মানুষের ওপর বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত কখনও তার পাপের কারণে এসে থাকে। এটা এ জন্যে এসে থাকে যেন সে ভবিষ্যতে পাপের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যায়। অতএব, এ বিপদাপদ তার প্রতি এক প্রকার রহমত।
আবার কখনও বিপদ-মুসিবত তার পরীক্ষাস্বরূপ এবং তার দরজা বুলন্দ করার জন্যও এসে থাকে। এটাও তার প্রতি আল্লাহর রহমত। তবে বিপদ-আপদ আসলে এটা নিজের পাপের কারণেই এসেছে তাই মনে করে বিনয়ী হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং বিপদ থেকে পরিত্রাণ চাইতে হবে।
এ কথা বলা যাবে না কিংবা মনে করা যাবে না যে, আমার পরীক্ষা চলছে, কেননা এরূপ বলা বা মনে করার দ্বারা এটা প্রতীয়মান হতে পারে যে, আমার পাপ নেই। অতএব পাপের কারণে আমার এ বিপদ ঘটেনি বরং আমি পরীক্ষা দিয়ে মর্যাদা বুলন্দ হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। এটা এক ধরনের অহঙ্কারের শামিল হয়ে যেতে পারে।
বিপদ-আপদের সময় করণীয়: বিপদ-আপদকে আল্লাহর রহমত মনে করতে হবে। তা নিজের পাপের কারণে ঘটেছে ভেবে আল্লাহর কাছে বিনয়ী হতে হবে। পরিত্রাণের জন্য দোয়া করতে হবে।
কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর কাছে বিপদ চেয়ে নেয়া ঠিক নয়। সবর করতে হবে। বে-সবরী ও হা-হুতাশ করা যাবে না। যে কোনো সমস্যা ও বিপদ-মুসিবত দেখা দিলে দুই রাকাত ‘সালাতুল হাজত’ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে পরিত্রাণের জন্য দোয়া করা সুন্নাত।
বিপদাপদ বা সমস্যা দেখা দিলে সেই পেরেশানীতে পড়ে আল্লাহ থেকে বিমুখ হওয়া এবং ইবাদত ও আল্লাহর স্মরণ থেকে পিছিয়ে পড়া অন্যায়। কোন কিছু হারিয়ে গেলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়া অত্যন্ত ফলদায়ক এবং এটা পরীক্ষিত আমল। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বিপদের সময় এই দোয়াটি পাঠ করতেন— ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল হাকীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি- ওয়া রাব্বুল আরশিল কারীম।’
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি আকাশমন্ডলী, জমিন ও মহাসম্মানিু আরশের প্রভু। (সহি বোখারি ও মুসলিম)।
বিপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য পবিত্র কোরআন এবং রাসুল (সা.) এর হাদিসে কিছু দোয়া ও আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর ওপর কোনো কাজ কঠিন হয়ে দেখা দিত, তখন তিনি এ দোয়াটি পড়তেন- ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছ।’ অর্থ: হে চিরঞ্জীব, হে বিশ্ব চরাচরে ধারক, আমি তোমার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (তিরমিজি মিশকাত, হাদিস: ২৪৫৪)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মাছের পেটে ইউনুস (আ.) দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকে ছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে সেই দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।’ (আহমাদ, তিরমিজি, মিশকাত, হাদিস: ২২৯২)। দোয়ায়ে ইউনুস : ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানা-কা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমিন’। অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তুমি মহাপবিত্র। নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা’ এই দোয়া পাঠ করা যায়। এই দোয়ার অর্থ: আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চেয়ে ভালো কিছু দান করুন। (সহিহ মুসলিম)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন