, তার পাশবিক ইচ্ছা ও জৈবিক চাহিদাসমূহের মধ্যে সুস্থতা ও স্বাভাবিকতা প্রতিষ্ঠা করা। সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই মানুষ আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্জন করে; চিরন্তন জীবনের অনন্ত সফলতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করে। ক্ষুধা-পিপাসার কারণে জৈবিক ও পাশবিক ইচ্ছা মতে ভাটা পড়ে। পশুত্ব নিস্তেজ হয়ে যায়। মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয় এবং দারিদ্র্যপীড়িত অগণিত আদম সন্তানের অনাহারক্লিষ্ট মুখ তখন তার অন্তরে সহানুভূতির উদ্রেক করে। অন্তর বিগলিত হয় মহান রাব্বুল আলামীনের কৃতজ্ঞতায়।

সিয়াম শয়তানের সকল পথ রুদ্ধ করে দেয় এবং মানুষের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে হেফাজত করে দুনিয়া ও আখেরাত বিনষ্টকারী কাজ থেকে। বস্তুত এটি কাজ করে লাগামস্বরূপ। সিয়াম এমন এক মজবুত ঢাল, যা মানুষকে শয়তানের সকল আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করে। সিয়ামের আরো কিছু উপকারিতার আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, মানুষের শারীরিক ও আত্মিক শক্তি হেফাজত করার ক্ষেত্রে সিয়াম অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ক্ষতিকর উপসর্গ থেকে মানুষকে সে রক্ষা করে। পাশবিক চাহিদার প্রাবল্য থেকে মুক্তি দেয়। দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্য সিয়াম যেমন উপকারী, তদ্রুপ পবিত্র জীবন যাপনের পক্ষেও তা খুব সহায়ক। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। সন্দেহ নেই যে, তোমরা মুত্তাকি হতে পারবে। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)।

আল্লাহর পেয়ারা হাবিব ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনের জন্য সিয়াম হচ্ছে ঢালস্বরূপ।’ এ জন্য আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বিবাহে অপারগ ব্যক্তিদের সিয়ামের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মোট কথা, সিয়ামের হিকমত ও উপকারিতা জ্ঞান-বুদ্ধি ও যুক্তির কষ্টিপাথরে প্রমাণিত এবং সর্বজনস্বীকৃত সত্য। আল্লাহপাক বান্দার কল্যাণের জন্যই শুধু নিজ দয়া ও রহমত গুণে আমাদের ওপর সিয়াম তথা রোজা ফরজ করেছেন।’ (যাদুল মা’আদ : ৭/১৬৮)।

সিয়ামের তাৎপর্য সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. আরো লিখেছেন, ‘কলবের ইসলাহ ও চরিত্র সংশোধন নির্ভর করে সকল মনোযোগ আল্লাহর দিকে কেন্দ্রীভ‚ত করার ওপর। তাওয়াজ্জুহ ইলাল্লাহ বা আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ মানুষের অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয়। পক্ষান্তরে পানাহারের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি, অযথা গল্প-গুজব ও সং¯্রব তা বিনষ্ট করে। ফলে আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মানুষের সৎ পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গোমরাহিতে লিপ্ত হয়।’ (আরকানে আরবাআ)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মোহাম্মদ মোশাররফ ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
জীবনের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য রমজানের এই প্রশিক্ষণ। বাকি ১১ মাস এ প্রশিক্ষণ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হিসেবে আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান পাওয়া যাবে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
পবিত্র রমজানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যে ব্যক্তি জীবনের গোনাহ মাফ করাতে ব্যর্থ হয়েছে তার মতো দুর্ভাগা ব্যক্তি আর কেউ নেই। এ কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি নিজেকে জাহান্নামের আগুনবিমুক্ত হতে সক্ষম হলো না সে প্রকৃতপক্ষেই দুর্ভাগা।’
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
সীমাহীন যাত্রাপথের পাথেয় সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জন করে নেওয়াই বৃদ্ধিমানের কাজ। জ্ঞান ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ ন্যায়কল্যাণ এবং মঙ্গলময় জীবনযাপনেই আনন্দ পান, শান্তি পান। এ শান্তিই হোক সবার কামনার ধন।
Total Reply(0)
বারেক হোসাইন আপন ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
মুসলমানদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে রোজার ভূমিকা অপরিসীম। মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে পাপাচার, অশ্লীলতা, মিথ্যাচার, পরচর্চা, পরনিন্দা, ঝগড়া-বিবাদ, দ্বন্দ্ব-কলহসহ সব ধরনের মন্দ কাজ পরিহার করে আত্মশুদ্ধি লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে রোজাদার তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
মুসলিম পরিবারে মাহে রমজানের রোজার গুরুত্ব ও অপরিসীম প্রভাব রয়েছে। পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি—সবাই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। রোজাদার ব্যক্তি পরিবারের ছোট-বড় কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন না, সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন। মাহে রমজানে রোজা রেখে পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যদি অসদাচরণ করা হয় এবং তাদের প্রতি কটুবাক্য, জুলুম, নির্যাতন, গালিগালাজ করা হয়, তাহলে রোজাদারদের পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ, দ্বন্দ্ব-কলহ লেগে থাকতে পারে। এতে পরিবারে যেমন অশান্তি দেখা দিতে পারে, তেমনি আল্লাহ তাআলাও অসন্তুষ্ট হন।
Total Reply(0)
মোঃ আব্দুল কুদ্দুস ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ৯:৩১ এএম says : 0
রোজা বাদে অন্য সকল ইবাদতের সওয়াব ফেরেশতার মাধ্যমে দেওয়া হবে কিন্তু রোজাদারের সোয়াপ আল্লাহ নিজের হাতে দিবেন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন