শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রোজার প্রতিদান

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

প্রত্যেক নেক আমলের বিভিন্ন ফজিলত ও সওয়াব রয়েছে যা দ্বারা মহান রাব্বুল আলামীন আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি একেবারেই স্বতন্ত্র। কারণ রোজার বহুবিধ প্রতিদান ছাড়াও এ বিষয়ে একটি অতুলনীয় ঘোষণা রয়েছে। রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন-‘মানুষের প্রত্যেকটি আমলকে বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকি (সওয়াব) ১০ গুণ থেকে (ক্ষেত্র বিশেষে) ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : কিন্তু রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। কারণ রোজা আমার জন্য। সুতরাং তার প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব।’ (সহীহ বুখারী : হাদিস ১৮৯৪; সহীহ মুসলিম : হাদিস ১১৫১/১৬৪)।

এ হাদিসে দু’টি বিষয় প্রণিধানযোগ্য : ১. রোজা ছাড়া অন্যান্য সব আমলের সওয়াব বৃদ্ধির ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। তা হলো ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত। এটি সাধারণ নিয়ম। আল্লাহ তাআলা চাইলে বিশেষ ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি প্রদান করতে পারেন। তবে সাধারণত সব আমলের সওয়াব এ নীতির মাধ্যমেই নির্ণিত হয়। কিন্তু রোজার বিষয়টি স্বতন্ত্র। কারণ এর সওয়াবের নির্ধারিত কোনো সীমারেখা নেই; বরং আল্লাহ তাআলা নিজে এর সওয়াব প্রদানের ঘোষণা প্রদান করেছেন। এর পরিমাণ যে কত হবে তা একমাত্র তিনিই জানেন।

রোজার এত বড় ফজিলতের একটি বাহ্যিক কারণ এও হতে পারে যে, রোজা ধৈর্যের ফলস্বরূপ। আর ধৈর্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলার সুসংবাদ হলো-‘ধৈর্যধারণকারীগণই অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে।’ (সূরা যুমার : ১০)।

সকল ইবাদত আল্লাহর জন্য। রোজার বহুবিধ বিশেষত্বের কারণে শুধু তাকেই নিজের জন্য খাস করে নিয়েছেন এবং বলেছেন- ‘রোজা তো আমারই জন্য, তাই রোজার প্রতিদান তিনি নিজেই দান করবেন এবং বে-হিসাব দান করবেন বলে তিনি রোজাদারকে সুসংবাদ দান করেছেন। (লাতায়িফ : ১৬৮-১৭০)।

হাদিস শরীফে রোজাদারের জন্য বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার ও প্রতিদানের কথা বিবৃত হয়েছে। সেগুলোর কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো: ১. রোজা কেয়ামতের দিবস সুপারিশ করবে: হাদিস শরীফে এসেছে- ‘রোজা ও কোরআন মাজীদ কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে পূর্ণ বিরত রেখেছি। কাজেই তাকে ক্ষমা করে দিন এবং পুরস্কৃত করুন এবং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। কাজেই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কুবল করুন। অতঃপর তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : হাদীস ৬৫৮৯; তবারানী-মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৩/৫১৯)।

২. রোজা জাহান্নামের আগুনের ঢাল ও দুর্গ: হাদিস শরীফে এসেছে- ‘রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি ঢাল এবং দুর্গ।’ (মুসনাদে আহমদ : হাদিস ৮৯৭২)।
৩. রোজাদার জান্নাতের রাইয়ান নামক শাহী তোরণ দিয়ে প্রবেশ করবে : এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি শাহী তোরণ আছে যা দিয়ে একমাত্র রোজাদারগণই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সে তোরণ দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (‘আর যে ব্যক্তি সে রাইয়ান গেট দিয়ে প্রবেশ করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না।’ (সহীহ বুখারী ১/২৫৪; সহীহ মুসলিম : হাদিস ১১৫২)।

৪. রোজাদারের জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে: হাদিস শরীফে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানের রোজা রাখে, আল্লাহ পাক তার জীবনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সহীহ বুখারী : হাদিস ১৯০১)।

৫. রোজাদারের দুআ কবুল হয় : হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-‘তিন ব্যক্তির দুআ ফেরত দেয়া হয় না : রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের সময়ের দুআ, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দুআ ও মযলুমের দুআ। এ তিন ব্যক্তির দুআ আল্লাহ তাআলা মেঘমালার উপরে উঠিয়ে নেন। এবং এর জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। তখন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমার ইজ্জত ও মহাসম্মানের কসম! বিলম্বে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব।’ (সহীহ ইবনে হিববান : হাদিস ৩৪২৮)।

৬. রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ : হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-‘রোজাদার ব্যক্তির আনন্দ উপভোগের দুটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে। একটি ইফতারের সময়, অপরটি স্বীয় প্রভ‚র সাথে সাক্ষাতের সময়।’ (সহীহ বুখারী : হাদিস ১৯০৪; সহীহ মুসলিম : হাদিস ১১৫১/১৬৪)।

৭. রোজাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুঘ্রাণযুক্ত : রোজার কারণে মুখে যে দুর্গন্ধ হয় আল্লাহ তাআলা তারও মূল্যায়ন করেছেন কল্পনাতীতভাবে। অনাহারের কারণে সৃষ্ট দুর্গন্ধ তাঁর কাছে মিশকের চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ বলে জানিয়েছেন আর ধন্য করেছেন তাঁর প্রেমে মত্ত রোজাদারদের।

নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন- ‘নিশ্চয় রোজাদারে মুখের (পানাহার বর্জনজনিত) গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষা উত্তম।’ (সহীহ বুখারী হাদিস : ১৯০৪)।

এখানে উল্লেখ্য যে, বর্ণিত হাদিসে দুর্গন্ধ দ্বারা ওই গন্ধকেই বুঝানো হয়েছে যা পানাহার বর্জনের কারণে পেটের ভিতর থেকে উত্থিত হয়। দাত ও মুখ অপরিষ্কার রাখার কারণে যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় তা এখানে উদ্দেশ্য নয়। তাই রোজাদার ব্যক্তি অবশ্যই তার দাত ও মুখ পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
তোফাজ্জল হোসেন ১৮ মে, ২০২০, ১:৫৮ এএম says : 0
পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সব ধরনের অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা রোজাদারদের অপরিহার্য কর্তব্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোজার যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ১৮ মে, ২০২০, ১:৫৮ এএম says : 0
শুধু না খেয়ে থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজের নফস ও প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। সংযমের পরিচয়ে দিতে হবে সবক্ষেত্রে।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ১৮ মে, ২০২০, ১:৫৯ এএম says : 0
সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বোখারি : ১৭৯৭)।
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ১৮ মে, ২০২০, ২:০০ এএম says : 0
মাহে রমজানের রোজা গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের ওপর রমজান মাসে রোজা পালন ফরজ করে দিয়েছেন। রোজাদারদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত সওয়াব। রোজার বিনিময় স্বয়ং আল্লাহ দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
Total Reply(0)
শওকত আকবর ১৮ মে, ২০২০, ৮:৩০ এএম says : 0
জীবনে এই প্রথম কর্মহিন রোজা পালন করছি।প্রতি বছর রোজা পালনের সাথে ডেকোরেটরের বিভিন্ন কাজ করতে হতো ইফতার পার্টি ঈদগাহে জামাতের প্যান্ডেল ত্রীপল/ফরাস বিছানো বিয়েবাড়িতে গেট প্যান্ডেল ডাইস লাইটিং আরও কত কি? কিন্তু এ বছর কোন কাজের ঝামেলা নেই।এ যেন অন্য রকম রোজা পালন।কি ভাবে যে ২৪টা রোজা গেলো টেরই পেলামনা।ঈদের দিন ও কোন ঝামেলা নেই।কেউ ফোন করে বলবে না ত্রীপল বিছানো এখনো হয়নাই কেন? কলেজ পড়ুয়া ছেলেটার ঝামেলা থাকবেনা।শুধু আতংক আর শংঙ্খা থাকবে।তা হলো করোনা আর কি ভাবে জীবন যাপন করবো।আল্লাহ তুমিই ভরসা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন