মাহে রমজান বছরের বাকি এগারো মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের বিশেষত্ব অনেক। এ মাসেই মানুষ ও জ্বিন জাতির মুক্তির সনদ কোরআন মাজীদ একত্রে লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে বা বাইতুল ইযযতে অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলে কারীম (সা.)-এর নিকট সর্বপ্রথম এ মাসেই ওহী অবতীর্ণ হয়। কোরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- (তরজমা) ‘রমজান মাসই হলো সে মাস যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
এ মাসে রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। হাদিস শরীফে এসেছে- ‘রমজান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়।’ (সহীহ মুসলিম : হাদিস ১০৭৯/২)। অন্য এক হাদিসে এ মাসের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রমজান মাসের শুভাগমন উপলক্ষে জান্নাতের দরজাসমুহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ (সহীহ বুখারী : হাদিস ১৮৯৯; সহীহ মুসলিম : হাদিস ১০৭৯/১)।
এ মাস জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভের মাস। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদত ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে মুক্তির পরওয়ানা লাভ করার এটিই সুবর্ণ সুযোগ। হাদিস শরীফে এসেছে- ‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ : হাদিস ২১৬৯৮)।
ব্যবসায়ী মহলের একটি বিশেষ মৌসুম থাকে যখন তাদের ব্যবসা হয় খুব জমজমাট ও লাভজনক। সে মৌসুমে বৎসরের অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আয় হয়। আখেরাতের ব্যবসায়ীদের জন্য আখেরাতের সওদা করার উত্তম মৌসুম হলো এই রমজান মাস। কেননা এ মাসে প্রতিটি আমলের অনেক গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন- ‘রমজানের ওমরা হজ্জ সমতুল্য।’ (জামে তিরমিযী : হাদিস ৯৩৯; সুনানে আবু দাউদ : হাদিস ১৯৮৬)।
অন্য এক বর্ণনায় (যা সনদের দিক থেকে দুর্বল) বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। (শুআবুল ঈমান : ৩/৩০৫-৩০৬)।
অর্থাৎ, এ মাসে নফল আদায় করলে অন্য মাসের ফরজের ন্যায় সওয়াব হয়। আর এ মাসের এক ফরজে অন্য মাসের ৭০ ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। এ তো হলো রোজা ছাড়া এ মাসের অন্যান্য আমলের সওয়াব। আর রোজার সওয়াব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা নিজেই ইরশাদ করেন- (তরজমা) ‘নিশ্চয় রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিবো।’ (সহীহ মুসলিম : হাদিস ১১৫১/১৬৫)।
রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস। তাই এমন মাস পেয়েও যে ব্যক্তি স্বীয় গুনাহ মাফ করাতে পারল না তার জন্য স্বয়ং জিবরাঈল আ. বদদোআ করেছেন এবং নবী করীম সা. রাহমাতুল্লিল আলামীন হয়েও আমীন বলে সমর্থন জানিয়েছেন। হাদিস শরীফে এসেছে- ‘নবী কারীম সা. মিম্বরে উঠে আমীন, আমীন, আমীন বললেন। তাঁকে বলা হলো, হে রাসূল! আপনি তো এরূপ করতেন না।
নবী সা. ইরশাদ করেন, জিবরাঈল আমাকে বললেন, ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমীন। অতঃপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমীন। জিবরাঈল আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার নিকট আমার নাম আলোচিত হলো অথচ সে আমার ওপর দুরূদ পড়ল না। আমি বললাম, আমীন। (আল আদাবুল মুফরাদ : ২২৫, হাদিস ৬৪৬; সহীহ ইবনে হিববান : হাদিস ৯০৮)।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রমজানের হক আদায় করার তাওফীক দান করুন এবং নবীজীর অভিসম্পাৎ থেকে রক্ষা করুন। আমীন!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন