হাতিয়া উপজেলার চরঈশ^র, সুখচর, নলচিরা ও নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নে বিধ্বস্ত বেড়ী বাঁধ দিয়ে আকস্মিক জোয়ারে ১৫ গ্রাম প্লবিত হয়েছে। এতে ১০ হাজার অধিবাসী পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, পূর্নিমার জোয়ারে মেঘনা নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শুক্রবার থেকে চর ঈশ^র, নিঝুমদ্বীপ, সুখচর ও নলচিরা ইউনিয়নে বেড়ি বাঁধের বিধ্বস্ত অংশ দিয়ে জোয়ারের ¯্রােতে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। এতে করে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে ১০হাজার মানুষ।
হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানান, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষন ও উঁচু হয়ে আসা জোয়ারের পানি গত শুক্রবার রাত থেকে তার ইউনিয়নে প্রবেশ করতে থাকে । পানিতে মাকসুদিয়া গ্রাম, আব্দুল গফুর গ্রাম, মৌলুভীর গ্রাম, চান্দালি গ্রাম, মুলদি গ্রাম, কাদির সরদারের গ্রাম ও কাহারপাড়া গ্রামে বন্যা দেখা দেয়। তিনি আরও বলেন, তার ইউনিয়নের ভাঙ্গা বেড়ি বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতেকরে ওই সকল গ্রামের লোকজন গত ৪ দিন যাবৎ বন্যার পানিতে বন্দি হয়ে মানবতর জীবন যাপন করছেন। চেয়ারম্যান বলেন, তার ইউনিয়নে গত মাসে সৃষ্ট ঘূর্নিঝড় আম্পানের প্রভাবে আধা কিলো মিটার বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এতে করে ভাঙ্গা বেড়ি বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এর ফলে পানিতে ফসল ও খামারে মাছ ভেসে গেছে।
উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাশেদ উদ্দিন জানান, গত ৪দিন যাবৎ তার ইউনিয়নে বেড়ি বাঁধ বিহিন এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ১,২,৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডে পানি প্রবেশ করে। এতে করে ইউনিয়নের তালুকদার গ্রাম, ফরাজিগ্রাম, বাদশা মিয়া হাজি গ্রাম, পন্ডিত গ্রাম, জেলে কলনি পাড়া, মৌলভী গ্রাম ও পঞ্চায়েত গ্রামে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানিতে ১ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চেয়ারম্যান বলেন গত কয়েক বছর আগে প্রবল জোয়ারের ¯্রােতে ও ঘূর্নিঝড়ে তার ইউনিয়নে সাড়ে ৩ কিলো মিটার বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গা বেড়ি বাঁধ পুন: নির্মান না করায় খুব সহজেই জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে ফসল ও খামারের মাছ ভেসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
নলচিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির বাবলু জানান, তার ইউনিয়নে ১ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ দীর্ঘ দিন যাবৎ ভাঙ্গ রয়েছে। বেড়ি বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বাড়ি ঘর ফসলের মাঠ ও মৎস খামার প্লাবিত হচ্ছে।
নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নাছির উদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষন ও পূর্নিমার প্রভাবে মেঘনা নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে হাতিয়া উপজেলার ৩-৪ টি ইউনিয়নের লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। আগামী ২-৩ দিন পানি আরও বাড়ার আশংকা রয়েছে। বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন হাতিয়ার মেঘনা নদীর পানি বেড়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মেঘনার পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই হাতিয়া উপজেলার নি¤œাঞ্চল সহ বাড়ি ঘর ও ফসলের মাঠ প্লাবিত হচ্ছে। এতে করে বসত ঘর ফসল ও মৎস খামারের ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়নে দেড় কিলো মিটার এবং নলচিরা ও চর ঈশ^র ইউনিয়নে ৬ কিলো মিটার বেড়ী বাঁধ নেই। এগুলো মেরামতের জন্য গত অর্থবছরে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় এ ভাঙ্গা বাঁধ গুলো মেরামত করা সম্ভব হয় নি।
তিনি আরও বলেন, হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়ি বাঁধ নির্মান, নদী তীরবর্তী এলাকা ভাঙ্গন রোধে ২ হাজার ১৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্প পাশ হলেই কাজ শুরু হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন