শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দান ও সাদাকার সুবর্ণ সুযোগ

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

যেসব নৈতিক ও চারিত্রিক সৎকর্মের ওপর কোরআনে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে তন্মধ্যে বদান্যতা ও দানশীলতাও একটি। এর অর্থ, আল্লাহ তায়ালা কোনো বান্দাকে যে ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব, শক্তি-সামর্থ্য ও নেয়ামত-আশীর্বাদ দান করেছেন তদ্দারা শুধু সে একাই উপকৃত হবে না; বরং আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের জন্যও তা ব্যয় করবে এবং তাদেরও উপকার করবে। সুতরাং এর পরিধি যে অতি ব্যাপক এবং আল্লাহর বান্দাদের সেবা ও সাহায্য-সহায়তার সমস্ত দিকই যে এর আওতায় এসে যায়, সেকথা বলাই বাহুল্য। অন্য অভাবগ্রস্তের জন্য নিজের সম্পদ ব্যয় করা, নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি এবং জ্ঞান ও যোগ্যতার দ্বারা তাদের সেবা করা, নিজে কষ্ট সহ্য করে তাদের কাজ করে দেয়া এবং যে সাহায্যের সে মুখাপেক্ষী, নিজের উপায়-উপকরণের মাধ্যমে তা করে দেয়া এ সবকিছুই দান ও বদান্যতার শাখা-প্রশাখা বিশেষ।

কোরআন মাজীদ একে মৌলিক সৎকর্ম সাব্যস্তক্রমে বিভিন্ন শিরোনামে এর প্রতি তাকীদ দিয়েছে। সূরা বাকারার প্রথম রুক‚তে (যে অংশকে কোরআনের মুখবন্ধ বলাই যথার্থ) কোরআনী হেদায়াতে কল্যাণপ্রাপ্ত দলের মৌলিক যেসব গুণাবলী উল্লেখ করেছে, তার একটি হলো দান ও বদান্যতা। বলা হয়েছে, ‘আর আমি তাদের যা কিছু দান করেছি, তা থেকে তারা (আমার রাহে অন্যান্য বান্দাদের জন্যও) ব্যয় করে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৩)।

তাফসীরবিদগণ লিখেছেন, অর্থ-সম্পদ ও বিত্ত-বৈভব ছাড়াও আল্লাহ প্রদত্ত যে শক্তি-সামর্থ্য, শ্রম ও যোগ্যতা প্রভৃতি আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের উপকারার্থে ব্যয় করা হবে, তা সবই এর অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর এর সূরারই শেষ ভাগে এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি, তা থেকে (আমার রাহে, অন্যদের জন্যও) ব্যয় কর (কেয়ামতের সেদিন আসার পূর্বে, যাতে না থাকবে কোনো বেচা-কেনা, না কোনো বন্ধুর বন্ধুত্ব, নাই বা সেদিন কারও কোনো সুপারিশ কাজে লাগবে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫৪)।

এরই তিন রুকু পর এ সূরা বাকারাতেই আল্লাহর রাহে নিজের ধন-দৌলত, শক্তি-সামর্র্থ্য ব্যয় করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। এর উপকারিতা ও সওয়াব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আর যেসব উত্তম বস্তু-সামগ্রী (আল্লাহর বান্দাদের জন্য) তোমরা ব্যয় করবে, তার লাভ ও সওয়াব তোমাদের কাছেই পৌঁছাবে। বস্তুত তোমাদের ব্যয় আল্লাহর ওয়াস্তেই হওয়া উচিত। আর যেসব উত্তম বস্তু-সামগ্রীই তোমরা আল্লাহর রাহে ব্যয় করবে তোমরা তার পরিপূর্ণ বিনিময় প্রাপ্ত হবে; তোমাদের কোনো হকই বিনষ্ট করা হবে না।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৭২)।

দু’এক আয়াত পরে আবারো ইরশাদ হয়েছে, ‘যেসব বান্দা (আল্লাহর রাহে অন্যদের জন্য) নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে রাতের বেলা ও দিনের বেলা গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাদের জন্য তাদের পরওয়াদেগারের নিকট (জান্নাতে সেসব) প্রতিদান রয়েছে (যা সে দয়ালু পরওয়ারদেগারের মহিমার উপযোগী)। আর (তাদের অবস্থা হবে এই যে,) না তাদের কোনো ভয়-ভীতি থাকবে, না তারা চিন্তিত হবে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৭৪)।

আল্লাহর রাহে অন্যান্য বান্দাদের জন্য নিজেদের বস্তুসামগ্রী ব্যয়ে উৎসাহ দান প্রসঙ্গে কোরআন আরও একটি কথা বলেছে যে, এ পথে ব্যয়কারী যতই ব্যয় করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে এর শতগুণ তাকে দেয়া হবে। সুতরাং বলতে গেলে এ পথে ব্যয় করা অত্যন্ত লাভজনক এক ব্যবসা এবং এমন এক কৃষি, যা থেকে একেকটি বীজের পরিবর্তে কৃষক শতশত এমনকি হাজার দানা লাভ করবে।

করোনা মহামারী চলমান অবস্থাতেই আমাদের মাঝে রমজান মাস এসেছে। যে মাসে কোনো নেক আমল করলে অন্য যে কোনো মাসের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। আমাদের চারপাশের অভাবি ও বিপর্যস্ত মানুষের মাঝে দান করার এই সুবর্ণ সুযোগ কারোরই হাত ছাড়া করা উচিত নয়। তাই আসুন আমরা আমাদের দানের হাত প্রসারিত করি। হাসি ফুটে উঠুক অসহায় মানুষের চোখে। খাবার উঠুক অনাহারীর মুখে। নিজে ভালো থাকার পাশাপাশি সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Serina Khatun ৫ মে, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
খুব সুন্দর আহ্বান। করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে পুরো দেশে লকডাউন পরিস্থিতি চলছে। দোকানপাট, রাস্তাঘাট, গণপরিবহণ সব কিছুই বন্ধ। শ্রমিক, দিনমজুর ও গরীব মানুষের কাজের কোন উৎস চালু নেই। করোনা আতঙ্কে কার্যত: মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে রুজি-রোজগার করতে না পারায় খেটে খাওয়া দিন মজুররা খাদ্য সংকটে অসহায় অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই করোনায় সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিতে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে খাদ্যদ্রব্য, নগদ অর্থসহ জরুরি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা জরুরি বলে মনে করি।
Total Reply(0)
সাকা চৌধুরী ৫ মে, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
করোনা ভাইরাসের দুর্যোগপূর্ণ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত উদ্যোগে দুঃস্থ ও অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। হে আল্লাহ তুমি আমাদের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দাও। আমিন
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ৫ মে, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
স্থানীয় প্রশাসন, সমাজের বিত্তবান, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠন যার যার অবস্থানে থেকে সাধ্যমতো ত্রাণসামগ্রী নিয়ে অসহায়দের দুয়ারে এগিয়ে যেতে হবে। সহযোগিতা নিয়ে অসহায় মানবতার পাশে দাঁড়ানো মুসলমানদের জন্য ইমানি দায়িত্বও বটে। আল্লাহ আপনার আহ্বানকে কবুল করুন।
Total Reply(0)
নীল প্রজাপতি ৫ মে, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
ইনকিলাবকে ধন্যবাদ। আমি যতটুকু জানি, দুর্গত অসহায় মানবতার পাশে সহযোগিতার হাত নিয়ে দাঁড়ানো অনেক সওয়াবের কাজ। এটা অন্যতম একটি ইবাদতও বটে।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ৫ মে, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
আরেকটা বিষয়, সামনে রমজান, অনেকে তখন জাকাত দিবেন। তবে অগ্রিম যাকাত দেওয়া জায়েয আছে । তাই যাদের ওপর যাকাত ফরয, তারা করোনাভাইরাসের এই নাজুক পরিস্থিতিতে আগামী রমজানের যাকাত গরীব-দুঃখীদের মাঝে প্রদান করতে পারেন। বিপদগ্রস্ত ও অভাবীকে সাহায্য সহযোগিতা করলে মহান আল্লাহ তাআলা নিকট এর উত্তম বিনিময় পাওয়া যাবে, ইনশায়াল্লাহ।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ৫ মে, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
মাশা-আল্লাহ অনেক সুন্দর বক্তব্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই বিষয়টি বুঝার তৌফিক দান করুক এবং সবাইকে হেদায়েত নসিব করুক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন