মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সৎকর্মের সুফল অসৎ কর্মের কুফল

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

সৎ উদ্দেশ্য ও সৎকর্ম হচ্ছে ব্যক্তি চরিত্রের দুই প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দিক। উদ্দেশ্য সৎ না হলে কোনো অবস্থায়ই কর্ম সৎ হতে পারে না। তাই মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সৎ উদ্দেশ্য বা নিয়ত ব্যতীত কোনো কর্মই গ্রহণযোগ্য নয়।’

সুতরাং লৌকিকতা প্রদর্শনের জন্য কেউ কোনো এবাদত বন্দেগি করলে তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না, এরূপ এবাদত পালনকারী আল্লাহর পুরস্কার নয়, তিরস্কারই লাভ করে থাকে। সৎকর্ম করা এবং অসৎ কর্ম হতে বিরত থাকা প্রত্যেকের সদিচ্ছা ও সদুদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে। আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষকে এই অধিকার ও স্বাধীনতা প্রদত্ত হয়েছে। পবিত্র হাদিস হতেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) ও হজরত জাবের (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের জন্য দায়ী, যে ইচ্ছা করলে সেসব লোকের পথ অনুসরণ করতে পারে, যাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়েছে। অথবা সে ঐ সকল পথ অনুসরণ করতে পারে যেগুলোর ওপর আল্লাহর অভিশাপ অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

এতে কোনো সন্দেহ নেই, যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হয় তাকে এর শাস্তি ভোগ করতে হবে এবং যে ব্যক্তি সঠিক ও সৎ পথের অনুসরণ করে সে তার প্রতিদান লাভ করবে। কেননা, আল্লাহতাআলা প্রত্যেকের উদ্দেশ্য ও কর্ম সম্পর্কে ওয়াকেফহাল, তিনিই তার প্রতিদান দেবেন।

আল্লাহ তাআলা যখন সকল বিষয়ে অবগত, তখন মিথ্যা, খোশামোদ-তোশামোদ, লৌকিকতা কিংবা মোনাফেকি প্রদর্শন করে নিজের অমঙ্গল সাধন না করাই ভালো, কেননা ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে এই যে, কেবল মোনাফেকি হতে বিরত থাকাটাই যথেষ্ট নয় বরং মোনাফেকদের সংস্রব এবং তাদের সাহায্য-সহযোগিতা হতেও দূরে থাকা আবশ্যক। কারণ মোনাফেকের মন আন্তরিকতা হতে বঞ্চিত এবং কপটতায় পরিপূর্ণ, অসৎ উদ্দেশ্য সাধনই হচ্ছে এদের কাম্য। যেখানে মোনাফেকের আগমন ঘটবে সেখানে সৎ মনোভাবাপন্ন লোকদের পক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করা কঠিন হয়ে পড়ে।

মোনাফেকদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, তারা নিজেদের অপকর্ম সৎ লোকদের স্কন্ধে চাপিয়ে দিতে বিশেষ পারদর্শী। এই কাজ অতি কৌশলেই তারা সম্পাদন করে থাকে এবং সঙ্গীরা তাদের প্রতারণার শিকারে পরিণত হয়ে নানা প্রকার দুষ্কর্ম করতে দ্বিধাবোধ করে না। মোনাফেকরা হজরত রাসূলে করিম (সা.)-এর আমলে এরূপ বহু ঘটনা ঘটিয়েছিল। তাই আল্লাহ তাআলা কোরআন শরীফের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ (সা.)-কে এ ধরনের লোকদের সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা একই সঙ্গে সে সকল লোককেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, যারা মোনাফেকদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে, তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে এবং তাদের অপরাধ গোপন রাখতে ও কর্মফল ভোগ করা হতে তাদের রক্ষা করতে চায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আচ্ছা, তোমরা তো জাগতিক জীবনে তাদের অনুসরণ অথবা জবাবদিহির কথা বলছো, কিন্তু কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে তাদের পক্ষ হতে কে জবাবদিহি করবে অথবা কে তাদের কাজ সমাধা করবে?’ (সূরা: নিসা)। অর্থাৎ, আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী দুনিয়াতে যদি কোনো ব্যক্তি তাদের কথা ও কাজের পার্থক্যকে গোপন করে, তাহলে পরকালে এই পাপ মোচনের কি উপায় থাকবে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন যে, মোমেন ব্যক্তি ভয়-ভীতি, ক্ষুধা, অর্থ ধ্বংস, পশু কোরবানি এবং ফল ধ্বংস পর্যন্ত সহ্য করতে পারে, কিন্তু সে পারে না কেবল মোনাফেকি করতে। আল্লাহর দ্বীন-ধর্ম প্রচার করা মোমেনের আদর্শ এবং যদি তা প্রচার করতে সাহস না হয় তাহলে চুপ করে থাকতে কোনো অপরাধ নেই। কিন্তু কথা ও কাজে বিভিন্নতা পথভ্রষ্টদেরই নীতি, দ্বীনদার ব্যক্তি কোনো অবস্থায়ই মোনাফেকী করতে পারে না।

মোনাফেকদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় মোনাফেকরা আল্লাহর সাথে চালবাজী করে অথচ আল্লাহ তাআলা তাদের এই চালবাজীর শাস্তিদাতা।’ (সূরা: নিসা)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মেহেদী ২১ জুন, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
সৎকর্ম বা আমালুস সালেহ ভালো মানুষের অন্যতম গুণ। সৎকর্মের মাধ্যমেই মানুষের ভেতরের সদগুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ২১ জুন, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
মানুষের দোষ-গুণ বা ভালো-মন্দের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই তার কাজকর্ম ও আচার-ব্যবহারের মধ্যে; আর কাজের মানদণ্ডেই একটা মানুষকে মূল্যায়ন করা হয়_এটা যেমন জাগতিকভাবে সত্য, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও সত্য ও বাস্তব।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ২১ জুন, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
সৎকর্মশীল ব্যক্তিরা দুনিয়ায় যেমন সম্মানিত হন, তেমনি আল্লাহর কাছেও তাঁরা প্রিয়। তাঁদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ।
Total Reply(0)
নাসিম ২১ জুন, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
মানুষের পার্থিব জীবনের ন্যায়-অন্যায়ের চুলচেরা হিসাব-নিকাশ হবে পরকালীন জীবনে। যদিও মানুষ তার সৃষ্টিশীল সৎকর্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চায়।
Total Reply(0)
বিবেক ২১ জুন, ২০২০, ১:৪৭ এএম says : 0
রোজ হাশরে আল্লাহ তাআলা মানুষের পাপ-পুণ্যের ফয়সালা করবেন এবং যার যার দুনিয়ার আমল-আখলাক কর্মফল অনুযায়ী নিখুঁত নিক্তিতে বিচার করবেন। যারা অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি ও অসৎকর্মে নিজকে নিয়োজিত রাখবে এবং পাপাচারে লিপ্ত থাকবে, প্রতিফলস্বরূপ তিনি তাদের কঠিনতম শাস্তির ভয়াবহ কষ্টে নিপতিত রাখবেন। আর যারা সৎকর্মের মধ্যে নিজকে সমর্পণ করবে এবং ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী ইহকালীন জীবন অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তাদের সুখ-শান্তিময় বেহেশত প্রদান করবেন।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ২১ জুন, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
যদি কোনো বান্দা ভুলবশত ঘোরতর পাপকাজ করে ফেলে তাহলে সেই ব্যক্তি যদি কায়মনোবাক্যে সিজদারত হয়ে তওবা-ইস্তেগফার করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা ভিক্ষা চায় তাহলে আল্লাহ পাক দয়াপরবশ হয়ে সেসব লোককে ক্ষমা করে দেন। তাই আসুন, পরকালীন জীবনের ভয়-ভীতির শঙ্কা মাথায় রেখে পার্থিব জীবনে সব ধরনের অনৈতিক, পাপকাজ, অন্যায়-অপকর্ম ও কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেদের সর্বদা বিরত রাখি এবং জাগতিক ও পারলৌকিক জীবন সর্বতোভাবে সুখ-শান্তিময় করার আপ্রাণ চেষ্টা করি।
Total Reply(0)
jack ali ২১ জুন, ২০২০, ১:২৭ পিএম says : 0
In our country majority is muslim but they don't want the rule of Allah [SWT] and also the government don't want to rule our country by the Law of Allah [SWT] rather they harm Islam in every aspect--- aren't they are munafiq????????
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন