মাগফিরাত বা ক্ষমার দশক শেষ হওয়ার আগেই রোজাদারকে হিসাব করে দেখতে হবে তার রোজা যথার্থভাবে পালিত হয়েছে কি না এবং একজন রোজাদার হিসেবে মাহে রমজানের প্রতি কতটুকু সম্মান প্রদর্শন করতে সে সক্ষম হয়েছে। কেননা পরবর্তী শেষ দশকটি রোজাদারের মুক্তির জন্য মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রমজানের হক আদায় করার দায়িত্ব রোজাদার যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হলেই শেষ দশকের পূর্ণ পাওনা হতে সে বঞ্চিত হবে না, যদি এই দশক ও রমজানের প্রতি সত্যিকারের মর্যাদা প্রদর্শন করতে সে সক্ষম হয়। রমজান শেষে স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই সরাসরি রোজাদারের পূর্ণ প্রাপ্য দান করবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
রোজাদার গতানুগতিক বা আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়মিত ইফতার ও সেহরির মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারে যে, এতদিন যাবত রোজা রেখে সে আল্লাহ তাআলার ঘোষিত রহমত, মাগফিরাত অর্জন করে নাজাতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করার বিষয় হচ্ছে, রোজাদার এই পবিত্র মাসের করণীয় কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করেছে কিনা এবং বর্জনীয় কাজগুলো হতে যথার্থভাবে বিরত হতে পেরেছে কি না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে:
(১) রোজাদারের ইফতার, সাহরি ও দান-সদকা, হালাল রুজি-উপার্জনের ছিল কি না। অবৈধ উপায়ে আয় করে তা রোজাতে ব্যবহার করা হয়েছে কি না। এই পর্যায়ে হিসাব করে দেখার বিষয়, রোজাদার চাকরিজীবী হলে তার চাকরির অর্থে কোনো অবৈধ আয় প্রবেশ করে কি না, যা দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ ইত্যাদি দ্বারা অর্জিত হয়েছে কি না। অথবা ব্যবসায়ী হলে সে কালোবাজারী, চোরাচালান, পাচার, প্রতারণা, ভেজাল, মজুদদারী, ওজনে কম দেয়া, মুনাফালোভী হয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খরিদদারকে ঠকানো ইত্যাদি হারাম প্রক্রিয়ায় অর্থ উপার্জন করেছে কি না। আরও নানা প্রকারে হারাম উপার্জন রোজাদারের মধ্যে প্রবেশ করেছে কি না।
(২)
(২) সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ইসলামের প্রধান রোকন হলেও রমজান মাসের রোজা পালনকারীর জন্য তা আরও অপরিহার্য। তাছাড়া তারাবীহ, কোরআন তেলাওয়াতসহ অন্যান্য নফল এবাদতে কী কী ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটেছে রোজাদারের তাও হিসাব করে দেখতে হবে।
(৩) মিথ্যা বলা ঘৃণ্য পাপ। হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা বলা ত্যাগ করতে পারেনি, তার রোজা রাখা আর না রাখাতে কোনো তফাৎ নেই, ভুখা থেকে তার কষ্ট করা ছাড়া আর কোনো পূণ্য হবে না। পক্ষান্তরে মিথ্যা বলার কারণে সে অধিক পাপের ভাগী হলো। এই মিথ্যা কত প্রকারের তার কোনো সীমাপরিসীমা নেই।
(৪) ভোগ-বিলাস ও যৌনক্ষুধা নিবারণে রোজাদার কতটুকু সংযত ছিল, রোজা পালনের এটি একটি প্রধান শর্ত, পানাহার হতে বিরত থাকার সাথে সাথে রোজাদারের জন্য এই নিষিদ্ধ কাজগুলো হতে বিরত থাকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
(৫) সকল প্রকারের অপরাধ, অন্যায়, অত্যাচার, মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ প্রভৃতি হতে রোজাদার কতটুকু বিরত রয়েছে। জালিয়াতি, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা, অশ্লীলতা, মদ-জুয়া ও কুরুচিপূর্ণ নাচ-গান প্রভৃতি হতে রোজাদার আত্মরক্ষা করতে পেরেছে কি না।
(৬) আনুষ্ঠানিকতার নামে অপচয় লৌকিকতা, অহঙ্কার-দাম্ভিকতা প্রদর্শন করা, অথচ আশপাশের দুঃখী-দরিদ্র, অসহায় ফকির-মিসকিন, অক্ষম-বিকলাঙ্গ প্রভৃতির সাহায্য-সহযোগিতা, সহানুভ‚তি প্রয়োজন থাকা সত্তে¡ও সে দিকে রোজাদারের করুণার দৃষ্টি পড়েছে কি না তাও ভেবে দেখার বিষয়। মানবতা প্রদর্শনের যে প্রশিক্ষণের জন্য রমজানের আগমন, রোজাদার তা কতটুকু অনুশীলন করেছে।
(৭) রমজান মাসে প্রকাশ্য পানাহার ও রোজার পরিপন্থী কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে রোজাদার এসবের বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা পালন করেছে কি না সে সম্পর্কে সে দায়িত্ব ও কর্তব্য সে কতটুকু পালন করেছে।
(৮) কোরআন শরীফে বলা হয়েছে যে, ‘তোমরা নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে দোজখের আগুন হতে রক্ষা করো।’ রমজানের ফরজ রোজা পালনে প্রত্যেক রোজাদারের উচিত তার পরিবারের অধীনস্থ সক্ষম সদস্যদের রোজা পালনে বাধ্য করা। এই দায়িত্ব রোজাদার কতটুকু পালন করছে।
(৯) অর্থশালী ধনী রোজাদার তার গরিব অসহায় আত্মীয়-স্বজনের প্রতি কোনো সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করেছে কি না, কিংবা বৃদ্ধ মাতা-পিতার প্রতি তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে কি না তাকে এসব বিষয় ভাবতে হবে।
(১০) গীবত বা পরনিন্দা একটি মারাত্মক পাপ। এই মহাপাপ হতে রোজাদার নিজেকে কতটুকু রক্ষা করতে পেরেছে তাও তাকে খতিয়ে দেখতে হবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা গীবত বা পরনিন্দাকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন এবং বহু হাদিসেও এর কঠোর নিন্দা রয়েছে। সকল পাপাচার থেকে মুক্ত হয়ে আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি বিশ্বের দুর্গত মানবতার প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শনের উত্তম সময় এবারের করোনা কবলিত মাহে রমজান। আল্লাহ এ মহাবিপদ হতে সকলকে রক্ষা করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন