শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অভিবাদনরীতি স্বয়ং আল্লাহ শিখিয়েছেন

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের নিজ নিজ অভিবাদনরীতির প্রচলন দেখা যায়। আদিতে অভিন্ন হলেও পরবর্তীতে এই রীতির মধ্যে নানা রকম ভিন্নতা ও প্রার্থক্য ঘটে। মানুষের পরস্পরের মধ্যে সখ্য, সৌজন্য, সম্প্রীতি, সহৃদয়তা প্রদর্শনের জন্য এই অভিবাদনরীতি অত্যন্ত কার্যকর। বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা একে অপরকে অভিবাদন জানায়, ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে। প্রত্যুত্তরে বলা হয়, ‘ওয়াআলাইকুম আসসালাম’। এটাই মুসলমানদের অভিবাদনরীতি। হিন্দুরা বলে ‘নমস্কার’। জবাবেও বলা হয়, ‘নমস্কার’। এই সঙ্গে ‘করজোড়’ করা হয় উভয় তরফে। পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘গুড মর্নিং’, ‘গুড ইভিনিং’, ‘গুড নাইট’ বলা হয়। জবাবেও এগুলোই বলা হয়। এইসঙ্গে করা হয় হ্যান্ডশেক বা করমর্দন। মুসলমানদের মধ্যে করমর্দনের প্রচলন থাকলেও বিশ্বব্যাপী করমর্দনের ব্যাপক প্রচলন হয়েছে মূলত পশ্চিমাদের দ্বারা। করমর্দন ছাড়া অভিবাদনের কথা প্রায় ভাবাই যায় না।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে অভিবাদনরীতিতে একটা বড় রকমের ধাক্কা লেগেছে। ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সঙ্গনিরোধী বা অস্পর্শ, অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে প্রতিপন্ন হওয়ায় মানুষ পরস্পরের স্পর্শ এড়িয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে। সঙ্গতকারণে করমর্দন ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে করমর্দনের স্থলে মুসলমানদের অভিবাদনরীতি অনুসৃত হচ্ছে বলে জানা গেছে। লোকেরা মুসলমানদের মতো সালামের কায়দায় সম্ভাষণ বিনিময় করছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, করোনা কারণে ভবিষ্যতে করমর্দন প্রথা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

মুসলমানদের অভিবাদনরীতি আসসালামু আলাইকুম-এর মধ্যে আছে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও শুভেচ্ছার প্রকাশ। একইসঙ্গে তা দোয়া ও প্রার্থনাও বটে। ‘তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’ এর চেয়ে উত্তম অভিবাদন আর কিছু হতে পারে না। এই অভিবাদনরীতি স্বয়ং আল্লাহপাক বাবা আদম (আ.)-কে শিখিয়েছেন। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে: যখন আল্লাহতায়ালা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন এবং তাতে রূহ প্রবেশ করালেন, তখন তিনি হাঁচি দিলেন এবং আল্লাহর অনুমোতিক্রমে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। তখন আল্লাহ বললেন, ‘ইয়ার হামুকুমুল্লাহ’। হে আদম, ফেরেশতাদের যে সম্প্রদায় উপবিষ্ট আছে, তুমি তাদের কাছে যাও এবং বল, ‘আসসালামু আলাইকুম’। অতএব, তিনি গেলেন এবং বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। ফেরেশতাগণ উত্তরে বললো, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। তারপর আদম (আ.) তার প্রভূর কাছে ফিরে আসলেন। আল্লাহ বললেন, নিশ্চয়ই এটা তোমার ও তোমার সন্তানদের এবং তাদের সন্তাদের অভিবাদন পদ্ধতি।

সেই থেকে এখন পর্যন্ত আদম (আ.) এর বংশধরদের একাংশের মধ্যে এই অভিবাদনরীতির প্রচলন রয়েছে। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এই অভিবাদনরীতি পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন, যার অনুসারী মুসলমানরা তা অনুসরণ করে। এই অভিবাদনের মূল কথা ‘শান্তি’। মানুষের জীবনে শান্তির চেয়ে বড় কিছু প্রত্যাশিত হতে পারে না। এই শান্তিদানের মালিক স্বয়ং আল্লাহ। তিনিও শান্তিকামনা করেন। মানুষও শান্তি চায়। ইসলাম অর্থও শান্তি। দুনিয়াতে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা ইসলামের লক্ষ্য। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তা অনুসরণ করলেই আসতে পারে শান্তি। ইসলামের অনুসারী মুসলমানদের অভিবাদনরীতি ও বাণীর মধ্যে শান্তির কামনা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। ইসলাম ও মুসলমানদের প্রকৃত লক্ষ্যের কথাই এর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, পরকালের জীবনেও আল্লাহপাকের অনুগ্রহভাজন এবং সফলতা লাভকারীদের অভিবাদন জানানো হবে ‘সালাম’ বলে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন: যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন করা হবে ‘সালাম’। তিনি তাদের জন্য প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন। (সুরা আহজাব: ৪৪)। পবিত্র কোরআনে তিনি আরও বলেছেন: (জান্নাতে) পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের বলা হবে ‘সালাম’। (সুরা ইয়াসিন: ৫৮)। জান্নাতের রক্ষীরা জান্নাতপ্রাপ্তদের স্বাগত জানাবেন একই অভিবাদন রীতিতে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করতো তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের কাছে উপনিত হবে তখন তার দরজা খুলে দেওয়া হবে। জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম’, তোমরা সুখী হও। আর স্থায়ীভাবে থাকার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করো। (সুরা জুমার: ৭৩)।

আল্লাহপাকের শেখানো অভিবাদনরীতি শ্বাশত, অবিনশ্বর, অপরিবর্তনীয়। তার চিরন্ততা প্রশ্নাতীত। করোনাকালে তা আরো একবার আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হলো। আলহামদুলিল্লাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মশিউর ইসলাম ১৫ জুন, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
সুন্দর এ পৃথিবীতে কত বিধান, কত আদর্শ, কত মতামত, কত নীতি, কত নিয়ম; যা মানুষের কল্যাণার্থে আবিস্কৃত হয়, আবার সময়ের বিবর্তনে সমাজ থেকে হারিয়েও যায়। কোন কোন বিধান যুগের সাথে অসংগতিপূর্ণ বলে পরিত্যাজ্য হয়। কোন কোন আদর্শ অপূর্ণাঙ্গ বলে পরিবর্তিত হয়। কোন কোন নিয়ম অগ্রহণযোগ্য বলে পরিত্যক্ত হয়। কোন কোন মতামত অসম্পূর্ণ বলে অগ্রাহ্য হয়। কিন্তু এ পৃথিবীর মহান সৃষ্টিকর্তা রাজাধিরাজ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে মনোনীত একমাত্র জীবন বিধান ইসলামের মহান আদর্শ, নিয়মনীতি সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট, সর্বশ্রেষ্ঠ ও শাশ্বত চিরন্তন। যা কখনো হারিয়ে যাবার নয়।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ১৫ জুন, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
ইসলাম সর্বযুগের সকল সমস্যার সমাধানে সক্ষম। স্বয়ংসম্পূর্ণ; কোন সংযোজন, বিয়োজন, সম্প্রসারণ, সংকোচন, পরিবর্তন, পরিমার্জন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। সার্বজনীন; ফলে ওল্ড ভার্সন যেমন নেই, আপডেট ভার্সনও নেই। এটাই ইসলামের মহান অলৌকিকতা ও শাশ্বত-চিরন্তন মহাসত্যের পরিচায়ক।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ১৫ জুন, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
ইসলামের বিধানে এক সুপ্ত সৌন্দর্র্য বিরাজমান, দূরদর্শী চোখ ও সুন্দর মন ছাড়া সেই ¯িœগ্ধতা অবগাহন করা যায় না। ইসলামের প্রত্যেকটি বিধানই কল্যাণ মিশ্রিত, সাম্য সম্বলিত। এক অপূর্ব সৌন্দর্য্যরে মহিমায় উদ্ভাসিত ও সম্প্রীতির আবহে উদ্বেলিত। সুন্দরের ধর্ম ইসলামের প্রতিটি বিধানই সৌন্দর্য্যরে পরিচায়ক।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৫ জুন, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
আবহমানকাল থেকে দুনিয়ার সব জাতির মধ্যে একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হলে শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রথা চালু রয়েছে। ইসলামে এক মুসলিম অপর মুসলিমের সাথে দেখা হলে সম্ভাষণ জানানোর যে রীতি প্রচলিত আছে তা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য্যরে প্রতীক। শুভেচ্ছা বিনিময়ের ক্ষেত্রে ইসলাম যে ভাষায় অভিবাদন জানানোর শিক্ষা দিয়ে থাকে তা সর্বোকৃষ্ট ও সর্বোত্তম রীতি।
Total Reply(0)
সত্য বলবো ১৫ জুন, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
অভিবাদনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর সূচনা হয় আমাদের আদি পিতা আদম (আ.) এর সৃষ্টির পর থেকেই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন