হেকমত আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- বিশেষ জ্ঞান, প্রজ্ঞা, মণিষা, জ্ঞানের কথা ও পরিপূর্ণ জ্ঞান। হেকমত শব্দের ব্যবহারিক অর্থ হচ্ছে- যাবতীয় বিষয় বস্তুকে সঠিক জ্ঞান দ্বারা জানা, বুঝা ও অনুধাবন করা।
প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মাঝে পরিপূর্ণ হেকমতের ঝর্ণাধারা প্রবাহিত ছিল। যার বদৌলতে উম্মতে মুহাম্মদিয়ার একটি বিরাট অংশ হেকমতের পরশে নিজের প্রজ্ঞার শীর্ষদেশে সমাসীন হয়েছিল। বিশ্বময় এ জ্ঞানকে স¤প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছিল। হযরত ইব্রাহীম (আ.) মক্কার কাবা গৃহের প্রাচীর নির্মাণ কালে আল্লাহ পাকের সকাশে দোয়া করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, তাদের (পরবর্তী প্রজন্মের) মধ্য হতে তাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করুন। যিনি তাদের নিকট আপনার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করবেন। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১২৯)।
এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত নবী করিম (সা.) এর ওপর তিনটি দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন বলে ঘোষণা করেছেন। ১. আল্লাহর আয়াতসমূহ (কোরআন) আবৃত্তি করে মানুষকে শোনানো, ২. তাদেরকে এই কিতাবের এলেম ও হেকমত অর্থাৎ বিশেষ জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া এবং ৩. তাদেরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করা। আর একথাও সুবিদিত যে কোরআনুল কারীম তিলাওয়াত করার মাধ্যমে এবং আল কোরআনের এলেম হাসিলের মাধ্যমে ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অর্জনের মাধ্যমে নিরবিচ্ছন্ন শান্তি ও স্বস্তি লাভ করা যায়। আর হেকমত বা বিশেষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথ সুগম হয়ে উঠে।
এই সূরার পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত একই অর্থ ও মর্ম সম্বলিত বাণী নাযিল করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : যেমন আমি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করেছি। যিনি আমার আয়াত সমূহ তোমাদের নিকট আবৃত্তি করেন। তোমাদেরকে পবিত্র করেন। কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন। তোমরা যা জানতে না তা শিক্ষা দেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৫৯)।
এখানে না জানা বিষয় শিক্ষা দেয়ার কথাতে বিজ্ঞান ও হেকমতের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত উম্মতে মোহাম্মদিয়াকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইরশাদ করেছেন : তোমাদের প্রতি প্রদত্ত আল্লাহর নেয়ামতকে এবং কিতাব ও হিকমত যা তিনি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন, তা স্মরণ কর, যদ্বরা তিনি তোমাদেরকে উপদেশ প্রদান করেন এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে জ্ঞানময়। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৩১)।
এই হেকমত বা বিশেষ জ্ঞান আল্লাহ পাক হযরত দাউদ (আ.) কেও প্রদান করেছিলেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ তাকে (দাউদ আ. কে) কর্তৃত্ব এবং হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫১)।
আর হেকমতের মাধ্যমে যে কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভ করা যায়, তার উল্লেখ করে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন : তিনি যাকে ইচ্ছা হেকমত প্রদান করেন এবং যাকে হেকমত প্রদান করা হয়, তাকে প্রভ‚ত কল্যাণ দান করা হয়। এবং বোধ-শক্তি সম্পন্ন লোকেরাই শুধু শিক্ষা গ্রহণ করে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬৯)।
এই আয়াতে কারীমায় প্রভ‚ত কল্যাণ বলতে সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। এই একই দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সুস্পষ্ট করে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ পাক আপনার প্রতি কিতাব ও হেকমত নাযিল করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আপনার প্রতি আল্লাহ পাকের মহা অনুগ্রহ রয়েছে। (সূরা নিসা : আয়াত ১৩১)।
এখানে মহা অনুগ্রহের মাঝে সমৃদ্ধিলাভের বিষয়টিও অন্তভর্‚ক্ত আছে। কেননা, বর্তমান বিশ্বের সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি নজর করলে, সহজেই দেখা যায় যে, তারা হেকমত তথা জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও বিশেষ জ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রণীর শৈল শিখরে অধিষ্ঠিত আছে। মুসলিম জাহান যতদিন হেকমতের ছায়ায় অবস্থান করছিল, ততদিন সারা বিশ্বে তারাই ছিল শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন। সে সুদিন কখন ফিরে আসবে, তার প্রহর গুণেই আমাদের দিন গুজরান হচ্ছে। জানি না এর শেষ কোথায়?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন