আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ঈমানদার বান্দাহগণকে কায়মনে তার যিকির (স্মরণ) করার জন্য আদেশ করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা বেশি বেশি করে আল্লাহর যিকির (স্মরণ) কর। আর সকাল-সন্ধ্যা তার তসবীহ (প্রশংসা) পাঠ কর।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৪১-৪২)।
এই আয়াতে কারিমার অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে স্পষ্টতঃই বোঝা যায় যে, আল্লাহপাক আমাদের সাধারণভাবে সব সময়, সকল অবস্থায় তাঁর যিকির করতে আদেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ইবাদত সম্পন্ন করার পর আল্লাহর যিকির করার কথাও তিনি বলেছেন। (ক) ইরশাদ হয়েছে : ‘তোমরা যখন নামাজ পড়া শেষ করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকির (স্মরণ) করবে। (সূরা নিসা : আয়াত ১০৩)।
(খ) এছাড়া আল্লাহর যিকিরের (স্মরণের) জন্য তিনি নামাজ কায়েম করার ব্যবস্থা করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তোমরা আমার যিকিরের (স্মরণে) জন্য নামাজ প্রতিষ্ঠা করো।’ (সূরা ত্বাহা : আয়াত-১৪)।
(গ) হজ পালনের সময় তার যিকির বুলন্দ করার জন্য ও আল্লাহপাক নির্দেশ প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : ‘যখন আরাফাত থেকে তোমরা ফিরে আসবে তখন মাশআরে হারাম (মুযদালেফায়)-এর নিকট আল্লাহর যিকির (স্মরণ) করবে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৯৮)।
(ঘ) হজের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করার পরও আল্লাহপাক তার যিকির (স্মরণ) করার হুকুম দিয়েছেন। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : ‘আর যখন তোমরা হজের যাবতীয় অনুষ্ঠানাদি শেষ করে ফেলবে, তখন (অধিকহারে) আল্লাহর যিকির করবে, যেভাবে তোমাদের পিতৃ পুরুষদের কথা স্মরণ করতে তার চেয়েও বেশি পরিমাণে।’ (সূরা আল বাকরাহ : আয়াত-২০১)।
(ঙ) আল্লাহপাক চতুস্পদ জন্তুর দ্বারাও বিশ্বাসী বান্দাহদের জন্য হালাল রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। এই রিজিকের শুকরিয়া আদায়কল্পে তিনি বান্দাহদের তার যিকির (স্মরণ) করার আহ্বান জানিয়েছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর তারা যেন নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহপাক তাদেরকে চতুস্পদ জন্তুর মধ্যে থেকে যে সমস্ত রিজিক দিয়েছেন, এর জন্য আল্লাহর নাম যিকির (স্মরণ) করে।’ (সূরা হজ্জ : আয়াত ২৮)।
(চ) এছাড়াও মহান আল্লাহপাকের রহমত ও বরকত লাভের জন্য বেশ কিছু নির্ধারিত দিন রয়েছে। যেমন সোমবার দিন, বৃহস্পতিবার দিন, শুক্রবার দিন, তাশরিকের দিন, ঈদের দিন, রোজার দিন, ইত্যাদিতে আল্লাহর যিকির করার কথাও আল কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘আর তোমরা এই নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনগুলোতে আল্লাহর যিকির (স্মরণ) করো’। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২০৩।) পিয়ারানবী মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তাশরীকের দিনগুলো হচ্ছে পানাহার এবং আল্লাহর যিকিরের (স্মরণের) জন্য। (সহীহ মুসলিম)।
তাছাড়া মহান আল্লাহপাক যিকিরকারীদের প্রশংসা করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) প্রকৃতই তারা বুদ্ধিমান যারা আল্লাহর যিকির করে। (সূরা যুমার : আয়াত ৯)।
(খ) যারা আল্লাহ অভিমুখী, তারাই আল্লাহর যিকিরে, নিমগ্ন হয়। (সূরা মুমিন : আয়াত ১৩)। (গ) এমন কিছু মানুষ রয়েছে যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর যিকির হতে বিরত রাখতে পারে না। (সূরা নূর : আয়াত ৩৭)।
সুতরাং এ সকল আয়াতে যিকিরকারীদের প্রকৃত মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে এবং তারা প্রকৃতই আল্লাহপাকের প্রিয়ভাজন, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
আর যারা আল্লাহর যিকিরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে, অবজ্ঞা ও অবহেলা করবে, তাচ্ছিল্য সহকারে পরিহার করবে, তাদের জন্য রয়েছে নির্ধারিত শাস্তি ও দুর্ভোগ। আল কোরআনে মহান আল্লাহপাক তা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন, ইরশাদ হয়েছে : যে কেউ আমার যিকির হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবনযাত্রা হবে সঙ্কুচিত ও দুর্দশাগ্রস্ত, আর তাকে কেয়ামত দিবসে অন্ধ করে উঠানো হবে; সে বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার, কেন আমাকে অন্ধ করে হাশর ময়দানে উঠালেন? আমি তো দুনিয়াতে চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহপাক বলবেন, দুনিয়াতে আমার নির্দশনাবলি তোমার নিকট পৌঁছে ছিল। তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে, অনুরূপ আজ আমিও তোমাকে ভুলে গেছি। আর আমি এরূপ শাস্তিই দেই যে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলিতে বিশ্বাস করে না। বস্তুত : পরকালের শাস্তি খুবই কঠোর ও চিরস্থায়ী। (সূরা ত্বাহা : আয়াত ১২৪-১২৮)।
মহান রাব্বুল আলামীন যিকিরকারীদের পুরস্কৃত করার কথাও আল কোরআনে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব, আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৫২)।
এই আয়াতে কারীমার তাফসির করতে গিয়ে তাফসিরে কবীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহর কোনো বান্দাহ যদি স্বীয় অন্তরে মহব্বতের সাথে আল্লাহর নামের যিকির করে, তখন তার অন্তরে আল্লাহর প্রেম ও মুহব্বতের নূরের এক সুন্দর জ্যোতির বিকাশ ঘটে। এভাবে ক্রমশ : যিকির করলে যিকিরকারীর অন্তর আল্লাহর দেয়া নূরের আলোকে আলোকিত হয়ে যায় এবং পার্থিব লোভ-মোহ হতে অন্তর খালি হয়ে যায় এবং আল্লাহর দীদারের আশায় উদে¦ল হয়ে উঠে। প্রকৃতপক্ষে যে দিলের মধ্যে আল্লাহর মারেফাতের নূরের ঝলক নাই, তা মরুভূমির মতো উষর ও অনুর্বর। (তাফসিরে কবীর : ৪/৩৯২)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন