শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মুসলিম ইতিহাস মুছে ফেলা হয়

ইসলামের ইতিহাসে পর্তুগাল-৩

আল-জাজিরা | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০৩ এএম

১২৪৯ সালে পর্তুগালের রাজা তৃতীয় আফোনসো মরক্কোর সর্বশেষ মুসলিম দুর্গ ফারো দখল করেন। সেখানকার বেশিরভাগ মুসলমানকে হত্যা করা হয়, অনেকে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পালিয়ে যায় অথবা খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। তবে সংখ্যালঘু কিছু মুসলিমকে বিচ্ছিন্ন পাড়ায় থাকতে দেয়া হয়। ১৪৯৬ সালে রাজা ম্যানুয়েল প্রথম সমস্ত ইহুদি এবং মুসলমানকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশটিকে একচেটিয়াভাবে খ্রিস্টান দেশে পরিণত করেছিলেন।

কোন সঠিক রেকর্ড নেই, তবে অনুমান অনুসারে ইহুদিদের সংখ্যা ২০ হাজার থেকে ১ লাখের মধ্যে এবং মুসলিম স¤প্রদায়টি যথেষ্ট কম ছিল বলে মনে করা হয়। তাদের বহিষ্কার করার পর এই অঞ্চলের বিভিন্ন অতীত এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইহুদি ও মুসলমানদের উপস্থিতি প্রভাবিত করার প্রয়াসে সিনাগগ এবং মসজিদগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়, ক্যাথলিক গির্জার হাতে দেয়া হয় বা ব্যক্তিগত আবাসে পরিণত হয়।

ইহুদি সংখ্যালঘুদের বহিষ্কারের বিষয়ে পর্তুগিজ সরকার জনসাধারণের কাছে ক্ষমা চেয়েছে এবং ২০১৫ সালের একটি আইন অনুসারে স্বীকৃতি দিয়েছে যা বহিষ্কার হওয়া ইহুদিদের বংশধরদের পর্তুগিজ নাগরিকত্ব প্রদান করে। তবে ১৪৯৬ সালে একই হুকুমে বহিষ্কৃত মুসলমানদের প্রতি একই সৌজন্য দেখানো হয়নি। পুনর্বাসন আইনের খসড়া প্রণয়নকারী রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ হোসে রিবেইরো ই ক্যাস্ত্রো চলতি বছরের শুরুর দিকে আল-জাজিরাকে বলেছিলেন যে, ‘মুসলমানদের বিতাড়ন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার চেয়ে বিজয় এবং লড়াইয়ের সাথে বেশি জড়িত’।

দ্ব›েদ্বর অনুমিত পটভ‚মির কারণে রাজনীতিবিদরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, পর্তুগালের মুসলমানদের বহিষ্কারকে ইহুদিদের নির্যাতনের সাথে তুলনা করা যায় না, যা নিছক ঘৃণা ও গোঁড়ামির ভিত্তিতে ছিল। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের যখন তিনটি সহজ পছন্দ দেয়া হয়েছিল, খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া, পর্তুগাল ছেড়ে যাওয়া বা মৃত্যুদন্ডের মুখোমুখি হওয়া- তখন বেশিরভাগ মুসলিম উত্তর আফ্রিকাতে পালিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে তারা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে যান।

যদিও রাজা ম্যানুয়েল বহিষ্কারের প্রাথমিক আদেশকে জোর করে ধর্মান্তরের আদেশে পরিণত করেছিলেন বলে ইহুদিদের বেশিরভাগ জনগণকে রাজ্য ছেড়ে যেতে দেয়া হয়নি। কিছু ইহুদি শিশুকে তাদের পিতামাতার কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল এবং খ্রিস্টান পরিবার তাদের গ্রহণ করেছিল। বাকী ইহুদিদের জোর করে ব্যাপ্টিস্ট বানানো হয়েছিল। ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন, মুসলমানরা সম্ভবত ক্ষতির শিকার না হয়েই দেশ ছেড়ে চলে যান। কারণ রাজা মুসলিম দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিশোধের আশঙ্কা করছিলেন এবং ইহুদিদের এমন কোনও সুরক্ষা ছিল না।

যাদের জোরপ‚র্বক ধর্মান্তর করা হয়েছিল তাদের পর্তুগাল ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল কেবল ১৫০৬ সালের লিসবন গণহত্যার পরে, যখন ইহুদি থেকে ধর্মান্তরিত এক থেকে চার হাজার ‘নতুন খ্রিস্টান’কে হত্যা করা হয়। তাদের বেশিরভাগকেই পুড়িয়ে মারা হয়। অনেকে থেসালোনিকি, ইস্তাম্বুল এবং দুব্রভনিকের মতো শহরে প্রাণবন্ত ইহুদি স¤প্রদায় প্রতিষ্ঠা করে অটোমান সাম্রাজ্যে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ১৫৩৬ সালে পর্তুগিজ তদন্ত প্রতিষ্ঠার পরেও পর্তুগালে থাকা নতুন খ্রিস্টানরা নির্যাতিত হতে থাকে।

২০১৫ সালের পুনঃস্থাপিত আইনগুলোকে পর্তুগালের ইহুদি স¤প্রদায়ের ক্ষতি এবং তাদের উত্তরাধিকার সূচনার স্বীকৃতি দেয়ার একটি উপায় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
MD FORID UDDIN ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৩৭ এএম says : 0
পর্তুগাল মুসলিম সাথে এরকম করাটা উচিত হয়নি
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৮ জুন, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
বর্তমান পর্তুগালের বেশির ভাগ ভূমি পাঁচ শ বছরেরও বেশি সময় ইসলামী শাসনাধীন ছিল। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকান মুসলিম শাসকরা আধুনিক স্পেন ও পর্তুগালের বিরাট অংশ জয় করে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন, আরবিতে যাকে ‘আল-আন্দালুস’ বলা হতো।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ১৮ জুন, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
দক্ষিণ স্পেনে ইসলামী যুগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি রয়েছে। কর্ডোভা মসজিদ ও গ্রানাডার আল-হামরা প্রাসাদ ইসলামী স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। পর্তুগালেও ইসলামী শাসনামলের অনেক কীর্তি-স্থাপত্য টিকে আছে। পাঁচ শ বছরের দীর্ঘ ইসলামী শাসন পর্তুগিজ সমাজ ও ভাষায় গভীর ছাপ রেখে গেছে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১৮ জুন, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
পর্তুগালের বহু অঞ্চলে এখনো ইসলামী শাসনের প্রভাব টিকে আছে। পর্তুগালের ভাষা, কবিতা, পোশাক, সংগীত, স্থাপত্য, এমনকি শিক্ষা ও বিজ্ঞান চর্চায় ইসলামী শাসনের প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায়।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ১৮ জুন, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
পনেরো শতকে খ্রিস্টান শাসকদের হাতে আন্দালুসের মুসলিম শাসনের অবসান হয়। এই ইবেরিয়ান উপদ্বীপের মুসলিম ও ইহুদিরা দেশত্যাগে অথবা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে বাধ্য হয়। খ্রিস্টান শাসকরা আল-আন্দালুসের মুসলিম শাসকদের সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের ইতিহাস মুছে দিয়ে তাদের নিছক বহিরাগত হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে। কিন্তু মুসলিমরা মনে করে, শুধু ইতিহাস ও সংস্কৃতি নয়, পর্তুগালের রক্তের ধারায় ইসলাম মিশে আছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন