মানুষ সুখ প্রত্যাশী। কিন্তু সবাই সুখী হয় না। কেউ কেউ হয়। এই সুখী হওয়াটা একেক জনের কাছে একেক রকম। দেখা যায়, যাতে একজন সুখী, অন্যজন তাতে অসুখী। সুখের ব্যাপারটি একই সঙ্গে মানসিক ও পারিপার্শ্বিক। সুখ রহস্যাবৃত। কখনো বুঝা যায়, কখনো বুঝা যায় না। কখনো ধরা দেয়, কখনো ধরা দেয় না।
অনেকে মনে করেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা বিশেষত খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান নিশ্চিত হলেই মানুষ সুখী হয়। এর সঙ্গে সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি যোগ হলে হয় সোনায় সোহাগা। আসলেই কি খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও সুস্বাস্থ্যের অধিকার মানুষকে সুখী করতে পারে? হয়তো পারে, হয়তো পারে না।
মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার শেষ নেই। ভোগ ও ভোগেচ্ছার কোনো কমতি নেই। সচরাচর যা আছে, তাতে মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারে না। তার আরো চাই, আরো চাই। অবশ্য যদি কেউ অল্পে তুষ্ট হয়, তাহলে তার পক্ষে সুখী হওয়া সম্ভব। কিন্তু অল্পে তুষ্ট মানুষের সংখ্যা অতি নগণ্য। অধিকাংশ মানুষ অতৃপ্ত, অসন্তুষ্ট, অসুখী।
অনেকে মনে করেন, ধন-সম্পদ, জনবল এবং ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির মধ্যে সুখ লুকিয়ে আছে। যাদের এসব আছে, তারাই সুখী। আসলেই কি তাই? আমরা এই করোনাকালে যা দেখছি, তাতে বলতে পারি না যে, এসবের মধ্যে সুখের কোনো ঠিকানা আছে। বিপুল ধন-সম্পদ আছে, সন্তান-সন্তুতি ও আত্মীয়-স্বজনের অভাব নেই, ক্ষমতাকেন্দ্রের সঙ্গে সস্পর্ক আছে এবং প্রতিপত্তির কোনো শেষ নেই- এমন ব্যক্তিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসহায়ভাবে পথে-ঘাটে মারা যাচ্ছে।
তার সম্পদ, ক্ষমতা, প্রভাব কোনো কাজে আসছে না। সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজন পালিয়ে যাচ্ছে। কোনো মানুষ যদি তার শেষ যাত্রায় প্রিয়জন ও অনুগ্রহভাজনদের উপস্থিতি ও স্পর্শ না পায়, কারো চোখে অশ্রুর রেখা না দেখতে পায়, দোয়া থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত হয়, তাহলে তার সুখ কীসে? ধন-সম্পদ, জনবল, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি কোনো কিছুই দুনিয়াতে তার উপকারে আসলো না। পরকালে আসবে কি না আল্লাহ মালিকই বলতে পারেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রচুর ধন-সম্পত্তির মধ্যে সুখ নেই, মনের সুখই প্রকৃত সুখ। তাঁর এই উক্তিতে এটা স্পষ্ট যে, ধন-সম্পদ সুখের উৎস নয়। সন্তান-সন্ততিসহ জনবল, ক্ষমতার প্রতাপেও নেই সুখের লেশ। যাদের অন্তরে সন্তুষ্টির সুবাতাস রয়েছে তারাই সুখী। বিশ্বাসী, সৎকর্মশীল, সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ মানুষই সুখী। কেবল দুনিয়াতেই নয়, পরকালেও তাদের জন্য রয়েছে অফুরান সুখ।
আল্লাহপাক খোশখবর দিয়েছেন: মহাকালের শপথ, মানুষ তো ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়। (সুরা আসর: ১-৩)। তিনি অন্যত্র বলেছেন: যারা বিশ্বাস করে, সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে দিয়ে নির্ঝরণীসমূহ প্রবাহিত। এটাই মহা সাফল্য। (সুরা বুরূজ: ১১)।
সুখের অসুখ বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। যারা ধন-সম্পদ ও বিত্ত-বৈভবকে সুখের আকর মনে করে, তাদের ক্ষেত্রেই এই অসুখটি দেখা দেয়। প্রায়শই তারা অহঙ্কারী হয়ে থাকে। ধরাকে সরাজ্ঞান করা তাদের স্বভাবের অন্তর্গত। অন্যের সম্পদ-সম্পত্তি দখল, সুদ-ঘুষ গ্রহণ, মাদক সেবন, অন্যায়, অবিচার, ব্যাভিচার এমন কি খুন-খারাবী করাও তাদের জন্য কঠিন কাজ নয়। এসব অপকর্মের পরিণতি তারা দুনিয়াতেই ভোগ করে। আখেরাতেও তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
দুনিয়াকে আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। দুনিয়ার পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতে পারবে, তারাই সফল। এই সাফল্যের চেয়ে বড় কোনো স্বার্থকতা ও কৃতিত্ব কারো জীবনে হতে পারে না। আর যারা সফল, তারাই সুখী। আল্লাহপাক সামাজিক ও আর্থিক দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে পার্থক্য করেছেন, ছোট-বড় করেছেন, এর মাধ্যমে তিনি তাদের পরীক্ষা করেন। কাজেই, আল্লাহ যার জন্য যে অবস্থান নির্ধারণ ও পছন্দ করেছেন তাতে কৃতজ্ঞ থাকাই বিশ্বাসীর কর্তব্য। আল্লাহর ওপর সর্বাবস্থায় কৃতজ্ঞ ও সন্তুষ্ট থাকা এবং তার সন্তোষ অর্জনের মধ্যেই সুখ ও সাফল্য নিহিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন