শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভের সময় প্রসঙ্গে

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

মহান আল্লাহপাক সময়সীমার বহু ঊর্ধ্বে এবং তিনি কোনো সময়ের আবর্তে সীমাবদ্ধ নন। তিনি সময়ের বেড়াজাল হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র। কিন্তু এতদসত্তে¡ও তিনি কখনো বান্দাহদের নিকটবর্তী হয়ে যান। আবার কখনো বান্দাহদের আমল তার সকাশে পেশ করা হয়। আবার কখনো তিনি বান্দাহদের ঘটনা প্রবাহের মীমাংসা করেন। আবার কখনো নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করা হয়। যদিও ঐ সকল বিষয়াবলীর হাকীকত আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।
এতদ সম্পর্কিত দিক-নির্দেশনা কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্টরূপে দেখতে পাওয়া যায়। (ক) যথা: আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘তিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন তোমরা যেখানেই থাকনা কেন?’ (খ) ইরশাদ হয়েছে: ‘আমি তোমাদের শাহরগ হতেও নিকটে অবস্থান করছি।’ (গ) ‘তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাওনা কেন, তিনি সেখানেই উপস্থিত আছেন।’ (ঘ) ‘সিজদাহ কর এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কর।’ (ঙ) ‘তিনি দর্শনকারী তোমরা যা কিছু কর।’ এই আয়াতে কারীমাগুলোর আলোকে সুস্পষ্টই বোঝা যায় যে, সকল অবস্থায়ই বান্দাহ আল্লাহপাকের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং থাকবে। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।
আর পিয়ারানবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতগণকে দিক নির্দেশনা প্রদান করে বলেছেন: (ক)‘শেষরাতের তৃতীয়প্রহর বাকি থাকতে আমাদের প্রতিপালক পরওয়ারদিগার দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন।’ (খ) ‘নিঃসন্দেহে বান্দাহর আমলসমূহ আল্লাহপাকের সমীপে সোমবার দিন ও বৃহস্পতিবার দিন উপস্থাপন করা হয়।’ এছাড়াও শাবান মাসের পনের তারিখের রাত সম্পর্কে বলেছেন: (গ) ‘নিশ্চয়ই ঐ রাতে আল্লাহতায়ালা উঁকি দিয়ে দেখেন।’ অপর বর্ণনায় আছে, ‘ঐ রাতে আল্লাহপাক জমিনের আকাশে বা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন।’
মোটকথা, উপরোক্ত হাদিসসমূহের আলোকে একথা সহজেই উপলদ্ধি করা যায় যে, দ্বীন ইসলামের প্রয়োজনগুলো পরিপূরণের জন্য মহান আল্লাহপাকের নিকট এমন কতগুলো সময় রয়েছে, যেগুলোতে জমিনে বা পৃথিবীতে আল্লাহর রহমত, বরকত ও রূহানিয়াত প্রসার লাভ করে এবং তখন অভূতপূর্ব শক্তির প্রসার ঘটে। সুতরাং ইবাদত কবুল হওয়ার ও দোয়া কবুল হওয়ার এর চেয়ে উত্তম সময় আর কোনো সময়ই হতে পারে না। অতি অল্প প্রচেষ্টায় তথা ন্যূনতম প্রচেষ্টায় তখন বিশাল রহমত ও বরকতের দরজা খুলে যায়। মানুষের পশুর স্তর হতে ফিরিশতার স্তরে উপনীত হওয়ার জন্য সে সময়গুলো খুবই উপযোগী ও উপাদেয়।
আর মালাউল আলা বা ফিরিশতা জগত তথা ঊর্ধাকাশবাসীরা সে রূহানিয়াতের প্রসারের ও সে শক্তির সম্প্রসারের বিষয়টি আকাশের কোনো হিসাবের দ্বারা জানতে পারে না, বরং সেই মোক্ষম সময়ে তাদের অন্তরে এমন একটি আবেগের সৃষ্টি হয় যা দ্বারা তারা বুঝতে পারে যে, রহমত ও বরকত বর্ষণের সময় এসে গেছে। তখন তারা সে রূহানিয়াতের সাগরে অবগাহন করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে।
অনুরূপভাবে আম্বিয়ায়ে কেরাম ও বুজর্গানে ওজ্জামদের অন্তরে আল্লাহর পক্ষ হতে তার জ্ঞান সরবরাহ করা হয়। আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রের পরিবর্তনের বা বিবর্তনের মাধ্যমে নয়, বরং অন্তর দ্বারা তারা তা জেনে যান। তখন তারা ঐ সময়গুলোতে আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার পূর্ণ চেষ্টা করেন। সুতরাং তারা লোকদের নির্দেশ দেন ঐ সময়গুলোর হেফাজতের জন্য, এবং ঐ সময়গুলোতে আল্লাহর ইবাদতরত থাকার জন্য। যেন আল্লাহর রূহানিয়াত প্রকাশের রহমতের জোয়ার ধারা হতে বঞ্চিত না হয়।
জানা থাকা দরকার যে, রূহানিয়াত প্রকাশের সময় যা বছর ঘুরে আসার সাথে ঘুরে আসে, তাহলো, লাইলাতুম মুবারাকাতুন (শবেবারাআত); লাইলাতুল কাদ্রি (শবেকদর); আরাফার দিন; রামাজানুল মুবারক। এই সময়ে ইবাদতকারীগণ কোনো ক্রমেই রহমত ও বরকত হতে বঞ্চিত হন না। এ সময়ে আল্লাহর পিয়ারা বান্দাহগণ তার রহমত ও বরকত লাভে ধন্য হয়ে থাকেন।
আবার রূহানিয়াত প্রকাশের কিছু সময়, যা প্রতি সপ্তাহের মধ্যে ঘুরে ঘুরে আসে। তা একটি সামান্য স্বল্প সময়মাত্র। যে সময়ের মধ্যে দোয়াও ইবাদত কবুল হওয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। মানুষ যখন পরপারে বা আখেরাতে চলে যাবে, তখন সে সময়টিই আল্লাহ তার বান্দাহদের ওপর তাজাল্লী বর্ষণের এবং আল্লাহর বান্দাহদের নিকটবর্তী হওয়ার সময় হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন যে, সে সময়টি হবে জুময়ার দিন। কেননা, বিশাল বিশাল ঘটনাবলি এ জুমার দিনেই সংঘটিত হয়েছে। যেমন হযরত আদম (আ.)-এর জন্ম।
তবে, চতুষ্পদ জন্তু কখনো কখনো নিম্ন জগত হতে এ সময়ের জ্ঞান লাভ করে থাকে। তখন তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে ও ঘাবড়ে যায়।
তাছাড়া রূহানিয়াত প্রকাশের ঐ সময়, সে সময়টি দিনের মধ্যে ঘুরে ঘুরে আসে। কিন্তু এই রূহানিয়াত অপর রূহানিয়াত হতে কিছুটা কমজোর বা দুর্বল। যারা ঊর্ধ্ব জগত হতে জ্ঞানপ্রাপ্ত তারা একযোগে এই মত পোষণ করেন যে, সে সময়টি দিনের চারটি সময়। যথা: (ক) সূর্যোদয়ের সামান্য পূর্বে; (খ) সূর্য ঠিক মাথার উপর দন্ডায়মান হওয়ার সামান্য পর; (গ) সূর্যাস্তের পর; (ঘ) অর্ধ রাত হতে সেহেরীর সময় পর্যন্ত।
অতএব, এই সময়গুলোর সামান্য পূর্বে ও পরে আল্লাহপাকের রূহানিয়াত সম্প্রসারিত হয় ও বরকত প্রকাশ পায়। এজন্য প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত এই সময়গুলোতে রহমত ও বরকত লাভের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। এ পথেই রয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও মঙ্গল লাভের সুবর্ণ সুযোগ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
মরিয়ম বিবি ৯ মে, ২০২০, ১:২১ এএম says : 0
মানুষকে আল্লাহ তাআলা অগণিত অসংখ্য হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি মানুষ কোনোভাবেই বিপথগামী না হয়। পরকালীনর জিন্দেগিতে সহজেই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ৯ মে, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
আল্লাহ প্রতিদিন মানুষকে ১৪৪০ মিনিট সময় দিয়েছন জীবন-যাপনের জন্য। এই সময়ের মধ্য থেকে মাত্র ৬০ মিনিট সময় ব্যয় করলেই সহজেই আল্লাহর নৈকট্য সম্ভব। যা একেবারেই সহজ আমল। আর তা হচ্ছে নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে কোনোভাবেই ৬০ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা নয় বরং আরো কম সময়ের মধ্যেই তা আদায় সম্ভব। তাইতো নামাজকে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে ঈমানের পরেই স্থান দিয়েছেন। নামাজ মানুষকে যাবতীয় অন্ধকার থেকে রক্ষা করে সামগ্রিক কল্যাণের দিকে ধাবিত করে। নামাজে রয়েছে প্রশান্তি ও মুক্তি।
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৯ মে, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
ইখলাস হলো, যেকোনো কাজের মূলভিত্তি। মূলভিত্তি দুর্বল হলে যেমন বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে সহজেই, ঠিক তেমনই হবে আমদের কাজের পরিণতি সেটা যদি হয় ইখলাসবিহীন। তাই ইখলাসকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চাবিকাঠি বলা চলে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ৯ মে, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নেক আমল করাকে ইখলাস বলে। যে কোনো নেক আমল কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত ইখলাস। ইখলাসের বিপরীত হল রিয়া। মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে, সুনাম ও সুখ্যাতির উদ্দেশ্যে কোনো আমল করাকে রিয়া বলা হয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন