সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তাওহীদপন্থীরা কেন এত শক্তিশালী

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

তাওহীদ হচ্ছে ইসলামী জীবনবোধ ও জীবন দর্শনের মূলভিত্তি। মহান আল্লাহপাক তার প্রেরীত নবী-রাসূলদের মাধ্যমে মানবজাতির নিকট তার অস্তিত্বের স্বরূপ ও কার্য পদ্ধতি পেশ করেছেন এবং মানুষকে সত্য পথে চলার দিশা প্রদান করেছেন। মহান আল্লাহপাক দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন : (ক) বলো, তিনিই আল্লাহ, একক ও অদ্বিতীয়, আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তার মুখাপেক্ষী; তিনি কাউকে জন্ম দেননি, এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি; এবং তার সমতুল্য কেউই নেই। (সূরা ইখলাস : আয়াত ১-৪)।

(খ) তোমাদের প্রভু একক সত্তা, তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম দয়ালু, অতীব দয়াময়। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৬৩)। (গ) যদি আসমান ও যমীনে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ বা উপাস্য থাকত, তাহলে উভয়স্থানে অবশ্যই বিশৃঙ্খলা লেগে থাকতো। (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ২২)। (ঘ) যদি আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য থাকত, তাহলে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সৃষ্টি পৃথক করে নিত এবং একে অপরের ওপর আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা চালাত। (সূরা মুমিমুন: আয়াত ৯১)। (ঙ) তোমরা দু’জন উপাস্য গ্রহণ করো না, নিশ্চয়ই তিনি একমাত্র উপাস্য। (সূরা নাহল : আয়াত ৫১)।

বস্তুত : আল কোরআনের এসকল বর্ণনা থেকে মহান আল্লাহর একক ও অীদ্বতীয় অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। সাথে সাথে তার তাওহীদের সাক্ষ্য ও লাভ করা যায়। এই প্রত্যয় ও বিশ্বাসের দ্বারা স্পষ্টতঃই অনুমিত হয় যে, মহান আল্লাহপাক তার সত্তায় এবং গুণরাজিতে একক, অদ্বিতীয় ও অনুপম। গুণে, কর্মে, মর্যাদা ও শক্তিতে তথা সকল বিষয়েই তিনি অনন্য অতুলনীয় এবং অদ্বিতীয়।

এমন কোনো সত্তার অস্তিত্ব অবশ্যই নেই যদ্বারা তার সত্তা ও গুণাবলীর সাথে তুলনা করা যায়। তিনি সমস্ত শক্তি মঙ্গল ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস। তার নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্বে এবং তার একচ্ছত্র রাজ্যশক্তিতে কেউ অংশীদার নেই। তিনি মানবিক চিন্তা-চেতনা ও ধারণা হতে সম্পূর্ণ পবিত্র এবং বহু ঊর্ধ্বে। সুতরাং সসীম মানবীয় জ্ঞান দ্বারা তার অসীমত্বকে অনুমান করা ও উপলব্ধি করা মোটেই সম্ভব নয়।

তাওহীদপন্থিরা আরও বিশ্বাস করে যে, সকল মানুষ এক আল্লাহরই সৃষ্টি। তার সৃষ্টির মাঝে কোনোই পরিবর্তন নেই। তাই, মানুষ হিসেবে সকল মানুষই সমান। সুতরাং তাদের মধ্যে আশরাফ-আতরাফ, উঁচু-নীচু, বড়জাত-ছোটজাত, আকার-আকৃতি, ভাষাগত ও ভৌগোলিক পার্থক্যজনিত মর্যাদা বৈষম্যের কোনোই বালাই নেই। তাই এক মানুষ অপর মানুষের সাথে বন্ধুত্ব মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপন করে। বিশেষ করে মুমিনদের মধ্যে গড়ে উঠে ভ্রাতৃত্বের এক সুনিবিঢ় সম্পর্ক।

আল কোরআনে এই দিকনির্দেশনা এভাবে ফুটে উঠেছে : অবশ্যই সকল মুমিন ভাই ভাই। যার ফলে সমগ্র বিশ্বের মুমিনদের মধ্যে এক কেন্দ্রিভূত সম্মিলিত শক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটে যা অপ্রতিরোধ্য ও দুর্জয়। কারণ তাওহীদপন্থি মুমিনের চরিত্রে থাকে, আল্লাহ প্রেম, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার আনিন্দ্য সুন্দর র্ঝণাধারা। এভাবে যাবতীয় অনাচার-অন্যায় থেকে বিমুক্ত থাকার ফলে বিশ্বের বুকে তারা নির্ভয়ে অবস্থান করে। আর এসকল গুণ মুমিনের আত্মাকে চির উন্নত করে এবং তাঁর হৃদয়কে করে বিমল পুণ্যালোকে সমুদ্ভাসিত ও পরিপ্লুত।

তাওহীদে বিশ্বাসীরা কারো হক এবং আমানত নষ্ট করে না। তারা ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না। সদা-সর্বদাসত্য ও ন্যায়ের পথে থাকে অটল, অবিচল ও সুদৃঢ়। তারা প্রকৃতই সততা, সদাচরণ ও বিশ্বস্ততা দ্বারা মুমিন ও অমুসলিম বিশ্ববাসীর বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে যায়। একই সাথে তাওহীদে বিশ্বাসীরা কখনো ঘৃণিত ও অপমানিত, এমনকি বিজিত ও অন্য কোনও শক্তির হুকুমের তাবেদার হয় না। আল কোরআনে মহান রাব্বুল আলামীন এই বিশেষত্বটিই এভাবে ব্যক্ত করেছেন : ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না, তোমরা চিন্তিত হয়ো না, তোমরাই হবে বিজয়ী, যদি তোমরা মুমিন হও।’

এতে স্পষ্টতঃই প্রতীয়মান হয় যে, তাওহীদে বিশ্বাসীরা চিরবিজয়ী ও মর্যাদাবান নেতৃত্বের আসনে বরিত ও অভিনন্দিত। কারণ, ইসলাম তাদের ভেতরে ও বাহিরে যে অনুপম গুণের সমাবেশ ঘটিয়েছে, তাঁর মোকাবেলা করার সামর্থ্য মাখলুকাতের মধ্যে কারোও নেই। কারণ তাদের মধ্যে আরামপ্রিয়তা ইন্দ্রিয়-পরায়ণতা, বল্গাহীন লোভের পায়তারা হিংসা ও কুটিলতা কখনো দানা বাঁধতে পারে না। আর পারে না বলেই, তারা সৃষ্টজগতের সকল প্রাণী ও বস্তুর হক আদায়ে ও কল্যাণ সাধনে সর্বদা ব্যাপৃত থাকে। এজন্যই তাদের উন্নত শির একমাত্র আল্লা-ছাড়া আর কারও কাছে অবনত হয় না এবং তাদের মোনাজাতের হাত সর্বশক্তিমান মহান স্রষ্টার দুয়ার ছাড়া অন্য কারও প্রতি সম্প্রসারিত হয় না।

মোটকথা, যাদের অন্তরে আল্লাহ ছাড়া কারও ভয় নেই, যারা কোনো দান ও পুরস্কারের প্রত্যাশা কেবল মাত্র আল্লাহর কাছেই করে, যারা আল্লাহর দেয়া শক্তির ভয়ে সর্বদাই ভীত কম্পিত থাকে। তাদের নিশ্চিহ্ন করা দুনিয়ার কোনো শক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই তো মহা কবি ইকবাল উদাত্ত কণ্ঠে গেয়েছেন :‘তাওহীদ কি আমানত ছীনু মে হেয় হামারা, আছান নেহি মিটানা নাম ও নিশান হামারা-’ (তাওহীদের আমানত দ্বারা আমাদের অন্তর ভরপুর; তাই আমাদের নাম ও চিহ্ন মিটিয়ে দেয়া মোটেই সম্ভব নয়)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মোহাম্মদ মোশাররফ ৪ জুন, ২০২০, ২:১২ এএম says : 0
তাওহীদ মানে একত্ববাদ। ওয়াহিদ মানে এক। আহাদ মানে একক। আহাদ আর ওয়াহিদ হতে তাওহীদ। তাওহীদই হলো জান্নাতী ও জাহান্নামী হওয়ার এবং আল্লাহর রহমত পাওয়ার ও গজবে পরার মূল বিষয়।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ৪ জুন, ২০২০, ২:১৩ এএম says : 0
ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় এবং একক নিরংকুশ, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসেবে বিশ্বাস, গ্রহণ ও মান্য করার নাম হলো তাওহীদ। এটাই মুসলিমের শক্তির একমাত্র উৎস।
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৪ জুন, ২০২০, ২:১৩ এএম says : 0
যারা আল্লাহর সাথে অন্যজনকে বা অন্য কিছুকে যুক্ত অথবা সমান করে তারা তাওহীদ বিশ্বাসী বা তাওহীদবাদী হতে পারে না। তারা হবে শিরিককারী। তাই আল্লাহ তার পরিচয় দিয়ে বলেন, “হে রাসূল (স) আপনি সবাইকে বলে দিন, আল্লাহর কোন শরিক নেই। আল্লাহ এক, তিনি মুখাপেক্ষীহীন। তোমাদের ইলাহ একক ইলাহ। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তার সমকক্ষ কেউ নেই। যাহা ইচ্ছা তা তিনিই করতে পারেন। তাই তিনিই শুধু সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। তিনি ছাড়া আর কোন বিধানদাতা নেই। তিনিই রহমান, তিনিই রহীম। নিশ্চয়ই আল্লাহ চূড়ান্ত ক্ষমতার মালিক এবং প্রচুর রিজিকদাতা”
Total Reply(0)
চাদের আলো ৪ জুন, ২০২০, ২:১৪ এএম says : 0
তাওহীদভিত্তিক একক ক্ষমতার মালিক যিনি, তার পক্ষেই শুধু সম্ভব নিরপেক্ষভাবে শাসন করা। যার যার মর্যাদা ও অধিকার অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য দান করা। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে শুধু তিনিই বিচার ও ফয়সালা করতে পারেন। সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা দিয়ে ন্যায় নীতির ভিত্তিতে আইন ও বিধান রচনা করা শুধু তার পক্ষেই সম্ভব।
Total Reply(0)
সত্য বলবো ৪ জুন, ২০২০, ২:১৫ এএম says : 0
মহান আল্লাহ আমাদের তাওহীদের সুসিতল ছায়ায় আশ্রয় দান করুন আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন