বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সঙ্কট হলো করোনাভাইরাস যার উৎপত্তি নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন। ধর্মতাত্তি¡ক বিশ্লেষণে এটাকে মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তি মনে করা হলেও অনেকে এটাকে মানব সৃষ্ট ভাইরাস মনে করে। তবে এটা যাইহোক না কেন, এই দূর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দরকার সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা। শুধু নিজে বাঁচতে চাইলেই এ দূর্যোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। বরং করোনা পরবর্তীতে আমাদের সামাজিক যে সঙ্কট ও অস্থিরতা তৈরি হবে সেটা মোকাবেলা করার জন্য নিজেদের অবস্থান থেকে এখনই প্রস্তুতি নেয়া উচিত। দক্ষ ও খোদাভীরু বিশেষজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় বাজেটে এবার থেকে জাকাত সম্পর্কে পূর্ণ একটি দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। বাস্তব ক্ষেত্রেই জাকাতভিত্তিক অর্থনীতি ও বাজেটের পথে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হবে।
এমনিতেই এ দেশে সঙ্কটের কোনো শেষ নেই। চতুর্ম‚খী সঙ্কট মোকাবেলা করেও বিভিন্ন পেশার মানুষ এতদিন দিনাতিপাত করে আসছে। কিন্তু করোনায় দেশ আক্রান্ত হওয়ার পরে মানুষের খাবারের জন্য হাহাকার, খাতা-কলমে দেশের জিডিপির শতাংশের হিসেব আর মানুষের বাস্তব সক্ষমতার ফারাক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের। যাদের শ্রমের ওপর ভিত্তি করে এসব হিসেব-কিতেব, সেই প্রবাসীর রেমিটেন্স আর গার্মেন্ট’স ফ্যাক্টরী (কৃষিসহ অন্যগুলোও গুরুত্বপূর্ণ) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যা কল্পনাতীতভাবে আগামী দিনে দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিবে।
আগের বেকারের সাথে নতুন যুক্ত হওয়া বেকারের চাপ পড়বে সমাজে যা সামাজিক সঙ্কট ও অস্থিরতার কারণ হবে। ইতিমধ্যে কয়েক লাখ প্রবাসী কর্মজীবি দেশে ফিরেছেন। বিদেশি অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অনেকে চাকরিচ্যুত হচ্ছে ও হবে। তারা আবার বিদেশে যেয়ে স্ব-স্ব কর্মস্থলে কাজ করতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কয়েক লাখ মানুষ চাকরি করেন। অধিকাংশ বিদেশি ক্রেতারা তাদের অর্ডার বাতিল করেছে, আদৌ আর অর্ডার দিবে কি না তারও নিশ্চয়তা নেই। কেননা এই পণ্যের মূল ভোক্তা হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার মধ্যবিত্তরাই। তাদেরই ত্রাহি অবস্থা। এই অবস্থা চলতে থাকলে গার্মেন্টস সেক্টরও হুমকির মুখে পড়বে। সর্বোপরি দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের উদ্যোক্তারাও হুমকির মধ্যে আছে। বাংলাদেশের এই চাপ সহ্য করার সক্ষমতা কতটুকু আছে সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার। এই সঙ্কট রোধ করতে না পারলে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরম অস্থিরতা দেখা দিবে।
এজন্য নিজেদের অবস্থান ও সক্ষমতার আলোকে কাজ করা ও অন্যকে উৎসাহিত করা জরুরি। ধাবমান সামাজিক এই অস্থিরতারোধে যাকাত হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। এজন্য যারা যাকাত প্রদানে সক্ষম কিন্তু যাকাত দেননি, বিশেষ করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, চাকরিজীবী তাদেরকে লুঙ্গি-শাড়ী বিতরণের মতো অনুৎপাদনশীল খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় না করে প্রতিবেশি ও পরিচিত বেকার যুবকদের ক্ষুদ্র ব্যবসা বা উৎপাদনশীল কোনো কাজ শুরু করতে অর্থ প্রদান করা উচিত।
অনেক সম্পদশালীরা আছেন, যারা জানেন না কিভাবে অর্থ প্রদান ও সেই মোতাবেক উৎপাদনশীল খাতে যাকাতের টাকা কাজে লাগাবেন। তারা চাইলে বাংলাদেশের আলেমসমাজ থেকে ধারণা নিয়ে যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে পারেন। যাকাতের অর্থ দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি এবং যাকাত প্রাপ্তরা পরবর্তীতে যাকাত প্রদানকারী হয়েছে। এক সময়কার (মোটামুটি) হিসেব মতে দেশের সম্পদশালীরা ইসলামী বিধান মোতাবেক যাকাত প্রদান করলে বছরে ১৬.৫ হাজার কোটি টাকা (বর্তমানে আরো বেশি হবে) উত্তোলন সম্ভব, যা দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে।
এখন সিদ্ধান্ত যাকাতদাতাদের, তারা কী নিজেদের অর্থ দিয়ে দেশের সঙ্কটকালীন সময় বেকার জনগোষ্ঠীর সাবলম্বী হতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করবে, নাকি বছরের পর বছর ধরে চলমান যাকাত প্রদানের অস্বাভাবিক পদ্ধতি ও যুক্তির ব্যবহারে শাড়ী-লুঙ্গির পুরাতন রীতি চালু রাখবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন