সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

মাহে রমজান প্রায় শেষের দিকে। সমগ্র পৃথিবীর মানুষ আল্লাহকে খুশি করার জন্য রোজা রেখেছেন, রাখছেন। রোজা রেখেই মানুষ বুঝতে পারেন, আল্লাহ আমাদের কি নিয়ামত দিয়েছেন।

রোজা রেখেই আমরা বুঝতে পারি পানির মূল্য। উপলব্ধি করতে পারি খাদ্যের কদর। এ উপলব্ধির সত্যিকার স্ফুরণ ঘটে ইফতারকালে। তাই ইফতারের সময়টা শুকর ও কৃতজ্ঞতায় আনত হওয়ার সময়। এ সময় প্রাণখুলে শুকর আদায় করা চাই। ভক্তি-রসে স্নাতকণ্ঠে বলে ওঠা চাই, ‘হে আল্লাহ! তোমারই সব প্রশংসা। তোমাকেই জানাই সব কৃতজ্ঞতা। হে আল্লাহ! তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, তোমারই ওপর নির্ভর করেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করেছি। তোমার দেয়া নিয়ামতে ঘুচে গেছে সারা দিনের সব ক্লান্তি। নিবারণ হয়েছে ক্ষুধা-পিপাসা। দেহমনে ছেয়ে গেছে শান্তি ও প্রশান্তি। হে আল্লাহ! পিপাসা মিটে গেছে, শিরাগুলো সিঞ্চিত হয়েছে আর ইনশাআল্লাহ সওয়াব তো আছেই।’

দিনের বেলা পানাহার বর্জন করে ক্ষুধা-পিপাসার কষ্টভোগ ও সেই কষ্টভোগের মাধ্যমে জীবনের জন্য খাদ্য-পানীয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব, পরিশেষে ইফতার করে ক্ষুধা-পিপাসার কষ্ট নিবারণ ও তা নিবারণের মাধ্যমে খাদ্য-পানীয়ের মহিমা হৃদয়ঙ্গম- এ ধারাতেই রোজাদারের মন শুকরগোজারির অনুপ্রেরণা পায় এবং শুকরের ভাষা হৃদয়-মন ছাপিয়ে চোখে-মুখে বাঙময় হয়ে ওঠে।

টানা এক মাস এবং মাত্র এক মাস। মাসের শেষ দিকেই শরীর জবাব দিতে শুরু করে দেয়। তারপর আরো রোজা হলে বড় কষ্ট হতো। দয়াময় আল্লাহ সে কষ্ট হতে বান্দাকে মুক্তি দিয়েছেন। এমনকি মাসের ভেতরেও যদি কষ্ট সীমা ছাড়িয়ে যায় অর্থাৎ অসুস্থতা, বার্ধক্য বা অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে রোজা রাখা সম্ভব না হয় তবে রোজা রাখার ফজিলত থেকে বান্দা যাতে বঞ্চিত না হয়, সে সুযোগও রাখা হয়েছে। কাজা বা ফিদয়ার সে সুবিধাও তাঁর আরেক নিয়ামত।

যা যা থেকে বিরত থাকার দ্বারা রোজা হয় তা অতি বড় নিয়ামত। খাদ্য যে কত বড় নিয়ামত তা কে না বোঝে? বরং নিয়ামত বললে প্রথম নজরটাই খাদ্যের দিকে যায়, যেহেতু এর দ্বারা প্রাণ রক্ষা হয়। আর পানির অপর নামই তো জীবন। তৃতীয় জিনিস স্ত্রী নিবিড়তা হলো জীবনাগম ও জীবন বিস্তারের উপায়। সুতরাং এটাও অনেক বড় নিয়ামত।

কিন্তু এসব নিয়ামত সহজলভ্য ও অনায়াসভোগ্য হওয়ায় এর উপলব্ধি খুব জাগন্ত নয়। তাই কম মানুষই এর জন্য শুকর আদায় করে। আর করলেও শুকরের ভাষাগণ উচ্চারণকেই অধিকাংশ লোক যথেষ্ট মনে করে। ঠিক প্রাণ দিয়ে অনুভব করে না দয়াময়ের কী মূল্যবান দান সে ভোগ করে যাচ্ছে! বস্তুত রোজা সেই অনুভব সৃষ্টির অতি উত্তম ব্যবস্থা।

রোজা রাখার দ্বারাই উপলব্ধি করা যায় খাদ্য-পানি কত দরকারি জিনিস। পেটে ক্ষুধা, বুকে তৃষ্ণা, অথচ পানাহার দ্বারা তা নিবারণ করা যাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় এ কষ্ট বরদাশত করতে হচ্ছে আর ক্রমেই কষ্ট তীব্রতর হচ্ছে। অন্য সময় হলে তো ক্ষুৎপিপসা আঁচ করামাত্র তা নিবারণের চেষ্টা করা হতো, কিন্তু এ সময় প্রবৃত্তির যত চাহিদা হোক এবং শারীরিক যত কষ্টই হোক পানাহার বারণ। ফলে বান্দা চাহিদা দমন করে কষ্ট সয়েই যায়। এভাবেই সময় বয়ে যেতে থাকে।

পরিশেষে সূর্যাস্তকালে যখন ইফতারসামগ্রী নিয়ে বসা হয়, তখন দিনমানের দমিত সেই চাহিদার উচ্ছ¡সিত স্ফুরণে অকিঞ্চিতকর খাবারও অমৃতসম মনে হয়। তখন সামনে যা-ই থাকে, পরম সমাদরে তা গ্রহণ করা হয়। এক পেয়ালা পানিতে হৃদয়-মন জুড়িয়ে যায়। রুখা শিরা-উপশিরায় প্রাণরস সিঞ্চিত হয় আর অনাহারক্লিষ্ট শরীর শক্তি-সজীবতা ফিরে পায়। অকস্মাৎ খুলে যায় চেতনার দ্বার। অনুভব-উপলব্ধির উন্মেষে তখন বুঝে আসে পানির কদর আর খাদ্যের মূল্য।

এ ছাড়া যে জীবন বাঁচে না, এর সাময়িক অভাবেও যে দেহমন চলৎশক্তি হারায়, সে সত্য তখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। তা দেহকে সচল রাখা ও জীবনকে রক্ষা করার এই অমূল্য অবলম্বন আল্লাহরই তো দান! কত দয়াময় মহান আল্লাহ, যিনি আমাদের জীবন রক্ষার ও আমাদের দেহমনে শক্তি যোগানোর জন্য কত অফুরান নিয়ামু বিশ্ব চরাচরে ছড়িয়ে দিয়েছেন! হররোজ-হরদম আমরা কত সহজে-সাচ্ছন্দ্যে তা ভোগ করে যাচ্ছি! কতটা আনন্দ, কতটা তৃপ্তি, কতটা সুখ-সুধায় আপ্লুুত এ জীবন।

সুতরাং শুকর আল্লাহর! অশেষ শুকর তাঁর। শুকর এত সব নিয়ামত দানের জন্য। শুকর এ নিয়ামতের উপলব্ধি দানের জন্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Md Syed Alam ২১ মে, ২০২০, ২:০৬ এএম says : 0
মাহে রমজানে রোজা পালন বা সিয়াম সাধনাকে শারীরিক সুস্থতা অর্জনের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ ও আত্মোপলব্ধি অর্জনের জন্য ফরজ বা অবশ্যপালনীয় বিধান ইসলামের।
Total Reply(0)
Md Syed Alam ২১ মে, ২০২০, ২:০৭ এএম says : 0
আত্মিক, শারীরিক, মানসিক, সর্বোপরি সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিতকারী এমন কল্যাণপ্রদ পরিপালনীয় বিষয় আর নেই। সাহরি, ইফতার এবং তারাবি রোজার তিন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহরি খাওয়াকে মুস্তাহাব বা খুবই পছন্দনীয় কাজ বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। সাহরি খাওয়ায় নিশ্চয়ই বরকত রয়েছে।’
Total Reply(0)
H M Tamim Khan ২১ মে, ২০২০, ২:০৭ এএম says : 0
আল্লাহর নিয়ামত স্থায়িত্বের যে নিয়ম বা মূলনীতি তা হলো কোনো ব্যক্তি বা জাতিকে যে নিয়ামত দান করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা ফিরিয়ে নেওয়া হয় না, যে পর্যন্ত না নিজের বা নিজেদের অবস্থা ও কার্যকলাপকে পরিবর্তিত করে আল্লাহর আজাবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
Total Reply(0)
Umed Raja ২১ মে, ২০২০, ২:০৮ এএম says : 0
কোনো কোনো সময় আল্লাহ তার নিয়ামত এমন কোনো কোনো লোক বা সম্প্রদায়কে দান করেন, যে তার নিজের বা নিজেদের আমল বা কর্মের দ্বারা তার যোগ্য নয়, কিন্তু প্রদত্ত হওয়ার পর যদি সে নিজের আমল বা কর্মধারা সংশোধন করে কল্যাণের দিকে ফেরানোর পরিবর্তে মন্দ কাজের দিকে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে পড়ে, তখন প্রদত্ত নিয়ামত তার বা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
Total Reply(0)
Jahangir Alam ২১ মে, ২০২০, ২:০৮ এএম says : 0
এবারের সিয়াম সাধনায় সবার মধ্যে এ উপলব্ধি জাগ্রত হোক।
Total Reply(0)
Mohammad Sirajullah, M.D. ৩ জুন, ২০২০, ৪:৪৩ এএম says : 0
Whenever Ramadan comes I see lot of Articles appear in news media about siam and its biolo Biological benefit, besides the religious benefit. I can not have any thu-nything to say about its spiritual benefit. But i wonder if fasting is so beneficial why should not we fast during whole year except few da keep fasting during the whole year except few forbidden days. May we start practicing this instead of talking this.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন