আল্লাহর পথে দান ও ব্যয় করাকে আরবিতে ‘ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ’ বলে। আরবি ইনফাক শব্দটি ‘নাফক’ মূলধাতু হতে উৎপন্ন হয়। আরবি নাফক শব্দের অর্থ সুড়ঙ্গ। যার উভয় মুখ খোলা। অর্থাৎ যার একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দিক দিয়ে বের হওয়া যায়। এই পৃথিবীতে মুসলমানদের জান, মাল সম্পদ পুঞ্জিভ‚ত ও স্ত‚পিকৃত হয়ে থাকার জন্য নয়। বরং একদিক থেকে আয় হবে, অন্য দিক দিয়ে তা ব্যয় হতে থাকবে।
আল কোরআনে গরিবদের দান-খয়রাতের প্রতি তাকিদ প্রদান করা হয়েছে। অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলে থাকেন আল্লাহর রাস্তায় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করা আবশ্যক। এই কথাটির সহজতর বিশ্লেষণ হবে এই যে, মুমিন মুসলমানগণ যখন সর্বাগ্রে মাল দৌলত ও সহায় সম্পদের মায়া-মহব্বত ত্যাগ করতে সমর্থ হবে, কেবল তখনই তারা আল্লাহর পথে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারবে।
বস্তুত, মুমিন মুসলমানগণের উচিত কঠিন মসিবতের দিন আসার পূর্বেই আল্লাহর পথে ব্যয় করা। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, আমি তোমাদের যে রিজক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করো সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোনো ক্রয়-বিক্রয়, না কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ। আর অবিশ্বাসী কাফিররাই জালিম ও সীমালঙ্ঘনকারী।’ (স‚রা বাকারাহ : আয়াত ২৫৪)। বাস্তব জীবনে সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা পাশাপাশি অবস্থান করে।
এ জন্য উভয় অবস্থায়ই দানের হস্তকে স¤প্রসারিত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। অবশ্যই আল্লাহপাক সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৩৪)।
নিজের যা প্রিয়বস্তু তা দান করাই শ্রেয়। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কখনো পুণ্য অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না ব্যয় করবে তা হতে যা তোমরা ভালোবাস। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৯২)। আসলে দান একটি শস্যবীজ দানার মতো।
এ বিশেষত্বটি আল কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজ দানার মতো, যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করল, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশত দানা, অবশ্যই আল্লাহপাক যাকে চান তার জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহপাক প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬১)।
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, উহুদ পরিমাণ স্বর্ণও যদি আমার নিকট থাকে তাহলে তিন রাত অতিবাহিত হওয়ার পরও তার সামান্য কিছু আমার অবশিষ্ট থাকুক, তা আমি পছন্দ করি না। তবে হ্যাঁ, দেনা পরিশোধের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকু রেখে বাকিটুকু আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেবে।’ (সহীহ বুখারী : ৮/৬৪৪৫)।
মোট কথা, দান না করা নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার শামিল। মহান রাব্বুল আলামীন সতর্ক করে আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় দান করো এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা সৎকর্ম করো। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৯৫)।
তবে, পরিবার-পরিজনদের জন্য খরচ করাটাও দানতুল্য। হযরত সাওবান রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সর্বোত্তম দান হলো ওই দিনার, যা নিজের সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজনদের জন্য ব্যয় করা হয়। আর সে দিনারও উত্তম, যে দিনার জিহাদের উদ্দেশ্যে প্রতিপালিত পশুর জন্য ব্যয় করা হয়। আর সে দিনারও উত্তম, যে দিনার জিহাদে অশংগ্রহণকারী স্বীয় সঙ্গী-সাথীগণের জন্য খরচ করে থাকে। (সহীহ মুসলিম : ২/৯৯৪)।
আর আল্লাহর পথে দান করলে তিনি তার প্রতিদান প্রদান করেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহপাক বলেন, হে আদম সন্তান, তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাকে দান করব।’ (সহীহ বুখারী : ৭/৫৩৫২)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন