ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ। নামাজ ফরজ হয়েছে মেরাজের রাতে আল্লাহ পাকের আরশে। সে রাতে আল্লাহ পাক ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসার পথে হযরত মূসা আ.-এর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি ৫০ ওয়াক্তের চেয়ে কমিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দরবারে ফিরে যান। আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে দেন। আবারও দেখা হয় হযরত মূসা আ. এর সঙ্গে। তিনি আরও কমিয়ে আনতে বলেন।
এভাবে নয় বার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে গিয়েছেন আর প্রতিবারই পাঁচ ওয়াক্ত করে কমানো হয়। অবশেষে ৪৫ ওয়াক্ত কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ করা হয়। এরপর আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন, আমার কাছে যখন কোনো বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যায় তখন তা আর পরিবর্তন হয় না। অতএব এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিনিময়ে পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই সওয়াব প্রদান করা হবে। (-জামে তিরমিযী : ২২১)।
আমরা আজ নামাজের প্রতি বড়ই উদাসীন। ফরজ নামাজ ও জামাতের প্রতি আমাদের সীমাহীন উদাসীনতা। আর অন্যান্য সুন্নত ও নফলের অবস্থা তো আরও করুণ। হাদীস শরীফে নফল নামাযেজর যে সকল ফযীলত ও সওয়াবের কথা এসেছে তা আমাদের জানা আছে। তারপরও কেন নফলের প্রতি যত্মবান হই না। আমরা যদি এ নফল আদায় না করি, তা হলে কারা আদায় করবে? আমরা আমাদের আকাবির, আসলাফ ও পূর্বসূরি বুযুর্গদের জীবনী দেখি। তারা নামাজের প্রতি কতটা যত্মবান ছিলেন।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.
হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.। প্রসিদ্ধ ফকীহ ও মুহাদ্দিস। চার মাযহাবের অন্যতম ইমাম। দৈনিক ৩০০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। প্রায় শেষ বয়সে জালেম বাদশাহর জুলুমের শিকার হয়ে জেলখানায় বন্দি হন। জেলখানায় তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। চাবুকের আঘাতে রক্তাক্ত করা হতো। জেলখানার সে করুণ মুহূর্তেও দৈনিক ১৫০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন।
ইমাম আবু ইউসুফ রহ.
ইমাম আবু ইউসুফ রহ.। ইমাম আযম আবু হানীফা রহ.-এর প্রিয় শাগরিদ। হানাফী মাযহাবের অন্যতম ইমাম। প্রধান বিচারপতি ছিলেন। দৈনিক ২০০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। কোনো কোনো বর্ণনায় ১৫০ রাকাতের কথা বলা হয়েছে।
হযরত সাবেত আল-বুনানী রহ.
হযরত সাবেত আল-বুনানী রহ.। বিখ্যাত তাবেয়ী। হযরত আনাস রাযি. এর শাগরিদ। ইমাম বুখারী রহ. এ মহান তাবেয়ী থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর কাছে নামাজ অত্যন্ত প্রিয় ছিল। ইন্তেকালের পর লাশ কবরে রাখা হলো। কবরে লাশ রেখে কাঁচা ইট দিয়ে কবর বন্ধ করা হচ্ছিল। আমাদের দেশে বাঁশ দেয়া হয়। যিনি ইট রাখছিলেন তিনি সাবেত আল-বুনানী রহ. এর শাগরিদ আবু সিনান রহ.। হঠাৎ কবরের একদিকের ইট পড়ে গেল। ফাঁকা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল যে সাবেত আল-বুনানী নামাজে দন্ডায়মান। আবু সিনান রহ. অন্যদেরও এ দৃশ্য দেখালেন। তারা খুবই আশ্চর্য হলেন। দাফনকার্য পুরোপুরি শেষ না হতেই তিনি কবরে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন!
তারা বাড়ি গিয়ে সাবেত আল-বুনানী রহ.-এর এ ঘটনা শোনালেন। জানতে চাইলেন, তাঁর এমন কী আমল ছিল যার দরুন আল্লাহ তাআলা তাকে এ মর্যাদা দান করেছেন।
স্ত্রী জানালেন, তিনি ৪০ বছর যাবৎ নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করেছেন এবং তাহাজ্জুদের পর এ দুআ করেছেন, হে আল্লাহ, কবরে যদি কাউকে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হয়, তা হলে আমাকে নামাজের অনুমতি দিও। মনে হয়, আল্লাহ তাআলা তার দুআ কবুল করেছেন এবং তোমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন।
তো আমরা সকলেই নামাজের প্রতি যত্মবান হই। গুরুত্বসহকারে খুশু-খুজুর সঙ্গে নামাজ আদায় করি। নফল নামাজের প্রতিও গুরুত্বারোপ করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন