সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর অনুসারেই সবকিছু হয়

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২০, ১২:১১ এএম

একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ধাপে চলমান বিশ্ব করোনাভাইরাস নিয়ে এতখানি উদ্বিগ্ন ও উতলা হয়ে পড়েছে যে, পৃথিবীর গতি প্রকৃতি সব থমকে গেছে। গোটা পৃথিবীর মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। সর্বত্রই মরণ ছোবলের আতঙ্ক বিরাজ করছে। পৃথিবীর ২০৭টি দেশের মধ্যে করোনার মরণাঘাত দিনদিন বেড়েই চলেছে। এই চলা কোথায় গিয়ে থামবে, তা কেইবা বলতে পারে?

এত কিছুর পরও বিশ্বময় মুমিন-মুসলমানদের একটি কথা বিশ্বাস করতে হবে যে, এখন যা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যা হবে, তা আল্লাহর ইচ্ছায়ই হচ্ছে বা হবে। এটা মূলত আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরেরই বাস্তব প্রতিফলন মাত্র। ২০২০ সালে আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরে এমনটি হওয়ার কথা ছিল বলেই তা হচ্ছে। কেননা, তাকদীরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা মুমিন মুসলমানদের ওপর ফরজ।

তাকদীর শব্দটির মূল ধাতু হচ্ছে কদর। কদর অর্থাৎ আল্লাহপাকের সিদ্ধান্ত পরিমাণ অনুযায়ী ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি আল্লাহপাকের পক্ষ হতেই হয়। সুতরাং তাকদীরে কোনো পরিবর্তন হবার নয়। কাজেই আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও তাকদীরের ওপর রাজি খুশি থাকা, তাকদীরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা মুমিন মুসলমানদের ওপর ফরজ বা অপরিহার্য কর্তব্য বলে স্থিরীকৃত হয়েছে।

মুসলিম চিন্তাশীল বিশেষজ্ঞগণ উল্লেখ করেছেন যে, তাকদীর শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিমাণ করা, নির্ধারণ করা। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় তাকদীর বলা হয় যা কিছু অদ্যাবধি সংঘটিত হয়েছে, যা কিছু হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে এর সবকিছু সম্পর্কে আল্লাহপাক অবগত আছেন এবং তার অবগতি ও নির্ধারণ হিসেবেই সব কিছু হচ্ছে। মোদ্দাকথা এই যে, মাখলুকের স্তর, ধাপ, পর্যায়, শান ও মান অনুযায়ী ভালো-মন্দ, উত্তম-অধম, ইস্ট-অনিষ্ট, লাভ-ক্ষতি যা অস্তিত্ব লাভ করে, মাখলুককে যে স্থান-কাল, পরিবেশ-পরিমন্ডল পরিবেষ্টন করে এবং মাখলুকের ওপর আনন্দ-বেদনা, শান্তি-শাস্তি যা প্রয়োগ হয় এর সব কিছুর নির্ধারণই হলো তাকদীর। (শরহে ফিকহে আকবার-পৃষ্ঠা ১৩; লিসানুল আরব : খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৮৭; শরহুল মাকাসিদ : খন্ড-৩, পৃষ্ঠা ৮৬)।

এই নিরিখে স্পষ্টতই বলা যায় যে, মহান আল্লাহপাক যা মঞ্জুর ও অনুমোদন করেন তাই হয়। আর যা তার নিকট অনুমোদন হয় না, তা বাস্তবায়িত হয় না। এতদপ্রসঙ্গে সর্ব শক্তিমান আল্লাহ কোরআনুল কারীমে গোটা বিশ্বের সকল শ্রেণির মানুষকে সতর্ক করে ইরশাদ করেছেন।

(ক) আল্লাহপাক যা ইচ্ছা তাই করেন। (সূরা বুরুজ : আয়াত ১৬)। (খ) তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা ও পছন্দ করেন, তাই সৃষ্টি করেন। (সূরা আল কাসাস : আয়াত ৬৮)। (গ) আল্লাহপাকের ইচ্ছা তার ইলমের অনুগামী। সুতরাং আমাদের নিকট যা কিছু সম্ভব ও সৃষ্ট, তার কোনো কিছুই আল্লাহপাকের ইচ্ছা ও ইরাদা ছাড়া অস্তিত্ব লাভ করতে বা অস্তিত্বহীন হতে পারে না। (শরহে আকীদায়ে সিফারানিয়্যাহ : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৫৫-১৫৬)।

এই নিখিলবিশে^ ভালো-মন্দ, উপকারী-অপকারী সকল কিছু আল্লাহপাকের ইলম ও পরিমাণমতো হয়। ভালো-মন্দ কোনো কিছুই আল্লাহর ইলম ও পরিমাপের বাইরে নয়। এই বিশেষত্বটি কোরআনুল কারীমে বিস্তৃতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

(ক) আল্লাহপাক বলেন, আমি সবকিছু তাকদীর (পরিমাণমতো) সৃষ্টি করেছি। (সূরা আলকামার : আয়াত ৪৯)। (খ) আল্লাহপাক তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যা আমল করো তাও সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আসসাফফাত : আয়াত ৯৬)।

(গ) কদর অর্থাৎ আল্লাহপাকের সিদ্ধান্ত ও পরিমাণ অনুযায়ী ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি আল্লাহপাকের পক্ষ হতেই পরিসাধিত হয়। সুতরাং, আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরে কোনো পরিবর্তন হবার নয়। তাই আল্লাহপাকের সিদ্ধান্ত ও তাকদীরের ওপর রাজি-খুশি থাকা ওয়াজিব। মাখলুকের স্তর, শান অনুযায়ী লাভ-ক্ষতি, ভালো-মন্দ যা অস্তিত্ব লাভ করে এবং মাখলুককে যে স্থান-কাল যে পরিবেশ-পরিস্থিতি পরিবেষ্টন করে ও মাখলুকের ওপর সুখ-শান্তি, আযাব-গজব ও শাস্তি-স্বস্থি প্রয়োগ হয় এসব কিছুর নির্ধারণই হলো তাকদীর। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ১৩)।

সর্ব শক্তিমান আল্লাহতায়ালা এই বিশ^জগতের বৈচিত্র্যময় কারখানা সৃষ্টি করার পূর্বে আপন আদি জ্ঞান ও ইলমে তার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও চিত্র অঙ্কন করেছেন। শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সকল বস্তু বা বিষয়ের পরিমাণ, পরিমিতি, নির্ধারণ করেছেন। এই চিত্র তৈরি এবং পরিমাণ নির্ধারণকেই তাকদীর নামকরণ করা হয়েছে। আর সে অনুযায়ী বিশ^জগতের নির্মাণ ও সৃষ্টিকে বলা হয় কাযা। সুতরাং এই চিত্রঅঙ্কন ও তার বাস্তবায়নকেই কাযা ও কদর নামে অভিহিত করা হয়। আল কোরআনে এই বিশেষত্বটি আল্লাহপাক সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

(ক) ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহপাকের নির্দেশ ও সৃষ্টি নির্ধারিত ও পরিমাণমতো। (সূরা আল আহযাব : আয়াত-৩৮)। (খ) আল্লাহপাক যখন কোনো বিষয় বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা করেন, তখন বলেন ‘হও’ সাথে সাথে তা হয়ে যায়। (সূরা আল বাক্বারাহ : আয়াত ১১৭)। (গ) যিনি তোমাদের মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর নির্দিষ্ট কাল নির্ধারণ করেছেন। (সূরা আল আনয়াম : আয়াত ২)। (ঘ) মূলত তাকদীর হলো বান্দাহ থেকে যা সঙ্ঘটিত হয় তা’ আল্লাহপাকের অনাদি ইলমে নির্ধারিত। চাই তা শুভ হোক বা অশুভ; তিক্ত হোক বা মিষ্ট। আর তা আল্লাহপাকের সৃষ্টি এবং তার ইচ্ছাতেই বাস্তবতা লাভ করে। আল্লাহপাক যা ইচ্ছা করেন তা বাস্তবায়িত হয় এবং যা ইচ্ছা করেন না, তা বাস্তবায়িত হয় না। তবে, এতদপ্রসঙ্গে স্মরণ রাখা দরকার যে, কদর হলো ইজমালী হুকুম, আর কাযা হলো তাফফিলী হুকুম। (শারহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ৪১)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
দর্শন ই ইসলাম ২ জুন, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 1
আল্লাহু আকবার। সুবহানাল্লাহিল আজীম ওয়া বিহামদিহী।
Total Reply(0)
জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ২ জুন, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 1
সহিহ বাত হায়
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ২ জুন, ২০২০, ১:৫১ এএম says : 1
আল্লাহ রিজিকের মালিক। মানুষের ভালোমন্দ সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। সর্বশক্তিশান আল্লাহ মানুষসহ সৃষ্টিকুলের সবার জন্য তাদের কাজ নির্ধারণ করে রেখেছেন। মানুষের ভাগ্যলিপিও আল্লাহর দ্বারা পূর্বনির্ধারিত।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ২ জুন, ২০২০, ১:৫২ এএম says : 1
পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, ‘আমি প্রতিটি বস্তুকে পরিমিতভাবে সুনির্দিষ্ট পরিমাপে সৃষ্টি করেছি। সূরা ক্বামার-৪৯
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ২ জুন, ২০২০, ১:৫২ এএম says : 1
মহান আল্লাহ যেদিন কলম সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মাখলুকাত সৃষ্টি হবে, সবই লাওহে মাহফূজে লিপিবদ্ধ আছে। কারন, হাদিস অনুসারে আল্লাহ তাআ’লার প্রথম সৃষ্টি কলম। তিনি কলম সৃষ্টি করে বললেনঃ লিখ। কলম বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমি কি লিখব? আল্লাহ তাআ’লা বললেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে সব লিখে ফেল। কলম সে সময় কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু পৃথিবীর বুকে সংঘটিত হবে সব কিছুই লিখে ফেলল।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ২ জুন, ২০২০, ১:৫৩ এএম says : 1
তবে এমন বলা যাবে না যে, রিযক যেহেতু নির্ধারিত আছে, সুতরাং আমি এর উপকরণ অনুসন্ধান করব না। এটা বোকামীর পরিচয়। বুদ্ধিমানের পরিচয় হল রিযক এর জন্য এবং দ্বীন দুনিয়ার কল্যাণ অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালানো।
Total Reply(0)
হাসান মুনাব্বেহ সাআদ ২ জুন, ২০২০, ১:৫৪ এএম says : 1
আমরা আমাদের রিযক্ব নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকি। রিযক্ব হল খাবার-পানি, যা আল্লাহই আমাদের দেবেন। আমরা আমাদের ধনসম্পদ নিয়ে দুশ্চিন্তা করি। আমরা আগামীর চিন্তায় ব্যস্ত থাকি। রিযক্ব নিয়ে আমাদের মধ্যে ভীতি কাজ করে।রিযক্ব নিয়ে আমাদের মধ্যে অস্বাভাবিক চাঞ্চল্য কাজ করে। টাকা পয়সার বিষয় আসলেই আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। সবসময় ভাবছি আগামীতে আমরা কি করব, কিভাবে করব ? এটা নিয়েই আমরা ভীত- সন্ত্রস্ত , বিভ্রান্ত। আসুন তাহলে এই হাদীসটি শুনি। রাসূল (সাঃ) ইমাম মুসলিম বর্ণিত এক হাদিসে বলেন, “আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগেই আল্লাহ সৃষ্টিজগতের তাক্বদীর লিখে রেখেছেন”। আমি/আপনি যা কিছু পাবো/পাবেন তার সবকিছুই ইতিমধ্যে লেখা হয়ে গেছে, এখন থেকে ৫০ হাজার বছর আগে নয়, বরঞ্চ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে। আমি/আপনি কতটুকু পাবো/পাবেন সেই কারবার অনেক আগেই হয়ে গেছে, অনেক আগেই সেটা লেখা হয়ে গেছে। অথচ এরপরেও আমরা এই রিযক্ব নিয়ে কতই না উদ্বিগ্ন।
Total Reply(0)
Monzoor ২ জুন, ২০২০, ৩:২৭ এএম says : 1
তাকদীরের has 5 stages according to Quran need to be be clearly mentioned, if we dont elaborate clearly, people will sit back and depends on তাকদীরের do nothing this is the fact now in Islamic world
Total Reply(0)
মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম ৩ জুন, ২০২০, ২:৩৯ পিএম says : 0
Allah Karim.
Total Reply(0)
Akib Shaikh ১১ এপ্রিল, ২০২১, ৪:০৮ এএম says : 0
Allah ki agei thekei janen j amra jannat na Jahannamai jabo?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন