মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ফজিলতময় আয়াতুল কুরসী

মাওলানা তরিকুল ইসলাম তারেক | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

একজন মানুষের সঙ্গে এক জিনের সাক্ষাৎ ঘটে। জিনটা সেই মানুষকে বলে, ‘এসো, আমরা দু’জন মল্লযুদ্ধ করি। যদি তুমি আমাকে পরাজিত করো মানে নিচে ফেলে দিতে পার, তবে আমি তোমাকে এমন একটি আয়াত শিখিয়ে দেবো যে, যদি তুমি বাড়ি গিয়ে ওই আয়াতটি পাঠ করো, তবে শয়তান তোমার বাড়ীতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ মল্লযুদ্ধ হলো এবং ওই লোকটি জিনটিকে নিচে ফেলে দেন আর জিনটিকে বলেন, ‘তুমি দুর্বল, কাপুরুষ। তোমার হাত কুকুরের মতো। জ্বীনেরা কি সবাই এরকমই হয়ে থাকে, না কি তুমি একাই এরকম?’ জীন উত্তর দিলো, ‘জীনদের মধ্যে তো আমিই শক্তিশালী’।

তারপর পুনরায় কুস্তি হলে সেবারেও জিন নিচে পড়ে যায়। তখন জীন বলে, ‘ওই আয়াতটি হচ্ছে আয়াতুল কুরসী। যে ব্যক্তি বাড়িতে প্রবেশের সময় এই আয়াতটি পাঠ করে, তার বাড়ি হতে শয়তান গাধার মতোই চিৎকার করতে করতে পালিয়ে যায়’। ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এবং ওই শক্তিশালী লোকটি ছিলেন হযরত উমার (রা.)।

হযরত উবাই বিন কা’ব (রা.) বলেন, ‘আমার একটি খেজুরে পূর্ণ থলে ছিল। আমি লক্ষ করি, ওটা হতে প্রত্যেকদিন খেজুর কমে যাচ্ছে। একদা রাত্রে আমি জেগে জেগে পাহারা দিই। আমি দেখি যে, যুবক ছেলের ন্যায় একটি জন্তু আসলো। আমি তাকে সালাম দিলাম। সে আমার সালামের উত্তর দিলো। তাকে বললাম, ‘তুমি মানুষ না জীন? সে বললো, ‘আমি জীন।’ আমি বললাম, ‘তোমার হাতটা একটু বাড়াও তো।’ সে তার হাত বাড়ালো।

আমি তার হাতটি আমার হাতের মধ্যে নিলাম। হাতটি কুকুরের মতো ছিলো ও তার উপর কুকুরের মতো লোমও ছিল। তারপর আমি বললাম, ‘জীনদের সৃষ্টি কী এভাবেই হয়?’ সে বললো, ‘সব জীনের মধ্যে আমি সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী।’ আমি তাকে বললাম, ‘আচ্ছা, কিভাবে তুমি আমার জিনিস চুরি করতে সাহসী হলে?’ সে জবাব দিলো, ‘আমি জানি, আপনি দান করতে ভালোবাসেন। তাই আমি মনে করলাম যে, আমি কেন বঞ্চিত থাকি?’
তারপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমাদের অনিষ্ট হতে কোন জিনিস রক্ষা করতে পারে?’ সে বললো, ‘আয়াতুল কুরসী।’ পরদিন সকালে আমি রাসূল (সা.) এর দরবারে উপস্থিত হয়ে রাতের সব ঘটনা বর্ণনা করি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খবীস তো এই কথাটি সম্পূর্ণ সত্যই বলেছে’।

আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, একদা রাসূল (সা.) আমাকে রমজানের যাকাতের উপর প্রহরী নিযুক্ত করেন। আমার নিকট একজন আগমনকারী আসে এবং ওই মাল হতে কিছু কিছু উঠিয়ে নিয়ে সে তার চাদরে জমা করতে থাকে। আমি তাকে ধরে বলি, ‘তোমাকে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট নিয়ে যাবো’। তখন সে বলে, ‘আমাকে ছেড়ে দিন। আমি অত্যন্ত অভাবী’।

আমি তখন তাকে ছেড়ে দেই। সকালে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে প্রশ্ন করেন, ‘তোমার রাতের বন্দি কী করেছিল?’ আমি বলি, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.), সে তার ভীষণ অভাবের অভিযোগ করে। তার প্রতি আমার করুণার উদ্রক হয়। তাই, আমি তাকে ছেড়ে দেই’। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে’।
আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কথায় বুঝলাম যে, সে সত্যই আবার আসবে। রাতে আমি পাহারা দিতে থাকলাম। সে এলো এবং খাদ্য উঠাতে থাকল।

আবারও আমি তাকে ধরে বললাম ‘তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) কাছে নিয়ে যাবোই’। সে আবার ওই কথাই বললো, ‘আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা, আমি অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি’। এবারও তার প্রতি আমার দয়া হলো। সুতরাং, তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে আমাবকে রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রশ্ন বললেন, ‘হে আবু হুরায়রাহ (রা.), তোমার রাত্রের বন্দিটি কী করেছে’? আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.), সে অভাবের অভিযোগ করায় আমি তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘সে তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছে। সে আবারও আসবে।’ আবার আমি তৃতীয় রাত্রে পাহারা দেই। অতঃপর সে এসে খাদ্য উঠাতে থাকলে আমি তাকে ধরে বললাম, ‘এটা তৃতীয় বার এবং এবারই শেষ। তুমি বার বার বলছ যে, আর আসবে না; অথচ আবার আসছ। সুতরাং, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে নিবোই।’

সে বললো, ‘আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনাকে এমন কতকগুলো কথা শিখিয়ে দিচ্ছি যার মাধ্যমে আল্লাহ আপনার উপকার সাধন করবেন’। আমি বললাম, ‘ওইগুলো কী?’ সে বললো, ‘যখন আপনি বিছানায় শয়ন করবেন তখন আয়াতুল কুরসী পড়ে নেবেন। তাহলে, আল্লাহ আপনার রক্ষক হবেন এবং সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান আপনার নিকটবর্তী হতে পারবে না। তারা ভালো জিনিসের খুবই লোভী’।

সকালে নবী (সা.) সবকিছু শুনে বললেন, ‘সে চরম মিথ্যাবাদী হলেও এটা সে সত্যই বলেছে। হে আবু হুরায়রাহ (রা.), গত তিন রাত তুমি কার সঙ্গে কথা বলেছো, তা জান কী?’ আমি বললাম, ‘না, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)’। হুজুরে আকরাম সা. বললেন, ‘সে ছিল শয়তান’। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তাকে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো জিনিস বেহেশতে যেতে বাধা দেয় না।’ অর্থাৎ, মৃত্যুই শুধু তাঁর জান্নাতে যাওয়ার মধ্যে দেয়াল। মৃত্যুর সাথে সাথেই তাঁকে জান্নাতে দেয়া হবে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ৩০ জুন, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে বিশেষ বিশেষ কিছু আয়াত ও সূরা রয়েছে, যা খুবই ফজিলতপূর্ণ। তন্মধ্যে আয়াতুল কুরসি অন্যতম। আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে।
Total Reply(0)
বাতি ঘর ৩০ জুন, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠে দুষ্টু জিনদের কবল থেকে হেফাজতে থাকা যায় বলে হাদিসে বর্ণনা এসেছে। আয়াতুল কুরসি কোরআনের এক-চতুর্থাংশ।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ৩০ জুন, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
পবিত্র আল কোরআনকে মহান আল্লাহ মানব জাতির হিদায়াত ও জীবন বিধান হিসেবে নাজিল করেছেন। এই মহামূল্যবান গ্রন্থের দ্বিতীয় সুরা আল বাকারার ২৫৫তম আয়াত হলো আয়াতুল কুরসী। এ আয়াতটিতে ১০টি বাক্য রয়েছে। যার প্রত্যেকটিতে আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে মানব জাতির অনেক কল্যাণ সাধিত হয়, বিভিন্ন বিপদ আপদ থেকে বাঁচা যায়।
Total Reply(0)
হৃদয় আমার বাংলাদেশ ৩০ জুন, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না। [সহীহ আল্ জামে :৬৪৬৪]
Total Reply(0)
হোসাইন এনায়েত ৩০ জুন, ২০২০, ২:৪৮ এএম says : 0
হজরত আলী (রা:) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। [সুনানে বাইহাকী]
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৩০ জুন, ২০২০, ২:৪৮ এএম says : 0
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূরা বাকারার মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যে আয়াতটি পুরো কোরআনের নেতাস্বরূপ। তা পড়ে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান বের হয়ে যায়। তা হলো- ‘আয়াতুল কুরসি’।
Total Reply(0)
saif ৩০ জুন, ২০২০, ৯:৪৫ এএম says : 0
জনাব লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ্‌ অনেক ধন্যবাদ এবং আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে এই মহৎ কাজের প্রতিদান অবশ্যই দেবেন।
Total Reply(0)
Md.Belal Hossain ৩০ জুন, ২০২০, ১১:১৩ এএম says : 0
Ya Allah, Sobay k beheshter boro makam dan kourn.
Total Reply(0)
Md.Belal Hossain ৩০ জুন, ২০২০, ১১:১৪ এএম says : 0
Ya Allah, Sobay k beheshter boro makam dan kourn.
Total Reply(0)
HabibullahSikdar ১২ জুলাই, ২০২০, ১০:৩৫ পিএম says : 0
মাশাল্লাহ খুব সুন্দর আলোচনা হাফিজ মাওলানা তরিকুল ইসলাম তারেক খুব ভালো লিখেন, তার ধারাবাহিক লেখা আপনারা প্রতিনিয়তো ছাপাবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন