মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ওয়াছিলা নির্ধারণের বৈধতা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

আরবি ‘ওয়াছলুন’ মূল অক্ষর হতে তাওয়াচ্ছুল শব্দটি গঠিত। এর অর্থ কাউকে ওয়াছিলা নির্ধারণ করা, ওয়াছিলা বানানো। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ওয়াছিলা শব্দের কয়েকটি অর্থ আছে।

যথা : (ক) সম্রাট বা শাসকের নিকট ব্যক্তির মান মর্যাদা; (খ) ব্যক্তির স্তর বা মর্যাদা; (গ) নৈকট্য প্রাপ্ত হওয়া বা নৈকট্য লাভ করা, (ঘ) আরবি ভাষায় বলা হয়ে থাকে অমূক ব্যক্তি এমন আমল করেছে যার দ্বারা সে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়েছে। আর আরবি আল্ ওয়াছিল শব্দটির অর্থ হলো- আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তি, আল্লাহর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট ব্যক্তি। (লিসানুল আরব : খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ৮৬৬)।

মোট কথা, আম্বিয়ায়ে কেরাম, সিদ্দিকীন, শোহাদা ও সালেহীন ব্যক্তিগণকে ওয়াছিলা নির্ধারণ করা বৈধ। অর্থাৎ তাদের ওয়াছিলায় আল্লাহর নিকট দোয়া ও মুনাজাত করা বৈধ এবং যায়েজ। এ ব্যাপারে যে বা যারা কটু ধারণা পোষণ করে তাঁরা যে ভুলের সাগরে নিমজ্জিত তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।

এতদ প্রসঙ্গে ইমাম সুবকী (রহ.) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালার সমীপে দোয়াতে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ওয়াছিলা বানানো সর্বোত্তম। গায়রে নবীর (যারা নবী নন) মান মর্যাদার ওয়াছিলা নির্ধারণ করাতেও কোনো দোষ নেই। যদি আল্লাহ তায়ালার নিকট তাঁর মান মর্যাদার বিষয়টি পরিজ্ঞাত হয়। যেমন উক্ত ব্যক্তির নেককার হওয়া, পরিশুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী হওয়া, কিংবা ওলী হওয়া বিষয়টি সুস্পষ্ট ও সন্দেহ মুক্ত হওয়া। (তাফসীরে রূহুল মায়ানী : খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ১২৮)।

নিতান্ত দুঃখের বিষয় এই যে একমাত্র ইবনে তাইমিয়্যাহ ছাড়া প্রাচীন ও পরবর্তীকালীন ওলামা, ফুযালাদের কেউ ওয়াছিলা নির্ধারণকে অস্বীকার করেননি। সুতরাং সকল আলেমের মধ্যে সর্বাগ্রে তিনিই ওয়াছিলা নির্ধারণের অবৈধতার মতের উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে তাঁর এই নব উদ্ভাবিত মতের লেজুর বৃত্তিতে গা ভাসিয়ে দেয় ওহাবীরা। তাদের ভাবশিষ্যরা সেই লেজুর ধরেই টানাটানি করছে। (রাদ্দুল মুহতার : খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫০)।

বস্তুত : নেককার ব্যক্তিদের জীবদ্দশাতেও তাওয়াছছুল যায়েজ। এমন কি তাদের ইন্তেকালের পরও যায়েজ। এতদ প্রসঙ্গে বেশ কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়। যথা : (ক) হযরত আব্বাস (রা.)-এর ঘটনা হতে এ বিষয়টি বুঝা যায় যে, নেককার ও আহলে বাইতিন নবুওয়্যাতের ওয়াছিলা দিয়ে সুপারিশ কবুলের আবেদন করা মুস্তাহাব। (ফাত্হুল বারী : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৫১)

(খ) নবী এবং সালেহ বান্দাহদের মৃত্যুর পরে আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাদের ওয়াছিলা দিয়ে দোয়া করা যায়েজ। (বারিকায়ে মাহমুদিয়্যাহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৭০; তাসকীনুস সুদুর : পৃষ্ঠা ৪৩৫)। (গ) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাশাইখদের মতে আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া করার সময় নবী, সাহেল, সিদ্দীক, শহীদগণকে তাদের জীবিত অবস্থায় ও ইন্তিকালের পর ওয়াছিলা বানানো যায়েজ। দোয়া ও মুনাজাতের সময় তাওয়াছছুলের পদ্ধতি হলো এই যে, দোয়ার সময় বলবে হে আল্লাহ! তোমার দরবারে আমার দোয়া কবুলের জন্য এবং আমার প্রয়োজন পূরণের জন্য তোমার অমুক বান্দার ওয়াছিলা ধরছি। অথবা বলবে- হে আল্লাহ! তোমার অমুক বান্দাহর মান মর্যাদার ওয়াছিলায় তুমি আমার এই দোয়া কবুল কর এবং আমার প্রয়োজন পূরণ কর। (আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ : পৃষ্ঠা ১২-১৩)।

(ঘ) হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হযরত আব্বাস (রা.)-এর ঘটনায় বলেন, (আমরা দোয়ার সময় বললাম) হে আল্লাহ পাক! আমরা তোমার দরবারে আমাদের নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওয়াছিলা ধরে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতাম, তুমি আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করতে। এখন আমাদের নবীর (সা.) চাচার ওয়াছিলা ধরে নিবেদন করছি, আমাদেরকে বৃষ্টিদান কর। বর্ণনাকারী বলেন : তারপর তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হলো। (সহীহ বুখারী : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৩৮)।

(ঙ) হযরত ওসমান বিন হানীফ (রা:) বর্ণনা করেন, জনৈক অন্ধ ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে আগমন করে নিবেদন করলেন : আল্লাহর নিকট দোয়া করুন, তিনি যেন আমাকে সুস্থ করে দেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : তুমি যদি ইচ্ছা কর তবে ধৈর্য ধারণ করতে পার, আর এটাই তোমার জন্য উত্তম। লোকটি আবার আবেদন করলেন : আপনি দোয়া করুন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে সুন্দররূপে ওজু করে নিম্নরূপ দোয়া করতে নির্দেশ দিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, রহমতের নবী, তোমার নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে এবং আমি তোমার পানেই মুখ করছি। তোমার ওয়াছিলায় আমার প্রভুর পানে আমার প্রয়োজনে মুখ করলাম, যাতে আমার পক্ষে ফায়সালা হয়। হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে তুমি তার সুপারিশ কবুল কর। (জামে তিরমিজী : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৯৮)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মশিউর ইসলাম ২৯ জুন, ২০২০, ২:০০ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের ইসলাম পরিপূর্ণভাবে বুঝার তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ২৯ জুন, ২০২০, ২:০০ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের ইসলাম পরিপূর্ণভাবে বুঝার তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
Hannan Kabir ২৯ জুন, ২০২০, ২:০১ এএম says : 0
বিষয়টি নিয়ে দলীলসহ আলোচনা করায় লেখকএ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী সাবেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
Lata Chowdhury ২৯ জুন, ২০২০, ২:০১ এএম says : 0
লেখক সাহেবকে এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ, আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন। অতি উত্তম ও জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
Total Reply(0)
Year Ali Sikder ২৯ জুন, ২০২০, ২:০১ এএম says : 0
প্রমাণ সহ আলোচনা করায় ধন্যবাদ ।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ২৯ জুন, ২০২০, ২:০২ এএম says : 0
হে আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দাও।
Total Reply(0)
saif ২৯ জুন, ২০২০, ৯:৩৭ এএম says : 0
সন্মানিত লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লীষ্ট সকলকে আল্লাহ্‌ এর উত্তম প্রতিধান অবশ্যই দেবেন এমন গুরুত্ব পূর্ন লেখার জন্যে এবং প্রকাশ করার জন্যে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন