সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা ব্যতীত সুষ্ঠুভাবে কোনো কাজই সম্পন্ন করা যায় না, জাগতিক কাজকর্মের প্রতি লক্ষ করলে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
অনুরূপ আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী প্রতিপালনের জন্যও কতিপয় নিয়মপ্রণালী যেমন মেনে চলতে হয় তেমনি তাঁর নিকট মোনাজাত-দোয়া করার জন্যও বিশেষ বিশেষ নিয়ম কায়দা ও সময় রয়েছে। একজন প্রার্থনাকারীকে তার আশ্রয় নিতে হয়, তবেই উদ্দেশ্য সফল হওয়ার আশা করা যায়।
হজরত ইমাম তিরমিজীর হাদিসগ্রন্থ হতে এরূপ দোয়া সম্পর্কীয় কতিপয় হাদিসের অর্থ এখানে প্রদত্ত হলো : হজরত ফোজালা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, একবার হুজুর (সা.) মসজিদে তশরিফ রাখছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামাজ পড়তে আরম্ভ করল। নামাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে বলতে লাগল, ‘আল্লাহুমাগ্ফিরলি’ অর্থাৎ হে খোদা, আমাকে ক্ষমা করো। হুজুর (সা.) তা শুনে বললেন, ‘তুমি দোয়া প্রার্থনার সময় ত্বরান্বিত করেছ। যখন নামাজ শেষ করে বসবে, প্রথমে আল্লাহর হামদ (প্রশংসা) পাঠ করবে, অতঃপর দরুদ শরীফ পড়ে দোয়া করবে।’ হুজুর (সা.) কথা এখনও শেষ করেননি এমতাবস্থায় অপর এক ব্যক্তি এসে নামাজ পড়ে হামদ ও দরুদ পাঠ করলে হুজুর (সা.) তখন বললেন, ‘এখন মোনাজাত করো, তা আল্লাহপাক কবুল করবেন।’
হজরত নো’মান ইবনে বশির (রা.) হজরত রাসূলে করিম (সা.)-এর নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ বলেছেন, ‘আমার যেই বান্দা এই কামনা করে যে, আমি দুঃখ-কষ্ট ও বালা-মুছিবতের সময় তার দোয়া কবুল করব, তবে তাকে সুখ-শান্তি, শীত-গরমের সময়ও আমার নিকট দোয়া করতে হবে।’
হজরত নো’মান ইবনে বশির আরো রেওয়ায়েত করেন যে, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর দরবারে দোয়া-প্রার্থনা করা অপেক্ষা উত্তম ও প্রিয় আমল আর কিছুই হতে পারে না।’ হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) মহানবী (সা.)-এর নিকট হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, ‘হে ইবনে আদম! তুমি যদি আমায় স্মরণ করো এবং আমার বখশিশ লাভের আশা রাখ, আমি তোমাকে বখশিশ করতে থাকব, চাই তুমি যাই করো না কেন, আমি তার পরোয়া করি না।’
হজরত ওব্বাদা ইবনে ছামেত (রা.) বর্ণনা করেন যে, হজরত নবীকরিম (সা.) বলেছেন,‘সমগ্র দুনিয়ায় এমন কোনো মুসলমান নেই, যে আল্লাহর দরবারে দোয়া করে, অথচ তিনি তার দোয়া কবুল করেন না। সে যা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করে, তা প্রদান করা হয়। কিংবা প্রার্থনাকারীর ওপর আসন্ন কোনো বিপদ-আপদকে রোধ করে দেয়া হয়। কিন্তু শর্ত হচ্ছে এই যে, কোনো পাপকার্যে লিপ্ত হওয়ার বা আত্মীয়তা ছেদনের দোয়া করতে পারবে না।’ উপস্থিত লোকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি তা শ্রবণ করে বলে উঠল, ‘এখন হতে আমি আল্লাহর দরবারে অধিক পরিমাণে দোয়া করব।’ এতে হুজুর (সা.) বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমার দোয়া অপেক্ষাও অধিক।’ অর্থাৎ তুমি যত বেশি কিছু পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, তিনি তা প্রদান করতে ক্লান্তি বোধ করবেন না।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির দোয়া করার সৌভাগ্য হয়েছে বুঝবে, সে তার জন্য আল্লাহর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেছে। সকল দোয়ার মধ্যে আল্লাহতায়ালা তাঁর কাছে শান্তি কামনা করাকেই অধিক প্রিয় মনে করেন। সকল সময় দোয়া মানুষের উপকার সাধন করে থাকে। সুতরাং, হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাক।’
হজরত ছালমান (রা.) বর্ণনা করেন যে, হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহপাক দানশীল, দাতা এবং তাঁর সর্বময় ক্ষমতার দৃষ্টিতে লজ্জাও অধিক। তাই হে লোকসকল! যখন তোমরা আল্লাহর দরবারে দোয়া করবে, তখন দীর্ঘ দোয়া করো।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন